Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
Kolkata

Unsolved murder mystery: ২৫ লক্ষ মুক্তিপণ দিয়েও কেন খুন ভবানীপুরের গয়না ব্যবসায়ীকে? কাটছে না ধন্দ

অপহৃত শান্তিলালকে ঘরে ফেরাতে ২৫ লক্ষ টাকা মুক্তিপণ দেওয়ার পরেও কেন তাঁকে খুন হতে হল? তা হলে কি এর নেপথ্যে রয়েছে কোনও পরিচিতেরই হাত?

গ্রাফিক— শৌভিক দেবনাথ।

সারমিন বেগম
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ১৬:২১
Share: Save:

বরাবরই পান খাওয়ার নেশা। সোমবার ঘড়ির কাটায় তখন সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা। ভবানীপুরের ২০ লি রোডের বাড়ি থেকে বেরিয়ে অন্যান্য দিনের মতোই পাড়ার পানের দোকানে গিয়েছিলেন গয়না ব্যবসায়ী ষাটোর্ধ্ব শান্তিলাল বৈদ। তার পর থেকেই নিখোঁজ। ওই রাতেই বাড়ি থেকে মেরেকেটে ৫০০ মিটার দূরের অতিথিশালা থেকে তাঁর মৃতদেহ উদ্ধার হয়।

গয়না ব্যবসায়ী শান্তিলাল পা়ড়ায় শান্তশিষ্ট, ভদ্রলোক হিসেবেই পরিচিত। এ হেন মানুষের এমন পরিণতিতে শিউরে উঠছেন লি রোডের অন্য বাসিন্দারা।

সোমবার বিকেলে পান কিনতে বেরিয়ে নিখোঁজ হন শান্তিলাল। পরিবারের দাবি, সন্ধ্যা ৭টার পর শান্তিলালের ছেলের মোবাইলে ফোন আসে। বলা হয়, ‘শান্তিলালকে অপহরণ করা হয়েছে। ২৫ লক্ষ টাকা চাই। হাতে সময় কয়েক ঘণ্টা।’ তার মধ্যেই ২৫ লক্ষ টাকা জোগাড় করে ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের দক্ষিণ দিকের গেটের কাছে গিয়ে টাকার লেনদেন হয়। পরিবারের দাবি, হলুদ ট্যাক্সিতে করে কালো পোশাক পরে মাস্কে মুখ ঢেকে আসে অপহরণকারীরা। টাকা দিলে শান্তিলালের ফোন ফেরত দিয়ে বলা হয়, ‘‘এখানেই দাঁড়ান। আধঘণ্টার মধ্যে এখানেই আসবেন শান্তিলাল।’’

কিন্তু রাত সাড়ে ১১টা বেজে গেলেও ফেরেন না গয়না ব্যবসায়ী। ভিক্টোরিয়া থেকে সোজা ভবানীপুর থানায় যান তাঁর বাড়ির লোকেরা। খুলে বলেন গোটা বৃত্তান্ত। তদন্তে নামে পুলিশ। শান্তিলালের মোবাইলের টাওয়ার লোকেশন দেখাচ্ছিল পার্ক স্ট্রিট, ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল এলাকায়। কিন্তু তখনও শান্তিলালের খোঁজ মেলেনি।

প্রয়াত গয়না ব্যবসায়ী শান্তিলাল বৈদ।

প্রয়াত গয়না ব্যবসায়ী শান্তিলাল বৈদ।

এই সময়ে ভবানীপুর থানা এলাকার এক অতিথিশালা থেকে একটি মৃতদেহ উদ্ধার হয়। পুলিশ সেই দেহ উদ্ধার করার পর জানতে পারে, ওই ব্যক্তিই শান্তিলাল। গলায় টেলিফোনের তার পেঁচিয়ে শান্তিলালকে খুন করা হয়েছে বলে প্রাথমিক তদন্তে লালবাজারের অনুমান। জানা যায়, ওই অতিথিশালায় শান্তিলালকে নিয়ে ঢুকেছিলেন এক ব্যক্তি। তিনি শান্তিলালের পরিচয় দেন তাঁর কাকা হিসেবে। এর পর ওই ব্যক্তি অতিথিশালা থেকে বেরিয়ে গেলেও শান্তিলাল ঘরেই ছিলেন। পুলিশের সন্দেহ, শান্তিলালকে কাকা পরিচয় দেওয়া ওই ব্যক্তিই তাঁকে খুন করে ঘর থেকে বেরিয়ে গিয়েছিলেন।

এখানেই উঠছে প্রশ্ন। অপহৃত শান্তিলালকে ঘরে ফেরাতে ২৫ লক্ষ টাকা মুক্তিপণ দেওয়ার পরও কেন তাঁকে খুন হতে হল? তা হলে কি নেপথ্যে রয়েছে কোনও পরিচিতেরই হাত? তদন্তে নেমে সমস্ত দিক খতিয়ে দেখছেন লালবাজারের কর্তারা।

শান্তিলালের পরিবার পুলিশকে জানিয়েছে, তারা ঠিক কখন ভিক্টোরিয়া চত্বরে গিয়ে ২৫ লাখ টাকা অপহরণকারীদের হাতে তুলে দিয়েছিল। সেই সময় অনুযায়ী পুলিশ ওই এলাকার সিসিটিভির ফুটেজ নিরীক্ষা করে দেখছে। দেখা হচ্ছে ওই সময়ে ভিক্টোরিয়ার রাস্তা দিয়ে চালচাল করা সমস্ত গাড়ির গতিবিধিও। কিন্তু মঙ্গলবার বিকেল পর্যন্ত খুনির পরিচয় সম্পর্কে কার্যত অন্ধকারেই রয়েছে লালবাজার। উত্তর নেই বহু প্রশ্নেরও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Kolkata Murder Lalbazar Kolkata Police
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE