জ্বর-সর্দি-কাশিতে আক্রান্ত শিশুরোগীর ভিড়ে উপচে পড়ছে ইন্টেনসিভ কেয়ার ইউনিটও। ফাইল ছবি।
হাসপাতালের সাধারণ শয্যা তো বটেই, জ্বর-সর্দি-কাশিতে আক্রান্ত শিশুরোগীর ভিড়ে উপচে পড়ছে ইন্টেনসিভ কেয়ার ইউনিটও। কলকাতা ও জেলার সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালের ভয়াবহ এই চিত্র কোভিড-পরবর্তী সময়ে নতুন আতঙ্ক তৈরি করেছে। পেডিয়াট্রিক ইন্টেনসিভ কেয়ার ইউনিটে (পিকু) শয্যারও আকাল দেখা দিয়েছে। ভেন্টিলেশনে রাখতে হচ্ছে শিশুদের।
চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, জ্বর-সর্দি-কাশি নিয়ে ভর্তি থাকা শিশুরোগীদের মধ্যে শতকরা ৯০ জনেরই শ্বাসযন্ত্রে সংক্রমণ (রেসপিরেটরি ট্র্যাক্ট ইনফেকশন) দেখা যাচ্ছে। যাদের অধিকাংশই ভাইরাল নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত। তাদের মধ্যে বেশির ভাগ আবার অ্যাডিনোভাইরাসের শিকার। চিকিৎসকদের দাবি, ২০১৮-’১৯ সালের পরে এই ভাইরাস নতুন করে ফিরে এল। শিশুরোগ চিকিৎসকদের অনেকেই জানাচ্ছেন, এ বারের ভয়াবহতা বছর তিনেক আগের পরিস্থিতিকেও ছাপিয়ে গিয়েছে। একটি কারণ মনে করা হচ্ছে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার ঘাটতি। কোভিডের কারণে ঘরবন্দি শিশুরা দীর্ঘ সময়ে মেলামেশা থেকে বিচ্ছিন্ন থেকেছে। ফলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমেছে তাদের।
কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে শিশুরোগের সাধারণ ওয়ার্ডে জায়গা নেই। রোগীর ভিড় বি সি রায় শিশু হাসপাতালেও। কোনও জেলা হাসপাতালে এক শয্যায় দু’-তিন জনকে রাখতে হচ্ছে। কলকাতা মেডিক্যালের শিশুরোগ বিভাগের শিক্ষক-চিকিৎসক দিব্যেন্দু রায়চৌধুরীর কথায়, “সকলের ভাইরাল-প্যানেল পরীক্ষা হচ্ছে, তেমন নয়। তবে অ্যাডিনোর প্রকোপ বেশি।” ‘ইনস্টিটিউট অব চাইল্ড হেলথ’-এ আইসিইউ-এর ১৪টি শয্যাই ভর্তি। ১০ জন অ্যাডিনোভাইরাসে আক্রান্ত। সেখানকার শিশুরোগ চিকিৎসক প্রভাসপ্রসূন গিরি বলেন, “জ্বর, সর্দি, কাশি ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে বাচ্চারা আসছে। দু’বছরের নীচের বাচ্চাদের সমস্যা বেশি। কাউকে কাউকে ভেন্টিলেশন রাখতে হচ্ছে।”
চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, বাদ যাচ্ছেন না বয়স্কেরাও। বড়দের শ্বাসনালির উপরিভাগ বেশি সংক্রমিত হচ্ছে। তাঁরা জ্বর ও দীর্ঘ দিন ধরে কাশিতে ভুগছেন। জনস্বাস্থ্য বিষয়ক চিকিৎসক অনির্বাণ দলুই জানাচ্ছেন, আবহাওয়ার ঘন ঘন পরিবর্তন ভাইরাসের বাড়বাড়ন্তের উপযুক্ত পরিবেশ। তাঁর কথায়, “মাস্ক পরা বন্ধ, স্কুল-কলেজও খুলে গিয়েছে। তাই আবহাওয়া পরিবর্তনে অল্পেই কাবু হচ্ছেন অনেকে।”
জানুয়ারিতে ৫০০টি নমুনা নাইসেডে পরীক্ষার জন্য পাঠিয়েছিল স্বাস্থ্য দফতর। সেগুলির মধ্যে ৩২ শতাংশের ক্ষেত্রে অ্যাডিনোভাইরাস, ১২ শতাংশের ক্ষেত্রে রাইনো ও ১৩ শতাংশের ক্ষেত্রে মিলেছে প্যারা-ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস। ভাইরোলজিস্ট সিদ্ধার্থ জোয়ারদার জানাচ্ছেন, অ্যাডিনো ডিএনএ ভাইরাস হওয়ায় তার কোষে বিস্তার, হামলা চালানো ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ফাঁকি দেওয়ার বৈশিষ্ট্য আরএনএ ভাইরাসের (ইনফ্লুয়েঞ্জা, রাইনো, করোনা বা রেসপিরেটরি সিনসিটায়াল) থেকে আলাদা। তাঁর কথায়, “অ্যাডিনোভাইরাস ইন্টারফেরন (কোষে ভাইরাসের বৃদ্ধিতে বাধা দেয়) তৈরি এবং এমএইচসি অণুর (দেহের প্রতিরোধী ব্যবস্থাকে ভাইরাস চেনাতে সাহায্য করে) কার্যকারিতায় বাধা দিয়ে আক্রান্ত কোষের মৃত্যু ঠেকিয়ে আধিপত্য বজায় রাখতে পারে। টনসিল ও ফ্যারিংক্সে অনেক দিন থেকে যাওয়ায় কাশিও সারছে না।” স্বাস্থ্য অধিকর্তা সিদ্ধার্থ নিয়োগী বলেন, “পরিস্থিতি দেখে মাস্ক পরার অভ্যাস রাখতে বলা হচ্ছে।”
শিশুরোগ চিকিৎসক অগ্নিমিতা গিরি সরকারের কথায়, “বাচ্চা অসুস্থ হলে, শ্বাসের গতি পর্যবেক্ষণে রাখতে হবে। পাতলা পায়খানা ও প্রস্রাব হচ্ছে কি না, দেখতে হবে।” ‘ইন্ডিয়ান অ্যাকাডেমি অব পেডিয়াট্রিক্স’-এর জাতীয় কোঅর্ডিনেটর তথা আসানসোল ইএসআই হাসপাতালের সুপার অতনু ভদ্রের মতে, “অ্যাডিনোভাইরাসের প্রকোপ বেড়েছে। তবে আক্রান্ত সকলে ওই ভাইরাসের শিকার কি না, তা জানতে ভাইরাল-প্যানেল পরীক্ষা দরকার।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy