Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪
durga puja

ভিড়ের দায় কার, ঠেলাঠেলি পুজো শেষেও

অনেকেরই প্রশ্ন, পঞ্চমী, ষষ্ঠী ও সপ্তমী পর্যন্ত শহরের যে ছবি ছিল, অষ্টমী থেকেই তা বদলে গেল কোন জাদুবলে?

দীর্ঘ: উৎসব শেষ হতেই ফিরল বাসের জন্য লম্বা লাইন এবং দূরত্ব-বিধি ভঙ্গের চেনা চিত্র। মঙ্গলবার, ধর্মতলায়। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী

দীর্ঘ: উৎসব শেষ হতেই ফিরল বাসের জন্য লম্বা লাইন এবং দূরত্ব-বিধি ভঙ্গের চেনা চিত্র। মঙ্গলবার, ধর্মতলায়। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী

দেবাশিস দাশ ও নীলোৎপল বিশ্বাস
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৮ অক্টোবর ২০২০ ০৩:০৩
Share: Save:

আদালতের নির্দেশে পুজো মণ্ডপ দর্শকশূন্য হলেও ভিড় কি আদৌ এড়ানো গিয়েছে? পুজো পর্যালোচনায় এমন প্রশ্নই ঘুরপাক খাচ্ছে নানা মহলে। মূলত অষ্টমীর সন্ধ্যা থেকেই একাধিক পুজো মণ্ডপের ১০ মিটার দূরের ব্যারিকেডের সামনে এবং রাস্তায় ভিড় জমেছিল। যা দেখে অনেকেরই প্রশ্ন, পঞ্চমী, ষষ্ঠী ও সপ্তমী পর্যন্ত শহরের যে ছবি ছিল, অষ্টমী থেকেই তা বদলে গেল কোন জাদুবলে? অনেকেই এর পিছনে পুলিশ-প্রশাসন বা রাজনৈতিক নেতাদের সক্রিয়তায় ঘাটতির পাশাপাশি দায়ী করছেন মানুষের সচেতনতার অভাবকেও। হাওড়ায় নবমীর রাতের বেলাগাম ভিড়ের জন্য পুলিশকেই সরাসরি দায়ী করেছে জেলা স্বাস্থ্য দফতর।

সেখানকার বহু বড় পুজোয় ভিড় ঠেকাতে হাইকোর্টের নির্দেশ মেনে ১০ মিটার দূর থেকে গার্ডরেল, বাঁশ, দড়ি দিয়ে ঘিরে দেওয়া হয়েছিল। তবুও ভিড় ঠেকানো যায়নি। জেলা স্বাস্থ্য দফতরের এক কর্তার কথায়, ‘‘দিনে এখন ২৭০-২৮০ জন আক্রান্ত হচ্ছেন। নবমীর রাতের ভিড় এই সংখ্যাকে দ্রুত দ্বিগুণ করে দেবে বলে মনে হচ্ছে। পুলিশ কিছুটা ঢিলে দেওয়ায় এমনটা ঘটল।’’ হাওড়া সিটি পুলিশের ট্র্যাফিক দফতরের এক কর্তা বলেন, ‘‘মানুষ সচেতন না হলে কী করা যাবে।’’

কলকাতায় সপ্তমীর রাত থেকে একই চিত্র ধরা পড়েছে একডালিয়া এভারগ্রিন, দেশপ্রিয় পার্ক, নাকতলা উদয়ন সঙ্ঘের মতো পুজো চত্বরে। হিন্দুস্থান পার্ক, সমাজসেবী, বালিগঞ্জ কালচারাল বা হাতিবাগান, বাগবাজার, টালা চত্বরের একাধিক পুজোতেও ভিড় দেখা গিয়েছে। ভিড় নিয়ে শোরগোল ফেলা শ্রীভূমি স্পোর্টিং ক্লাবের উদ্যোক্তা দিব্যেন্দু ঘোষ বলেন, “আদালতের নির্দেশের পরেও লোক এলে কী বলব?” হিন্দুস্থান পার্কের পুজো উদ্যোক্তা সুতপা দাসের বক্তব্য, “লোক কম হবে ভেবেছিলাম। কিন্তু লোকজন একেবারে কম এসেছেন, তা-ও নয়।”

আরও পড়ুন: টিকিটের দাম কমলেও পুজোয় আসন খালি বিমানে

ফোরাম ফর দুর্গোৎসবের সম্পাদক তথা হাতিবাগান সর্বজনীনের পুজোকর্তা শাশ্বত বসুর মন্তব্য, “মানুষ পুজো দেখলে তাতে কারও হাত নেই।’’
রাজ্য প্রশাসনের তরফে অবশ্য স্পষ্ট জানানো হয়েছে, আগেই দূরত্ব-বিধি এবং নিরাপত্তার সব রকম ব্যবস্থা রেখে পুজো করার কথা জানিয়ে দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিন দিক খোলা মণ্ডপ করার পাশাপাশি প্রতিমার মাথাটুকু ছাড়া মণ্ডপের কিছুই ঢাকা অবস্থায় রাখা যাবে না বলেও জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল। মণ্ডপের ভিতরে এক বারে খুব কম লোক প্রবেশ করিয়ে নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রাখারও নির্দেশ দিয়েছিলেন তিনি। স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল, এই সমস্ত বিধি মেনে মণ্ডপ করলে তবেই পুজোর অনুমতি মিলবে।

আরও পড়ুন: বিসর্জন ঘিরে তৃণমূল ও বিজেপি হাতাহাতি

প্রশ্ন উঠছে, রাজনৈতিক নেতাদের পুজো বলে যেগুলি পরিচিত, সেগুলির কর্তারা কি দায় এড়াতে পারেন? সুরুচি সঙ্ঘের অন্যতম কর্তা তথা রাজ্যের মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস এ প্রসঙ্গে বলেন, “উদ্যোক্তাদের সঙ্গে বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী আগেই নির্দেশনামা জারি করেছিলেন। সেই মতোই ব্যবস্থা করা হয়েছিল। পরে যা নির্দেশ এসেছে, তা-ও পালন করা হয়েছে। মানুষ যদি রাস্তায় বেরোন তার দায় আমরা নেব কী করে?”

একডালিয়া এভারগ্রিনের পুজোর উদ্যোক্তা তথা মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় বললেন, “১০ মিটার দূরে ভিড় হলে কিছু করার নেই।” দায় তা হলে কার? সুব্রতবাবুর মন্তব্য, “শেষ কথা মানুষ। তাঁরা চেয়েছেন, তাই বেরিয়েছেন।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Durga Puja Kolkata Crowd
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE