Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪

সম্পত্তি চাই, বৃদ্ধ মা-বাবাকে ‘নৃশংস মার’ ছেলে-বৌমার

সম্পত্তি লিখিয়ে নেওয়ার জন্য বৃদ্ধ বাবা-মাকে বেধড়ক মারধর ও খুনের চেষ্টার অভিযোগ উঠেছিল ছেলে-বৌমার বিরুদ্ধে। পুলিশে অভিযোগও জানিয়েছিলেন বৃদ্ধ দম্পতি।

নৃশংস: জখম মা সুব্রতা পাল। গ্রেফতারের পরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে ছেলে শৌভনিক পালকে। নিজস্ব চিত্র।

নৃশংস: জখম মা সুব্রতা পাল। গ্রেফতারের পরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে ছেলে শৌভনিক পালকে। নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ০২ জুন ২০১৭ ০২:৩৫
Share: Save:

সম্পত্তি লিখিয়ে নেওয়ার জন্য বৃদ্ধ বাবা-মাকে বেধড়ক মারধর ও খুনের চেষ্টার অভিযোগ উঠেছিল ছেলে-বৌমার বিরুদ্ধে। পুলিশে অভিযোগও জানিয়েছিলেন বৃদ্ধ দম্পতি। কিন্তু শেষমেশ বছর তিনেকের নাতির মুখ চেয়ে অভিযুক্তদের আপাতত হাজতবাস থেকে রেহাই দিলেন সেই মা-বাবাই। ছোট্ট নাতিটিও গারদে রাত কাটাক, তা তাঁরা চান না। তাই আদালতে দাঁড়িয়ে বৃদ্ধ জানিয়ে দিলেন, ছেলে ও বৌমার জামিনে আপত্তি নেই তাঁদের।

পুলিশ জানায়, বুধবার দুপুরে ইসি ব্লকের বাসিন্দা, ব্যবসায়ী মনোজকুমার পাল ও তাঁর স্ত্রী সুব্রতা খুনের চেষ্টা, মারধর এবং ঘরে আটকে রাখার অভিযোগ দায়ের করেন ছেলে শৌভনিক ও বৌমা পায়েলের বিরুদ্ধে। পুলিশ ওই দিন রাতে দু’জনকেই গ্রেফতার করে। পুত্রবধূকে গ্রেফতার করা হলে শিশু নাতিকেও যে শ্রীঘরে যেতে হবে, সেটা সম্ভবত আঁচ করতে পারেননি অভিযোগকারী বৃদ্ধ-বৃদ্ধা। যখন টের পেলেন, তত ক্ষণে পুত্রবধূকে আদালতে তুলেছে পুলিশ। তাই হন্তদন্ত হয়ে সেখানে ছুটলেন অভিযোগকারী। কোর্টে নাতিকে দেখে স্নেহশীল দাদু আর থাকতে পারলেন না। ছেলে-বৌমার আইনজীবী জামিনের আবেদন করতেই তিনি জানিয়ে দেন, তাঁদের কোনও আপত্তি নেই।

পুলিশ জানায়, বুধবার দুপুরে বিধাননগর উত্তর থানায় একটি ফোন আসে। পুলিশকে জানানো হয়, ইসি ব্লকের একটি বাড়িতে মনোজকুমার পাল ও তাঁর স্ত্রী সুব্রতা পালকে জখম অবস্থায় একটি ঘরে আটকে রেখে পালিয়েছে তাঁদের ছেলে ও বৌমা। পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে দোতলার ঘর থেকে জখম ওই দম্পতিকে উদ্ধার করে বিধাননগর মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসার পরে তাঁদের ছেড়ে দেওয়া হয়।

আরও পড়ুন: ছাত্রছাত্রীদের সামনে ধমক উপাচার্যকেই

এর পরে মনোজবাবু বিধাননগর উত্তর থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। পুলিশকে তিনি জানান, বুধবার দুপুরে শৌভনিক ও পায়েলের সঙ্গে সম্পত্তি নিয়ে তাঁদের স্বামী-স্ত্রীর বচসা বাধে। সম্পত্তি তাদের নামে লিখে দিতে চাপ দিচ্ছিল শৌভনিক। অভিযোগ, মনোজবাবু প্রতিবাদ করলে তাঁর উপরে চড়াও হয়ে এলোপাথাড়ি কিল, চড়, লাথি, ঘুষি মারতে থাকে ছেলে। স্বামীকে বাঁচাতে এগিয়ে যান সুব্রতা। তখন শ্বাশুড়িকে মারধর শুরু করে পায়েল। সুব্রতার অভিযোগ, পায়েল গলা টিপে ধরায় দম বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছিল তাঁর।

অভিযোগ, এর পরেই জোর করে মনোজবাবুকে দিয়ে নিজের নামে সম্পত্তি লিখিয়ে নেয় শৌভনিক। অভিযোগ, পুলিশকে জানালে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকিও দেয় সে।

ঘটনার এখানেই ইতি নয়। মারধরে জখম সত্তরোর্ধ্ব বাবা ও ষাটোর্ধ্বা মাকে একটি ঘরে আটকে রেখে ছেলে-বৌমা চম্পট দেয় বলে অভিযোগ। শেষে বিধাননগর উত্তর থানায় ফোন করে পুলিশের দ্বারস্থ হন পাল দম্পতি। সেই মতো শৌভনিক ও পায়েলকে গ্রেফতারও করা হয়।

বৃহস্পতিবার ধৃতদের বিধাননগর আদালতে তোলা হয়। কিন্তু আদালতে ঘটনার মোড় ঘুরে যায়। সেখানে গিয়ে পায়েলের কোলে নাতিকে দেখেন মনোজবাবু। অভিযুক্তদের আইনজীবী অভিষেক মুখোপাধ্যায় জানান, তিনি জামিনের আবেদন করতেই মনোজবাবু তাঁর তরফে ‘নো অবজেকশন’ জানিয়ে দেন। বাবা-মায়ের অভিযোগ নিয়ে শৌভনিক-পায়েলের কোনও প্রতিক্রিয়া মেলেনি। তাদের আইনজীবীও এ ব্যাপারে কোনও মন্তব্য করতে চাননি।

তাই আপাতত শ্রীঘরে যেতে হচ্ছে না অভিযুক্তদের। আদালতে হাজির লোকজনের একাংশের প্রশ্ন, এর পরেও কি হুঁশ ফিরবে কীর্তিমান ছেলে ও তার স্ত্রীর? পুলিশ সূত্রে খবর, এত কাণ্ডের পরেও আদালতে যাওয়া-আসার পথে শৌভনিক ও পায়েল স্বাভাবিক ছিল।

পুলিশ জেনেছে, বেকার শৌভনিক ও তার স্ত্রীর সঙ্গে দীর্ঘ দিন ধরেই অশান্তি চলছিল অভিযোগকারী পাল দম্পতির। মনোজবাবু স্থানীয় ৪০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর তুলসী সিংহরায়কে অশান্তির বিষয়টি জানান। কাউন্সিলর তা স্বীকারও করেছেন। কাউন্সিলরের দাবি, মনোজবাবুকে তিনি বলেছিলেন, এ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করলে অত্যাচার বাড়বে। তাই আর এগোননি পাল দম্পতি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Parents Lynched Son Estate
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE