কখন নিভবে আগুন, স্পষ্ট নয় ১৬ ঘণ্টা কেটে যাওয়ার পরেও। বাগরি মার্কেটের অগ্নিকাণ্ড নিয়ে তার মধ্যেই শুরু হয়ে গেল চাপানউতোর। দমকল মন্ত্রী দায় চাপালেন, স্থানীয় ব্যবসায়ীদের উপরেই। আর বিরোধীরা একযোগে আক্রমণ শুরু করল সরকারকে। রাজ্য বিজেপির সভাপতি দিলীপ ঘোষের দাবি, এই বাজারগুলোয় অগ্নিনির্বাপণের ব্যবস্থা নিয়ে ভাবেই না সরকার। আর সরাসরি মুখ্যমন্ত্রীকে কটাক্ষ করে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীর মন্তব্য, ‘‘বাগরি মার্কেট পুড়ছে আর আধুনিক নিরো ইতালি-জার্মানি ঘুরছেন।’’
রবিবার দুপুরে বহরমপুরে জেলা কংগ্রেস অফিসে অধীর বলেন, “একের পর এক সেতু ভাঙছে, বাজারে আগুন লাগছে। পরে সেই ঘটনাকে ধামাচাপা দিতে কমিটি গড়া হচ্ছে। যদি ইচ্ছা থাকে তা হলে উপায় হয়। উপায় না থাকলে সমীক্ষা হয়। তৃণমূল সরকারের ইচ্ছা নেই।’’
মুখ্যমন্ত্রীর বিদেশ সফর প্রসঙ্গে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি এ দিন বলেন, ‘‘বাংলায় আগুন লেগেছে, বাংলা এখন জ্বলছে। আর মুখ্যমন্ত্রী ইতালি, জার্মানি যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। দুর্ঘটনা বা আগুন লাগলেই মুখ্যমন্ত্রী পুলিশের প্রশংসা করছেন। কিন্তু এই পুলিশই এক দিন আপনাকে বোকা বানাবে।
শনিবার রাত আড়াইটে নাগাদ আগুন লাগে বাগরি মার্কেটে। রবিবার সারা দিন চেষ্টা করেও আগুন নেভাতে পারেনি দমকল বিভাগ। যে সব তলায় আগুন লাগেনি, রবিবার বিকেলের দিকে সেই সব তলাতেও আগুন ছড়িয়ে পড়ে।
রবিবার সকালে ইউরোপ সফরে রওনা হন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিমানবন্দরে ঢোকার মুখে মিডিয়ার মুখোমুখি হয়ে তিনি বলেন, ‘‘কেউ হতাহত হননি বা কেউ আটকেও নেই। সুতরাং আগুনটা আর কিছুক্ষণের মধ্যেই পুরোপুরি নিভে যাবে।’’
মুখ্যমন্ত্রী যেমনটা আশা করেছিলেন, বা যেমন রিপোর্ট তাঁর কাছে ছিল, তা মেলেনি। ‘কিছুক্ষণের মধ্যে’ নেভা তো দূরের কথা, রবিবার রাত পর্যন্তও আগুন পুরোপুরি আয়ত্তে আসেনি। তা নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে ক্রমশ বেড়েছে ক্ষোভ। বাগরি মার্কেটের ব্যবসায়ীরা এবং স্থানীয় বাসিন্দাদের অনেকেই বার বার সেনা নামানোর দাবি তুলেছেন। দমকল বিভাগের গাফিলতির দিকে আঙুল তুলেছেন। আশপাশের বাড়িগুলিতেও বিপদের আশঙ্কা ক্রমশ বেড়েছে।
আরও পড়ুন: দিনভর লড়াই, এখনও জ্বলছে বাগরি মার্কেট
রবিবার সকালেই কলকাতার মেয়র তথা রাজ্যের দমকল মন্ত্রী শোভন চট্টোপাধ্যায় ঘটনাস্থলে গিয়েছিলেন। তিনি জানান, বাগরি মার্কেট বা পার্শ্ববর্তী মেহতা বিল্ডিং পরিদর্শনে তিনি আগেও গিয়েছিলেন। কিন্তু অগ্নিনির্বাপণ সংক্রান্ত বিষয়ে সে সময়ে যে সব পদক্ষেপ করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল, তা অনুসৃত হয়নি বলে দমকল মন্ত্রী তথা মেয়র অভিযোগ করেন। তিনি বলেন, ‘‘সেটা যদি করত, তা হলে হয়তো আজকে এই অবস্থার সম্মুখীন আমাদের হতে হত না।’’
রাজ্য বিজেপির সভাপতি দিলীপ ঘোষের তোপ, এই ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের দায় পুরোপুরি প্রশাসনের। তাঁর কথায়, ‘‘ওখানে কোনও অগ্নিনির্বাপণের ব্যবস্থা থাকে না। পুলিশ সব জানা সত্ত্বেও কিছুই করে না।’’

আগুন নেভানোর ফাঁকেই নিজেদের মধ্যে আলোচনা সেরে নিচ্ছেন দমকল কর্মীরা। —নিজস্ব চিত্র
প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীর আক্রমণের সুর আরও চড়া। তিনি বলেন, কলকাতাকে লন্ডন বানানোর প্রতিশ্রুতি দিয়ে যিনি ক্ষমতায় এসেছিলেন, তিনি কলকাতাকে আসলে লন্ডভন্ড শহরে পরিণত করেছেন। অধীর পরে ফের বিবৃতি দিয়ে বলেন, ‘‘ভাবতে অবাক লাগছে, দিদি যাচ্ছেন ইতালি-জার্মানি। বিজনেস মিট! আর এ দিকে এত দিনের বিজনেস সেন্টার বাগরি মার্কেটের আগুন নেভাতে ল্যাজে-গোবরে তাঁর ডিজ্যাস্টার ম্যানেজমেন্ট। আজ অবধি সব ডিজ্যাস্টার ম্যানেজমেন্টে ফেল।’’ অধীরের কটাক্ষ, ‘‘রোম যখন পুড়ছিল, সম্রাট নিরো বেহালা বাজাচ্ছিলেন। বাগরি মার্কেট পুড়ছে, আধুনিক নিরো ইতালি-জার্মানি ঘুরছেন।’’
আরও পড়ুন: নন্দরাম থেকে বাগরি, জ্বলেই চলেছে বাজার, শহরে ১০ বছরের খতিয়ান
সাংসদ তথা সিপিএম পলিটব্যুরো সদস্য মহম্মদ সেলিমও তোপ দেগেছেন মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে। সেলিম বলেন, ‘‘কলকাতায় বহু বেআইনি নির্মাণ হয়েছে, যার ফলে অগ্নিকাণ্ড-সহ বড় বিপর্যয়ের আশঙ্কা বাড়ছে। মুখ্যমন্ত্রী তাঁর পছন্দের যে সব ব্যক্তিকে নানা গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে বসিয়ে রেখেছেন, তাঁদের কারণেই বিপর্যয়গুলো এড়ানো যাচ্ছে না।’’ বিধানসভার বাম পরিষদীয় দলনেতা সুজন চক্রবর্তী সেনা ডাকার পরামর্শ দিয়েছেন। সুজন এবং অধীর, নিজের নিজের দলীয় কর্মীদের প্রতি দু’জনেই আহ্বান জানিয়েছেন, ত্রাণ ও উদ্ধারকাজে সাহায্য করতে।