Advertisement
০৯ অক্টোবর ২০২৪

রাতারাতি বদল আইনে, মানতে নারাজ বিরোধীরা

কাউন্সিলর নন, এমন কাউকে মেয়র করার সংস্থান রাখতে এ দিন বিধানসভায় মুখ্যমন্ত্রীর উপস্থিতিতে ‘দ্য কলকাতা মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশন (সেকেন্ড অ্যামেন্ডমেন্ট) বিল, ২০১৮’ পাশ হয়।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ২৩ নভেম্বর ২০১৮ ০২:৪২
Share: Save:

কোনও ঝগড়াঝাঁটি নয়, ব্যক্তিগত সমস্যায় শোভন চট্টোপাধ্যায় মেয়র পদে ইস্তফা দিয়েছেন বলে বৃহস্পতিবার বিধানসভায় মন্তব্য করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

কাউন্সিলর নন, এমন কাউকে মেয়র করার সংস্থান রাখতে এ দিন বিধানসভায় মুখ্যমন্ত্রীর উপস্থিতিতে ‘দ্য কলকাতা মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশন (সেকেন্ড অ্যামেন্ডমেন্ট) বিল, ২০১৮’ পাশ হয়। তবে শুধু কলকাতা নয়, রাজ্যের অন্য পুরসভা বা পুরনিগমে এই একই সংস্থান রাখতেও বিল আসবে বলে মুখ্যমন্ত্রী ইঙ্গিত দিয়েছেন।

এই বিলের আলোচনা শেষে জবাব দিতে গিয়ে শোভনের ইস্তফার প্রসঙ্গ টেনে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘যে কোনও জরুরি অবস্থা তৈরি হতে পারে, সেই জন্যই এই আইন সংশোধন করা হল। কোনও ঝগড়াঝাঁটির ব্যাপার নেই। কারও ব্যক্তিগত সমস্যা হতে পারে। ইস্তফা দিতেই পারেন। কিছু ক্ষণ আগে শোভন মেয়র পদে ইস্তফা দিয়েছেন।’’ মেয়রের পদ ফাঁকা রাখা সম্ভব নয় বলেই দ্রুত সেখানে নতুন মুখ আনার ব্যবস্থা হচ্ছে বলে মমতা জানান।

কিন্তু নতুন মেয়র খুঁজতে আইন সংশোধনের কী প্রয়োজন, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে বিরোধীরা। পূর্বঘোষিত বয়কটের কারণে বাম ও কংগ্রেস বিধায়কেরা সভায় ছিলেন না। বিলকে সমর্থন জানালেও বিজেপির রাজ্য সভাপতি ও বিধায়ক দিলীপ ঘোষ বলেন, ‘‘কলকাতা পুরসভায় তৃণমূলের ১২২জন কাউন্সিলর রয়েছেন। তাঁদের মধ্যে কি মেয়র হওয়ার মতো যোগ্য কেউ নেই? বাইরে থেকে ভাড়া করে আনতে হচ্ছে কেন?’’ এ ভাবে কাউন্সিলর নন, এমন কাউকে মেয়র করে সরকার পক্ষ নির্বাচকদের উপর অনাস্থা জ্ঞাপন করছে বলে দিলীপবাবুর অভিযোগ।

জবাবে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘আমার দলে মেয়রের অভাব নেই। ১২২ জনই মেয়র হতে পারেন। দেশের প্রধানমন্ত্রী কেন নরেন্দ্র মোদী? কেন রাজনাথ সিংহ, অরুণ জেটলি বা সুষমা স্বরাজ নন? কারণ, এটা দল ঠিক করে।’’ তাঁর কথায়, ‘‘১৫-২০ বছর পুরসভার কাজের সঙ্গে যুক্ত থেকেছেন, পুরসভাকে ভাল ভাবে চেনেন, বরো কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন, এমন কাউকেই দল দায়িত্ব দিতে পারে। ছ’মাসের মধ্যে তাঁকে ভোটে জিতে আসতে হবে।’’ তখনও অবশ্য মেয়র পদে ফিরহাদ হাকিমের নাম সরকারি ভাবে ঘোষণা হয়নি। মুখ্যমন্ত্রী মনে করিয়ে দেন, তৃণমূল সরকারে আসার পরে তিনি নিজেও উপনির্বাচনে জিতে বিধায়ক হয়েছিলেন।

শিলিগুড়ির মেয়র ও সিপিএম বিধায়ক অশোক ভট্টাচার্যের অবশ্য অভিযোগ, এই সংশোধনী ‘বেআইনি’। তাঁর বক্তব্য, ‘এই ভাবে এই আইন বদলানো যায় না। বদলাতে হলে সংবিধান সংশোধন করতে হয়।’’ যে ভাবে বিল আনা হয়েছে, তাকে ‘বেআইনি’ আখ্যা দিয়ে প্রয়োজনে আদালতের দ্বারস্থ হওয়ার কথা বলেছেন কলকাতার প্রাক্তন মেয়র তথা আইনজীবী বিকাশ ভট্টাচার্যও। বর্তমান আইনের (বাম আমলে ১৯৮০ সালে পুরনো আইন সংশোধন হয়ে যা হয়েছিল) ৭

নম্বর ধারায় বলা ছিল, পুরসভার সদস্য না থাকলে কেউ মেয়রও থাকতে পারবেন না। সংশোধনী বিলে সেই ধারাটি বাদ দেওয়া হয়নি। অশোকবাবুদের অভিযোগ, বিলে গুরুতর ত্রুটি এবং সংবিধানে স্বীকৃত ধারণার লঙ্ঘন হয়েছে।

যে ভাবে বিধানসভা চলছে, যে ভাবে এই বিল পেশ ও পাশ হয়েছে, তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে দিনভর বিধানসভা চত্বরে বিক্ষোভ দেখিয়েছে বাম ও কংগ্রেস। এমনকি, অল্প সময়ের জন্য বিধানসভার সামনে রাস্তা অবরোধও করেন ওই দুই দলের বিধায়কেরা।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE