Advertisement
E-Paper

আদিগঙ্গার পাড়ের অবৈধ বসতি দু’সপ্তাহেই ভাঙার নির্দেশ পরিবেশ কোর্টের

অবৈধ বসতি, খাটাল এবং জঞ্জাল নিয়ে আদিগঙ্গার দূষণ নতুন কিছু নয়। তা নিয়ে বহু বার সরবও হয়েছেন পরিবেশকর্মীরা। কিন্তু দূষণের ছবিটা বদলায়নি। অবশেষে মঙ্গলবার কলকাতার জাতীয় পরিবেশ আদালতের বিচারপতি প্রতাপ রায় ও বিশেষজ্ঞ-সদস্য পি সি মিশ্রের ডিভিশন বেঞ্চ নির্দেশ দিয়েছে, দু’সপ্তাহের মধ্যে আদিগঙ্গার পাড়ে অবৈধ বসতি ভেঙে ফেলতে হবে কলকাতা পুরসভাকে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৬ অক্টোবর ২০১৫ ১৭:৩৩

অবৈধ বসতি, খাটাল এবং জঞ্জাল নিয়ে আদিগঙ্গার দূষণ নতুন কিছু নয়। তা নিয়ে বহু বার সরবও হয়েছেন পরিবেশকর্মীরা। কিন্তু দূষণের ছবিটা বদলায়নি। অবশেষে মঙ্গলবার কলকাতার জাতীয় পরিবেশ আদালতের বিচারপতি প্রতাপ রায় ও বিশেষজ্ঞ-সদস্য পি সি মিশ্রের ডিভিশন বেঞ্চ নির্দেশ দিয়েছে, দু’সপ্তাহের মধ্যে আদিগঙ্গার পাড়ে অবৈধ বসতি ভেঙে ফেলতে হবে কলকাতা পুরসভাকে। এই কাজে প্রয়োজনীয় সাহায্য করবে কলকাতা পুলিশও। আদিগঙ্গার পাড়ে গড়়ে ওঠা কলকারখানা ও হোটেল দূষণ ঘটাচ্ছে কি না, তা দেখতে হবে রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদকে। এ ব্যাপারে পুরসভাকে ব্যবস্থা গ্রহণের রিপোর্টও আদালতে জমা দিতে হবে।

কালীঘাট মন্দির এলাকার কয়েকটি হোটেল দূষণ ঘটাচ্ছে, এই অভিযোগে জাতীয় পরিবেশ আদালতে মামলা করেছিলেন এক আইনজীবী। কিন্তু আদালত এই দূষণের প্রেক্ষিতটি আরও বড় করে দেখার জন্য পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্তকে আদালতবান্ধব হিসেবে নিয়োগ করে। গত ১১ ও ১৩ সেপ্টেম্বর নৌকো নিয়ে হেস্টিংস থেকে আলিপুর পর্যন্ত আদিগঙ্গা পরিদর্শন করে এ দিন সুভাষবাবু ৬১টি ছবি-সহ রিপোর্ট আদালতে জমা দেন। সুভাষবাবু জানান, আদিগঙ্গার উপরে বাঁশের কাঠামো করে ঘর তৈরি হয়েছে, তৈরি হয়েছে শৌচাগার। যা থেকে সরাসরি মলমূত্র আদিগঙ্গায় পড়ছে। অনেক বাড়ির নালাও সরাসরি আদিগঙ্গায় এসে পড়ছে। আশপাশের খাটাল থেকেও গরু-মহিষের মলমূত্র জলে মিশছে। ওই এলাকার একটি বড় হোটেলের নালাও আদিগঙ্গায় এসে পড়ছে। জোয়ার ভাঁটায় আদিগঙ্গার দূষিত জল মিশছে মূল গঙ্গার সঙ্গেও।

নদী এবং জল বিশেষজ্ঞরা বারবারই গঙ্গার দূষণের মাত্রা নিয়ে সরব হয়েছেন। বছর কয়েক আগে কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের একটি সমীক্ষায় কলকাতা ও লাগোয়া এলাকায় গঙ্গা দূষণের মারাত্মক ছবিটাই প্রকাশ পেয়েছিল। কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ সূত্রের খবর, গঙ্গার দূষণের মাত্রা মাপা হয়েছিল জলে ফিক্যাল কলিফর্ম নামে একটি ব্যাক্টেরিয়ার উপস্থিতি দিয়ে। সমীক্ষায় উঠে এসেছিল, দক্ষিণেশ্বর থেকে গার্ডেনরিচ— জলে ফিক্যাল কলিফর্মের মাত্রা কোথাও স্বাভাবিকের থেকে পাঁচ গুণ বেশি কোথাও বা সাত গুণ! রাজ্যের এক নদী ও পরিবেশ বিশেষজ্ঞ বলছেন, এই ব্যাক্টেরিয়ার উৎস মূলত মানুষ ও পশুপাখির মল। টাইফয়েড, জন্ডিসের মতো রোগসৃষ্টিকারী জীবাণু জলে রয়েছে কি না, তা এর উপস্থিতি দেখেই বোঝা যায়। গঙ্গা এবং তার সঙ্গে যুক্ত থাকা খাল-নালাগুলির পাশে খাটাল, বস্তি গড়ে ওঠাতেই এই দূষণ বৃদ্ধি পাচ্ছে।

এ দিন সুভাষবাবুর রিপোর্ট এবং আদালতের নির্দেশের কথা শুনে রাজ্যের এক পরিবেশকর্মী বলেন, ‘‘আমরা এত দিন ধরে বললেও পুরসভা-প্রশাসন আমল দেয়নি। এ বার আদালতের নির্দেশে কতটা নড়েচড়ে বসে, সেটাই দেখার।’’

শুধু বসতি নয়, প্রশ্ন উঠেছে আদিগঙ্গার পাড়ে গড়ে ওঠা বিভিন্ন কলকারখানা এবং হোটেলের ভূমিকা নিয়েও। সেগুলিও দূষণের জন্য দায়ী বলে অভিযোগ। এ দিন আদালতে উপস্থিত দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের আইনজীবী অর্পিতা চৌধুরীকে ডিভিশন বেঞ্চ বলেছে, ওই ওলাকার কলকারখানাগুলি দূষণ প্রতিরোধের নিয়ম মানছে কি না তা দেখতে হবে। ওই এলাকার যে বড় হোটেলটির নালা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে, সেটিও খতিয়ে দেখতে হবে।

এই মামলা শুরু হয়েছিল কালীঘাট এলাকার হোটেল ও দোকানের দূষণ নিয়ে। এ দিন আদালত জানিয়েছে, কালীঘাট মন্দির কর্তৃপক্ষকে ওই এলাকার বেআইনি দোকান ও পরিবেশ নিয়ে হলফনামা জমা দিতে হবে। এই মামলায় কলকাতা বন্দর কর্তৃপক্ষকেও যুক্ত করতে নির্দেশ দিয়েছে পরিবেশ আদালত।

home adi ganga
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy