Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
Park Circus Firing

Park Circus Firing: ‘পুলিশে এমন লোক নেবেন না, যে মায়ের কোল খালি করে দেয়’

সন্ধ্যা পৌনে ৭টা নাগাদ হাওড়ার দাশনগরের ফকির মিস্ত্রি বাগান লেনের গলিতে মৃতদেহবাহী শকট ঢুকতেই চোখ ছলছল গোটা পাড়ার।

শোকার্ত: পাড়ায় রিমার দেহ ফিরতেই জমল ভিড়। শনিবার সন্ধ্যায়, হাওড়ায়।

শোকার্ত: পাড়ায় রিমার দেহ ফিরতেই জমল ভিড়। শনিবার সন্ধ্যায়, হাওড়ায়। নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১২ জুন ২০২২ ০৫:৪৩
Share: Save:

সন্ধ্যা পৌনে ৭টা নাগাদ হাওড়ার দাশনগরের ফকির মিস্ত্রি বাগান লেনের গলিতে মৃতদেহবাহী শকট ঢুকতেই চোখ ছলছল গোটা পাড়ার। দিদিকে দেখেই ডুকরে কেঁদে উঠলেন তরুণীর ভাই। মেয়ের নিথর দেহের সামনে পাথর হয়ে গিয়েছিলেন মা। পার্ক সার্কাসের লোয়ার রেঞ্জে পুলিশকর্মীর গুলিতে নিহত রিমা সিংহকে তখন শেষ শ্রদ্ধা জানাতে ভিড় জমে গিয়েছে সরু গলির মধ্যে। কান্নায় ভেঙে পড়তে দেখা যায় অনেককে। পাড়ার মন্দিরের সামনে রিমাকে আধ ঘণ্টা রেখে শেষকৃত্যের জন্য নিয়ে যাওয়া হয় শিবপুর শ্মশানে।

তার আগে শনিবার বেলায় দোতলার ভাড়ার ঘরে রিমার মা মীরা সিংহের সঙ্গে দেখা করতে আসেন কলকাতা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার অখিলেশ চতুর্বেদী এবং অতিরিক্ত কমিশনার, বর্তমানে হাওড়ার পুলিশ কমিশনার পদে স্থলাভিষিক্ত প্রবীণ ত্রিপাঠী। তাঁরা মুখ্যমন্ত্রীকে মোবাইলে মীরাদেবীর সঙ্গে কথা বলিয়ে দেন। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে টেলিফোনেই কাতর আবেদন জানান মীরাদেবী। তিনি ডুকরে বলে ওঠেন, ‘‘আপনারা পুলিশে এমন লোক নেবেন না, যে মায়ের কোল খালি করে দেয়।’’

এ দিন সকাল থেকেই মৃতার পরিবারকে সমবেদনা জানাতে বাড়িতে আসতে থাকেন পাড়া-প্রতিবেশী এবং এলাকার তৃণমূল নেতৃত্ব। আসেন স্থানীয় তৃণমূল বিধায়ক মনোজ তিওয়ারি। বেলা ১২টা নাগাদ সেখানে পৌঁছন কলকাতা পুলিশের দুই কর্তা। তাঁরা ওই তরুণীর বাবা-মা অরুণ এবং মীরা সিংহের হাতে পাঁচ লক্ষ টাকা তুলে দেন এবং তাঁদের ছেলে নগেন্দ্রকে হোমগার্ডের চাকরির প্রতিশ্রুতি দেন। তখনই প্রবীণ ত্রিপাঠী মুখ্যমন্ত্রীকে ফোন করে রিমার মায়ের সঙ্গে কথা বলানোর ব্যবস্থা করেন।

চোখের জল মুছতে মুছতে মীরাদেবী বলেন, ‘‘দিদির কাছে আমাদের কিছু চাইতে হয়নি, উনি নিজেই দিয়েছেন। বলেছেন, রাজ্য সরকার সব সময়ে আমাদের পাশে থাকবে। কিন্তু আমাদের মেয়েটাকে তো আর কেউ ফিরিয়ে দিতে পারবেন না!’’

সকালেই মেয়ের মৃতদেহ আনতে আত্মীয় ও প্রতিবেশীদের সঙ্গে কাঁটাপুকুর মর্গে গিয়েছিলেন অরুণবাবু। বাড়িতে তখন ছেলেকে নিয়ে একাই ছিলেন মীরাদেবী। দুপুর ৩টে নাগাদ তাঁদের সঙ্গে দেখা করতে আসেন রাজ্যের সমবায়মন্ত্রী তথা জেলা তৃণমূলের প্রাক্তন সভাপতি অরূপ রায়। তিনি রিমার বাবা অরুণবাবুর ব্যবসার জন্য একটি দোকানঘর দেখে দেওয়ার পাশাপাশি ওই পরিবারকে সব রকম সাহায্য করার জন্য স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্বকে নির্দেশ দিয়ে যান।

বিকেল থেকেই রিমাকে শেষ বার দেখতে বাড়ির গলিতে ভিড় জমতে শুরু করে। এলাকার প্রবীণ বাসিন্দা অনিমেষ বসুকে খানিকটা নিজের মনেই বিলাপ করতে শোনা গেল, ‘‘খুবই ভাল মেয়ে ছিল রিমা। অনেক কষ্ট করে সংসারটা চালাচ্ছিল। এই ভাবে একটা নিরীহ মেয়ের মৃত্যু কিছুতেই মেনে নিতে পারছি না।’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তেফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ

অন্য বিষয়গুলি:

Park Circus Firing Death
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE