Advertisement
E-Paper

পরিণতির কথা ভেবে আতঙ্কেই থাকতেন জুনিয়রের মা

শ্বেতাদেবী জানান, কিছু দিন পরে যখন দু’জনের ঘনিষ্ঠতা বাড়ল, তখনও সেই সম্পর্ক সহজ ভাবে মেনে নেননি তিনি।

সুপ্রকাশ মণ্ডল

শেষ আপডেট: ১৫ জানুয়ারি ২০২১ ০৫:১২
জুনিয়র মৃধা

জুনিয়র মৃধা

সালটা ছিল ২০০৮। তার আগের বছর এক যুবকের মর্মান্তিক মৃত্যু তোলপাড় ফেলে দিয়েছিল গোটা বাংলায়। রিজওয়ানুর রহমানের মৃত্যু নাড়িয়ে দিয়েছিল বেলঘরিয়ার দেশপ্রিয়নগরের বাসিন্দা শ্বেতা মৃধার মনকেও। বিত্তশালী পরিবারের মেয়ের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি হলে কী ভাবে তার মূল্য চোকাতে হতে পারে, তার বিভিন্ন নজির জানা ছিল মৃধা পরিবারের। সে কথা সামনাসামনি বলেওছিলেন শ্বেতাদেবী।

দশ বছর আগে খুন হয়ে যাওয়া সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার জুনিয়র মৃধার মা শ্বেতাদেবী বললেন, “২০০৮ সালে যখন আমার বাবির (জুনিয়রের ডাকনাম) সঙ্গে প্রিয়াঙ্কা চৌধুরীর বন্ধুত্ব হয়, তখনই আমি আতঙ্কিত হয়ে পড়েছিলাম। আমরা ছাপোষা লোক। ছেলে তখনও পড়াশোনা করছিল। আর ও আসত দামি গাড়ি চড়ে।”

শ্বেতাদেবী জানান, কিছু দিন পরে যখন দু’জনের ঘনিষ্ঠতা বাড়ল, তখনও সেই সম্পর্ক সহজ ভাবে মেনে নেননি তিনি। শ্বেতাদেবী বলেন, “এটা অসম সম্পর্ক বলে মনে হয়েছিল। রিজওয়ানুরের পরিণতির কথা আমার মনে ছিল। প্রিয়াঙ্কা যখনই ওকে নিয়ে বেরোত, আমার মন কু ডাকত। তাই সরাসরিই এক দিন ওকে বলি, দেখিস, বাবিকে যেন রিজওয়ানুর হতে না হয়। প্রিয়াঙ্কা জবাবে বলেছিল, কিচ্ছু হবে না দেখো।”

২০০৯-এর পর থেকে প্রিয়াঙ্কার সঙ্গে জুনিয়রের সম্পর্ক আরও গাঢ় হয়। প্রিয়াঙ্কাকে নিয়ে জুনিয়র নিজের আত্মীয়দের বাড়িও গিয়েছেন। কিন্তু তার বাড়িতে জুনিয়রকে কখনও নিয়ে যায়নি প্রিয়াঙ্কা। এমনকি, পরিবারের সঙ্গেও পরিচয় করায়নি। কখনও নিজের কোনও আত্মীয়ের সঙ্গে জুনিয়রের পরিচয় করালেও আসল সম্পর্কের কথা প্রিয়াঙ্কা চেপে যেত বলেই অভিযোগ জুনিয়রের বাবা সমরেশ মৃধার।

সমরেশবাবু জানান, সিবিআই দফতরে গিয়ে প্রিয়াঙ্কার এক নিকটাত্মীয়ের স্ত্রীর সঙ্গে তাঁদের দেখা হয়েছিল। তিনি সমরেশবাবুদের জানান, বিভিন্ন পার্টিতে জুনিয়রকে তিনি দেখেছেন। তাঁর সঙ্গে প্রিয়াঙ্কা জুনিয়রের পরিচয় করিয়ে দিলেও আসল পরিচয় জানায়নি। তা হলে তার বিবাহিত পরিচয় ফাঁস হয়ে যেত। তবে গাড়িচালকের কাছ থেকে প্রিয়াঙ্কার শ্বশুরবাড়ির লোকেরা এই সম্পর্কের কথা জেনে গিয়েছিলেন। সমরেশবাবু বলেন, “সেই সময়ে যদি প্রিয়াঙ্কা আমার ছেলের সঙ্গে সম্পর্ক শেষ করে দিত, তা হলে ওকে বেঘোরে প্রাণটা দিতে হত না।”

শ্বেতাদেবী বলেন, “প্রিয়াঙ্কা ধনী বাড়ির মেয়ে বলেই জানতাম। তাই ভয় ছিল, বড়লোকের কখন কী খেয়াল হয়। ঘরের ছেলেটা হয়তো বিপদে পড়বে। তাই ওকে আমার ছেলের জীবন থেকে সরে যেতে বলেছিলাম। কিন্তু ও কিছুতেই মেনে নেয়নি।”

সেটা ছিল ২০১১ সালের গোড়ার দিক। শ্বেতাদেবী বলেন, “প্রিয়াঙ্কা যখন বাবির সঙ্গে সম্পর্কচ্ছেদ করল না, তখন আমি ওকে বলেছিলাম, আমার ছেলের সঙ্গে সম্পর্ক রাখতে হলে স্বামীর সঙ্গে বিচ্ছেদ করে ওই বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। তখন ওরা বিয়ের পরিকল্পনা করছিল। তখন আমি ওকে বলেছিলাম, আমার ছেলের পরিণতি শেষ পর্যন্ত রিজওয়ানুরের মতো হবে না তো?”

মর্গ থেকে যখন জুনিয়রের দেহ বাড়িতে আনা হয়, তখন প্রিয়াঙ্কাও সেখানে এসেছিল। শ্বেতাদেবী বলেন, “ওকে বললাম, বার বার বলেছিলাম তোকে। তার পরেও আমার ছেলেটাকে রিজওয়ানুর করে দিলি?”

Junior Mridha Priyanka Chowdhury Crime Murder CBI
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy