E-Paper

ইতিহাস পরীক্ষা দিতে পারব তো? আকুল উচ্চ মাধ্যমিকের ছাত্রী 

শুধু সোনালিই নন। একই রকম সমস্যায় আনন্দপুরের পুড়ে যাওয়া শ্রমিকপল্লির বহু ছাত্রছাত্রীই। বই-খাতা তো বটেই, পরনের পোশাকটুকুও অবশিষ্ট নেই অনেকেরই।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ০৭:৪৫
দগ্ধ: পোড়া বাড়িতে বইয়ের খোঁজে পড়ুয়া। রবিবার, আনন্দপুর এলাকায়।

দগ্ধ: পোড়া বাড়িতে বইয়ের খোঁজে পড়ুয়া। রবিবার, আনন্দপুর এলাকায়। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য।

বাকি সব পরীক্ষা তো ভালই হয়েছে। কিন্তু কাল, মঙ্গলবারের ইতিহাস পরীক্ষার কী হবে? রবিবার সকালে এই চিন্তাই ঘিরে ধরেছিল এ বারের উচ্চ-মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী সোনালি দাসকে। তত ক্ষণে তিনি শুনেছেন, আগুনের গ্রাসে গিয়েছে তাঁদের বস্তি। আকুল সোনালির একটাই প্রশ্ন, বই-খাতা তো পরের কথা, অ্যাডমিট কার্ড, রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট ঠিক থাকবে তো? রীতিমতো ছুটতে ছুটতে মায়ের সঙ্গে পাড়ায় ফিরেছিলেন তিনি। দিনের শেষে তাঁর ঘর না পুড়লেও গোটা এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ না থাকায় সোনালি ভেবেই পাচ্ছেন না, পরীক্ষার শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি নেবেন কী ভাবে?

শুধু সোনালিই নন। একই রকম সমস্যায় আনন্দপুরের পুড়ে যাওয়া শ্রমিকপল্লির বহু ছাত্রছাত্রীই। বই-খাতা তো বটেই, পরনের পোশাকটুকুও অবশিষ্ট নেই অনেকেরই।

রবিবার সকালে প্রথমে আগুন লাগে ইএম বাইপাস লাগোয়া ওই বস্তির একটি ঘরে। নিমেষের মধ্যে তা ছড়িয়ে পড়ে। দমকলের ১১টি ইঞ্জিন গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চালায়। হতাহতের খবর না থাকলেও সর্বস্বান্ত হয়েছেন অনেকেই। সকালে যখন আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে, সেই সময়ে মায়ের সঙ্গে বাজারে গিয়েছিলেন সোনালি। খবর পাওয়া মাত্র বাড়ির উদ্দেশে ছুটতে শুরু করেন মুরলীধর গার্লস হাইস্কুলের ওই ছাত্রী। সোনালি বলেন, ‘‘সব পুড়ে গিয়েছে শুনছিলাম। মা তো ছুটতে পারবে না। তাই মাকে হেঁটে আসতে বলেছি। অন্তত অ্যাডমিট কার্ড আর রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট বাঁচাতে না পারলে বড় ক্ষতি হয়ে যাবে।’’ তখনই জানা যায়, চলতি বছরে উচ্চ মাধ্যমিক দিচ্ছেন সোনালি। তাঁর আসন পড়েছে তিলজলা উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ে। সব পরীক্ষা ভালয় ভালয় মিটলেও কাল, মঙ্গলবার ইতিহাস পরীক্ষা বাকি তাঁর।

সোনালির সঙ্গে তাঁর ঘর পর্যন্ত গিয়ে দেখা গেল, এক দিকে টিন, এক দিকে বেড়া দেওয়া সেই ঘরের উপরে টালির ছাউনি। কোনও মতে ঘরটি আগুন থেকে বাঁচাতে পেরেছেন দমকলকর্মীরা। কিন্তু সোনালিদের পাশের ঘরই ভস্মীভূত হয়ে গিয়েছে। দুই ঘরের মাঝখানে রয়েছে সরু একটি গলিপথ। মনে করা হচ্ছে, সেই গলির কারণেই আগুন সোনালিদের ঘর স্পর্শ করেনি।

পুড়ে যাওয়া বস্তিতে কিছু দূর হেঁটে গিয়ে দেখা গেল, ছাই হয়ে গিয়েছে পলাশ মণ্ডল নামে অষ্টম শ্রেণির এক ছাত্রের ঘরও। বইপত্র তো দূর, গায়ের পোশাকটুকু পরেও বেরোতে পারেনি ভিআইপি নগর হাইস্কুলের ওই ছাত্র। দমকল যখন আগুন নেভানোর প্রাণপণ চেষ্টা চালাচ্ছে, তখন একটা গ্যাস সিলিন্ডার দেখিয়ে পলাশ বলে, ‘‘প্রতিবেশীরা বললেন, আগে সিলিন্ডারটা বার করে আনতে। কোনও মতে সেটাকে তুলে টানতে টানতে বেরিয়েছি! বইপত্র, স্কুলের সব কাগজ পুড়ে গিয়েছে। খালি গায়ে বেরিয়ে এসেছিলাম।’’

ঘটনার সময়ে মা-বাবা ছিলেন না? পলাশ বলে, ‘‘বাবা একটি আবাসনে নিরাপত্তারক্ষীর কাজ করে। মা লোকের বাড়িতে রান্না করে। সকালে মা-বাবা কোনও দিনই থাকে না। ওঁরা থাকলে হয়তো বইগুলো অন্তত বার করতে পারতাম। এর পরে আর কী করে পড়ব, জানি না।’’

একই পরিস্থিতি ভিআইপি নগর হাইস্কুলেরই নবম শ্রেণির ছাত্র হরি মণ্ডলের। ওই ছাত্রের কথায়, ‘‘পাড়ার বড়রা বলছেন, নেতারা নাকি বই কিনে দিয়ে যাবেন বলেছেন। অনেক কষ্ট করে বই কিনতে হয়েছিল। বার বার তো বাবার পক্ষে দেওয়া সম্ভব নয়। নেতারা না দিলে বন্ধুর থেকে বই নিয়ে কোনও রকমে এই বছরটা পড়াশোনা করতে হবে।’’

এই জটলার মধ্যেই সোনালির মা রিঙ্কি দাস বললেন, ‘‘স্বামী দিনমজুরের কাজ করেন। এখানে ঘর করে ছিলাম। মেয়েটাই আমাদের ভরসা। উচ্চ মাধ্যমিকের শেষ পরীক্ষাটা ঠিক মতো দিতে না পারলে বড় ক্ষতি হয়ে যাবে।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Fire Higher Secondary Exam 2024 Students Blast Case

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy