ভোট যত এগিয়ে আসছে, ততই উত্তপ্ত হচ্ছে কলকাতার পরিবেশ। রবিবার নির্বাচনী প্রচারে শহরের দু’প্রান্তে বিরোধী ও শাসক দলের কর্মীরা আক্রান্ত হয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। বিরোধী ও শাসক দলের কর্মীরা একে অপরের বিরুদ্ধে আক্রমণের অভিযোগ তুলেছে।
প্রথম ঘটনাটি বেলেঘাটার। অভিযোগ উঠেছে তিন সিপিএম কর্মী প্রহৃত হওয়ার। অভিযুক্ত শাসক দল। অন্য দিকে, বেহালায় সিপিএম কর্মীদের হাতে এক তৃণমূলকর্মী প্রহৃত হয়েছেন বলে অভিযোগ। অভিযোগ, বেলেঘাটায় এক বাম কর্মীকে রড দিয়ে মেরে নাক ফাটিয়ে দেওয়া হয়েছে। বাঁশপেটা করা হয় আরও দুই কর্মীকে। বেহালায় এক তৃণমূল কর্মীর হাত ভেঙে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। দু’টি ঘটনাতেই মামলা রুজু করেছে পুলিশ। বেলেঘাটার ঘটনায় তিন জন গ্রেফতার হলেও রবিবার রাত পর্যন্ত বেহালার ঘটনায় কেউ ধরা পড়েনি।
বেলেঘাটা বিধানসভা কেন্দ্রে কংগ্রেস-বাম জোটের প্রার্থী, সিপিএমের রাজীব বিশ্বাসের সমর্থনে কর্মীরা এ দিন লেবুগোলা বস্তিতে প্রচারে যান। সিপিএমের অভিযোগ, তৃণমূল কর্মীরা প্রথমে তাঁদের বাধা দেন। হুমকি অগ্রাহ্য করে প্রচার শুরু করলে তৃণমূলের কয়েক জন লোহার রড দিয়ে মেরে ডিওয়াইএফআই-এর জেলা কমিটির সদস্য সন্দীপ নট্টর নাক ফাটিয়ে দেন। সিপিএম-কর্মী সাগর পোদ্দার ও তপন চক্রবর্তীকেও বাঁশ দিয়ে মারা হয়। সন্দীপের নাকে চারটি সেলাই পড়ে। রাজীববাবুর অভিযোগ, ‘‘এই জোটকে তৃণমূল ভয় পেয়েছে। ওরা আমাদের কর্মীদের মারধর করে যতই রোখার চেষ্টা করুক, ভোটে মানুষ এর জবাব দেবেন।’’
বেলেঘাটার তৃণমূল প্রার্থী পরেশ পালের দাবি, ‘‘লেবুগোলা বস্তি তল্লাটে আমাদের কর্মীরা মারধর করেননি। রাজীব বিশ্বাস রাজনৈতিক ফায়দা লুঠতে মিথ্যা অভিযোগ করছেন।’’ ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর পবিত্র বিশ্বাস বলেন, ‘‘এখানে সবাই তৃণমূল। বিরোধীশূন্য এলাকায় সিপিএম কর্মীদের উপরে মারধরের ঘটনার প্রসঙ্গ আসবে কেন?’’ অভিযোগ পেয়ে পুলিশ সমীররঞ্জন দাস, তাপস দাস ও পরিতোষ মণ্ডলকে গ্রেফতার করেছে। পরেশবাবুর দাবি, ‘‘ধৃতেরা আমাদের দলের নয়।’’ যদিও পুলিশের বক্তব্য, ওই তিন জনই তৃণমূলের সক্রিয় সদস্য।
বেহালার ঘটনাতে আবার সিপিএমের তিন কর্মী-সমর্থকের বিরুদ্ধে পর্ণশ্রী থানায় অভিযোগ দায়ের করেছে তৃণমূল। তাদের দাবি, বেহালা পশ্চিম বিধানসভার তৃণমূল প্রার্থী, মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের সমর্থনে দেওয়াল লিখতে গেলে সিপিএম কর্মীরা বেধড়ক মেরে শেখ আমির আলি নামে এক তৃণমূলকর্মীর হাত ভেঙে দেয়। কলকাতা পুরসভার ১২৯ নম্বর ওয়ার্ডের পেটলিপাড়ায় এ দিন দেওয়াল লিখতে যান তৃণমূলকর্মী আমির। স্থানীয় তৃণমূলকর্মী মুন্না আলির অভিযোগ, ‘‘দেওয়াল লেখা যাবে না বলে সিপিএমের কর্মীরা হুমকি দেয়।’’ আমির হাসপাতালে ভর্তি। বেহালা (পশ্চিম) কেন্দ্রের তৃণমূলপ্রার্থী পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘পেটলিপাড়ায় আগে এমন ঘটেনি। ভোটের মুখে গোলমাল পাকানোর চেষ্টা করছে সিপিএম। বিষয়টি নির্বাচন কমিশনে জানাব। দোষীদের অবিলম্বে গ্রেফতার করতে হবে।’’ ওই কেন্দ্রের সিপিএম প্রার্থী কৌস্তুভ চট্টোপাধ্যায়ের দাবি, ‘‘তূণমূলের নিজেদের মধ্যে গণ্ডগোল করে আমাদের কালিমালিপ্ত করার চেষ্টা করছে। মিথ্যা মামলায় আমাদের কর্মীদের ফাঁসানো হয়েছে।’’
এ দিনই বেলেঘাটায় তৃণমূলের বিরুদ্ধে আরও একটি অভিযোগ উঠেছে। সেখানকার কংগ্রেস ব্লক সভাপতি কমল মিত্র তিন তৃণমূল কর্মীর বিরুদ্ধে হেনস্থার অভিযোগ জানিয়েছেন থানায়। তৃণমূল অভিযোগ অস্বীকার করেছে। অন্য দিকে, ডোমজুড়ে নির্দল প্রার্থী প্রতিমা দত্তের হয়ে প্রচারে বেরোলে শঙ্কর দাস নামে এক ব্যক্তিকে তৃণমূল কর্মীরা মারধর করেন বলে অভিযোগ। স্থানীয় তৃণমূল প্রার্থী রাজীব বিশ্বাস অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘‘এটি মিথ্যা অভিযোগ তুলে খবরে আসার চেষ্টা।’’