Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
Paradise Cinema Hall

বন্ধের মুখে প্যারাডাইস, সঙ্কটে শহরের সিনেমা হল

স্মৃতির ঝাঁপি নাড়াচাড়া করা সেই গাড়িবারান্দা, সুদৃশ্য বাহারি স্তম্ভের নকশা হয়তো আরও কিছু দিন থাকবে।

অনিশ্চিত: করোনা পরিস্থিতিতে সঙ্কটে প্যারাডাইস হল। নিজস্ব চিত্র

অনিশ্চিত: করোনা পরিস্থিতিতে সঙ্কটে প্যারাডাইস হল। নিজস্ব চিত্র

ঋজু বসু
কলকাতা শেষ আপডেট: ১১ অগস্ট ২০২০ ০৪:১৫
Share: Save:

প্রায় সাত দশক আগে বেন্টিঙ্ক স্ট্রিটের সেই গাড়িবারান্দায় দাঁড়িয়ে হাত নেড়েছিলেন রাজ কপূর। তখন দেশ কাঁপাচ্ছে রাজ-নার্গিস জুটির ‘বরসাত’।

আর এক দশক আগে ওই বাড়িটায় ঢুকেই নাকি ‘পোর্টিকোর’ খোঁজ করেন আমির খান। সেটা ‘থ্রি ইডিয়টস’ মুক্তির সময়।

প্যারাডাইস সিনেমা হলের কর্মীদের অনেকেরই টাটকা স্মৃতি, আরও ঢের কম বয়সে কলকাতার এই প্রসিদ্ধ সিনে-ঠিকানাটিতে আসার কথা মনে পড়ে গিয়েছিল আমিরের। ‘কয়ামত সে কয়ামত তক’-এর আনকোরা নায়ক না কি কবেকার ‘ইয়াদোঁ কি বরাত’- এর শিশুশিল্পী আমির, কী ভাবে তিনি আগে প্যারাডাইসে এসেছিলেন তা নিয়ে সোমবার সন্ধ্যায় কর্মীদের মৃদু তর্ক শুরু হয়ে গেল।

স্মৃতির ঝাঁপি নাড়াচাড়া করা সেই গাড়িবারান্দা, সুদৃশ্য বাহারি স্তম্ভের নকশা হয়তো আরও কিছু দিন থাকবে। কিন্তু কোভিড-পরিস্থিতিতে প্যারাডাইস হলের শো আদৌ শুরু হওয়া নিয়ে এ বার তৈরি হল প্রশ্নচিহ্ন।

অতিমারির ধাক্কায় রাজ্যে সিঙ্গল স্ক্রিনের ভবিষ্যৎ নিয়েই অশনি সঙ্কেতের সুর। সিনেমা হল বন্ধ সাড়ে চার মাস ধরে। বিভিন্ন ডিজিটাল-মঞ্চে নতুন ছবি বা সিরিজ মুক্তির নব্য স্বাভাবিকতায় ক্রমশ ধাতস্থ দেশের চলচ্চিত্রপ্রেমীরা। এই পরিস্থিতিতে প্যারাডাইস কর্তৃপক্ষের তরফে এ দিন ‘সাসপেনশন অব ওয়ার্ক’ নোটিস জমা দেওয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্ট ট্রেড ইউনিয়ন এবং এ রাজ্যের চলচ্চিত্র জগৎ, প্রযোজক, পরিবেশক, প্রদর্শকদের সমিতি ইম্পা-র কাছে নথি জমা পড়েছে। যার অর্থ, প্যারাডাইস কর্তৃপক্ষের তরফে আর কর্মীদের ভার বহন সম্ভব হচ্ছে না। বিভিন্ন সিনেমা হলের মালিক তথা ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির অন্দরের অনেকেরই অভিমত, এই নোটিস খাতায়-কলমে হল বন্ধ করার আগের পদক্ষেপ।

ইম্পা-র কোষাধ্যক্ষ শান্তনু রায়চৌধুরী বলেন, ‘‘রাজ্যের টিকে থাকা ২৭০-২৮০টি সিনেমা হল বা কলকাতার গোটা ২০ সিনেমা হলেরই এক অবস্থা। কোভিড-পরিস্থিতিতে ক’টি টিকে থাকবে, বলা শক্ত।’’ প্যারাডাইসের মালিকপক্ষ বেঙ্গল প্রপার্টিজ প্রাইভেট লিমিটেডের অন্যতম ডিরেক্টর সুনীত সিংহও কার্যত হাত তুলে নিচ্ছেন। তাঁর কথায়, ‘‘কোভিড-পরিস্থিতিতে বন্ধ এসি হলে পাশাপাশি বসে সিনেমা দেখার অভ্যাসটাই কী ভাবে থাকবে, বলা শক্ত।’’ সুনীতবাবু স্পষ্ট জানাচ্ছেন, নিরাপত্তারক্ষীরা ছাড়া বাকি কর্মীদের বেতন দেওয়া এখন কার্যত অসম্ভব। তিনি বলেন, ‘‘এক বছর বা দেড় বছর বা আরও পরে পরিস্থিতি পাল্টালে কী হবে বলা শক্ত। কিন্তু এখন আশাবাদে ভর করে থাকা সম্ভব নয়।’’

গত কয়েক বছরে তা-ও চলেছে মাল্টিপ্লেক্সগুলি। রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে অনেক হলের আরও সঙ্গিন অবস্থা। তুলনায় উন্নত প্রযুক্তির ঝকঝকে হল প্যারাডাইসের ঝাঁপ বন্ধ হলে বাকিদের দশা আরও করুণ হবে বলে অভিমত ইন্ডাস্ট্রির পণ্ডিতদের। তরুণ প্রজন্মের ‘উৎসাহের’ অভাবে ২০১৯-এ বন্ধ হয় মিত্রা। লকডাউনের ঠিক আগে পুরসভার নতুন লিজের শর্ত মানতে না-পেরে রক্সির ভার ছেড়ে দেয় লিজমালিক বেঙ্গল প্রপার্টিজও। রক্সির ক্ষেত্রে হেরিটেজ তকমার দরুণ মাল্টিপ্লেক্সে রূপান্তরের সমস্যা ছিল। মিনার, বিজলি, ছবিঘর সম্প্রতি ঢেলে সাজিয়েছেন সুরঞ্জন পাল। তাঁর জোড়া স্ক্রিন বসানোর ইচ্ছে ছিল। এই অনিশ্চয়তায় তিনিও রাস্তা হাতড়াচ্ছেন। প্রিয়া-গোষ্ঠীর হলগুলির কর্ণধার অরিজিৎ দত্ত বলছেন, ‘‘শিলিগুড়ি, বালুরঘাট, বৈদ্যবাটীর হলগুলোর কী হবে জানি না। কর্মীদের মাইনে দিতে পারছি না। প্রিয়া হলটাকে হয়তো বাঁচানোর চেষ্টা করব। কিন্তু সব অনিশ্চিত।’’

ভেন্টিলেশনে চলে যাওয়া সিনেমা হলের ব্যবসা বাঁচাতে আপাতত স্থানীয় পুর কর, লাইসেন্স ফি মকুব বা পরিষেবার মূল্যবৃদ্ধির মতো কিছু পদক্ষেপের আশায় গত মার্চে মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি দিয়েছিল ইম্পা। তাতে এখনও সাড়া মেলেনি। ফলে কোভিড-শহিদ হওয়ার আশঙ্কাকেই ভবিতব্য দেখছেন অনেক হলের কর্তৃপক্ষ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE