Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

বিক্ষোভ ঠিক না ভুল, দ্বিমত বাবা-মায়েরা

দোষ প্রমাণের তোয়াক্কা না করেই সংবাদমাধ্যমকে ডেকে এক শিক্ষকের বদনাম করা ঠিক নয়। এ বার এই পাল্টা বক্তব্যে সরব হলেন কারমেল প্রাইমারি স্কুলের অভিভাবকদের একাংশ।

স্কুলের সামনে কারমেলের ছাত্রীরা। ফাইল চিত্র।

স্কুলের সামনে কারমেলের ছাত্রীরা। ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০২:৪৮
Share: Save:

দোষ প্রমাণের তোয়াক্কা না করেই সংবাদমাধ্যমকে ডেকে এক শিক্ষকের বদনাম করা ঠিক নয়। এ বার এই পাল্টা বক্তব্যে সরব হলেন কারমেল প্রাইমারি স্কুলের অভিভাবকদের একাংশ। তাঁদের যুক্তি, অপরাধ করলে শাস্তি অবশ্যই প্রয়োজন। কিন্তু আগে জরুরি অপরাধ প্রমাণ হওয়া। সে সব না করেই যে ভাবে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন অভিভাবকদের একাংশ, তা অনুচিত বলেই সোমবার মত প্রকাশ করলেন অন্য অংশটি। মেয়েদের স্কুলে পুরুষ শিক্ষক বা শিক্ষাকর্মী না থাকার যে দাবি উঠেছে, তার বিরুদ্ধেও সরব হলেন তাঁরা। অর্থাৎ জি ডি বিড়লার মতোই দ্বিধাবিভক্ত এই স্কুলের অভিভাবকেরা।

দেশপ্রিয় পার্কের কাছের ওই স্কুলের দ্বিতীয় শ্রেণির এক ছাত্রীকে নাচের শিক্ষক যৌন নির্যাতন করেছেন বলে অভিযোগ ওঠে। ঘটনাটি ঘিরে স্কুলের সামনে বিক্ষোভে ফেটে পড়েন একদল অভিভাবক। পুলিশের হাত থেকে অভিযুক্তকে ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা, এমনকী পুলিশকে মারধরের ঘটনাও ঘটে। দাবি ওঠে, পুরুষ শিক্ষকদের রাখা যাবে না। লিখিত ভাবে সেই অভিযোগও জমা পড়েছে।

মীনা বেগম নামে এক অভিভাবক এ দিন বলেন, ‘‘শুনছি গানের স্যারও স্কুলে আসছেন না। মান বাঁচাতে নিজেই স্কুল ছাড়ছেন। এটা হয়েছে কিছু অভিভাবকের বিক্ষোভের জন্য। সভ্য সমাজে এটা মেনে নেওয়া যায় না।’’ এই বক্তব্যের সমর্থন করেছেন প্রীতম বন্দ্যোপাধ্যায় ও বনি বন্দ্যোপাধ্যায় নামে আরও দুই অভিভাবক। কিছু অভিভাবকের আচরণের সমালোচনা করে প্রীতমবাবু বলেন, ‘‘ওঁদের তাণ্ডবে স্কুলের বদনাম হচ্ছে। অভিযোগ প্রমাণ হওয়ার আগেই যে ভাবে অভিযুক্তকে মারধর করা হল এবং সংবাদমাধ্যমকে ডেকে বিক্ষোভ দেখানো হল, তার নিন্দার ভাষা নেই। ধৃত শিক্ষক যদি অপরাধী প্রমাণিত না হন, তা হলে কি তাঁর এবং স্কুলের সম্মান ফেরানো যাবে?’’

সে দিনের বিক্ষোভকারী অভিভাবকদের মধ্যে এক জন সোমনাথ ঝা বলেন, ‘‘পুরুষ শিক্ষক না থাকার কথা বলা হয়নি। নাচ, শারীরচর্চার মতো বিষয়ের ক্লাসে শিক্ষকের পাশাপাশি যেন এক জন শিক্ষিকাও থাকেন, সে দাবিই তোলা হয়েছে।’’ পরে তাঁর স্বীকারোক্তি, ‘‘শুক্রবার সকলেই খুব ক্ষুব্ধ ছিলেন। এতটা বিশৃঙ্খলা না হলেই ভাল হত।’’

এ দিন স্কুলে যে পিকনিক ছিল, সেটি আগেই বাতিল হয়েছে। স্বাভাবিক ক্লাস হয়েছে। পুলিশ জানায়, অভিযোগকারী ছাত্রী ও তার পরিবারকে এ দিন স্কুলে দেখা যায়নি। নিগৃহীতা শিশুটির মা বলেন, ‘‘মেয়ের আতঙ্ক কেটে গিয়েছে। ও পুরোপুরি সুস্থ। ক’দিন পর থেকেই স্কুলে যাবে।’’ সূত্রের খবর, স্কুলে বাড়তি সিসিটিভি ক্যামেরা বসাতে উদ্যোগী হয়েছেন কর্তৃপক্ষ। পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে স্কুলে এসেছিলেন বিশেষজ্ঞের দল।

প্রসঙ্গত, এ রাজ্যের খ্রিস্টান স্কুলগুলির সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মলয় ডি’কোস্টা বলেন, ‘‘এ ধরনের ঘটনা কখনও ঘটবে না, সেটাও যেমন বলা যায় না, তেমনই এ ধরনের অভিযোগের সত্যতাও ভাল করে যাচাই করা প্রয়োজন।’’ এ দিন আলিপুরের বিশেষ পকসো আদালতে তোলা হলে বিচারক অরুণকিরণ বন্দ্যোপাধ্যায় ধৃত সৌমেন রানাকে আট দিনের পুলিশ হেফাজত দেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

protest Carmel Primary School Sexual Abuse
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE