রেড রোডে বেপরোয়া গাড়ির চাপায় বায়ুসেনার কর্পোরালের মৃত্যুর পরে বোধহয় টনক নড়েছে কলকাতা পুলিশের। শনিবার লালবাজারে তাঁর শেষ ক্রাইম কনফারেন্সেও শহরের যান-নিয়ন্ত্রণের প্রসঙ্গ তুলে কার্যত তা বুঝিয়ে দিলেন বিদায়ী পুলিশ কমিশনার সুরজিৎ কর পুরকায়স্থ। শহরের রাস্তায় মোটরবাইক দৌড় এবং বেপরোয়া গাড়ি নিয়ন্ত্রণে বাহিনীকে আরও সজাগ হতে নির্দেশ দিলেন তিনি। পাশাপাশি, শহরে মাদক এবং বেআইনি অস্ত্র সংক্রান্ত সমস্যা যে বারবার বলা সত্ত্বেও তাঁর সময়কালে পুরো নিয়ন্ত্রণে আসেনি, তা-ও প্রকারান্তরে বুঝিয়ে দিলেন।
আগামী ৩ ফেব্রুয়ারি কলকাতার নতুন পুলিশ কমিশনারের দায়িত্ব নিচ্ছেন রাজীব কুমার। সুরজিৎবাবু চলে যাচ্ছেন সিআইডি-তে। এ দিনের বৈঠক বস্তুত ছিল বিদায়ী তাঁর বিদায়ী ভাষণ। সুরজিৎবাবু এ দিন বলেছেন, ‘‘বেপরোয়া গাড়ির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। কিন্তু আরও বেশি করে অভিযোগ লিপিবদ্ধ করতে হবে।’’ লালবাজার সূত্রের খবর, এ দিনের বৈঠকে সিপি ১৩ তারিখের রেড রোড কাণ্ডের কথা নিজেই তোলেন।
লালবাজারের একাংশের বক্তব্য, রাতের শহরের বিভিন্ন রাস্তায় ঘুরলেই দেখতে পাওয়া যায় বাইক আরোহীদের দৌরাত্ম্য। কলকাতা ট্রাফিক পুলিশের এক কর্তার কথায়, ‘‘শহরের বুকে বেপরোয়া মোটরবাইকের দাপট কতটা, সিপি সাহেব তা ভালোই জানেন।’’
মধ্য কলকাতার একটি থানার এক ওসি-র মন্তব্য, ‘‘সেই সময়ে পুলিশ কমিশনার ট্রাফিক পুলিশকে কড়া হতে নির্দেশ দিয়েছিলেন। মাসখানেক ধরপাকড় চললেও, ফের পুলিশ অনেকটাই নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছিল। ১৩ জানুয়ারির রেড রোডের ঘটনা সেটাই প্রমাণ করে।’’ এ দিনের বৈঠকে থানার ওসি-রা ছাড়াও সব ট্রাফিক গার্ডের ওসি-রা উপস্থিত ছিলেন। সামনে মাধ্যমিক পরীক্ষা। শহরে যাতে সেই সময়ে মাইক বাজানো না হয়, ওই বৈঠকে তা নিশ্চিত করতেও বাহিনীকে নির্দেশ দিয়েছেন সিপি।
এ দিনের বৈঠকে পুলিশ কমিশনার শহরের বুকে মাদক বিক্রি নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। গত অক্টোবরের বৈঠকেও নিমতলা এলাকায় মাদক বিক্রি হচ্ছে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন সিপি। পুলিশ সূত্রের খবর, তার পরে মাদক বিক্রির অভিযোগে কয়েক জনকে ওই এলাকা থেকে গ্রেফতারও করা হয়। তাতে যে সমস্যার সমাধান হয়নি, এ দিন সিপি ফের প্রসঙ্গটি তোলায় সে কথা বোঝা যায়। লালবাজারের সূত্রের খবর, এ দিনের বৈঠকে কমিশনার ডিসেম্বর মাসে ঘটে যাওয়া দু’টি খুনের ঘটনার পিছনে মাদকের যোগ রয়েছে বলে জানিয়েছেন। কলকাতার একটি থানার ওসি বলেন, ‘‘সিপি একবালপুর এবং তিলজলার দু’টি খুনের ঘটনার কথা বলেছেন। ওই দু’টি ঘটনায় অভিযুক্তেরা মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত।’’ পুলিশ সূত্রের খবর, ওই দু’টি ঘটনার কথা উল্লেখ করে কমিশনার ডিসি ডিডি (স্পেশাল) দেবস্মিতা দাসকে বিষয়টি দেখতে বলেন। ডিসি বৈঠকে জানান, মাদক পাচারকারীদের বিরুদ্ধে গোয়েন্দা বিভাগের মাদক দমন শাখা নিয়মিত ব্যবস্থা নিচ্ছে।
আগেও কয়েকটি ক্রাইম কনফারেন্সে বেআইনি অস্ত্র নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন সিপি। এ দিন ফের অস্ত্র উদ্ধারে তৎপর হতে বলেন সিপি। পাশাপাশি, সুরজিৎবাবু এ দিন স্থানীয় দুষ্কৃতীদের গ্রেফতার করারও নির্দেশ দেন।
এত আলোচনার শেষে কলকাতা পুলিশকেই অবশ্য দেশের সেরা পুলিশ বাহিনীর শিরোপা দিয়ে গিয়েছেন সুরজিৎবাবু।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy