Advertisement
E-Paper

ঘুমের মধ্যে পড়ে গিয়ে কোমায় রোগী

ঘুমের মধ্যে বিছানা থেকে পড়ে এক রোগিণী কোমায় চলে গিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠল। অভিযোগের তির টালিগঞ্জ সার্কুলার রোডের এক নার্সিংহোমের দিকে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০০:৫৪
নার্সিংহোমে ভেন্টিলেশনে সর্বাণী মজুমদার। নিজস্ব চিত্র

নার্সিংহোমে ভেন্টিলেশনে সর্বাণী মজুমদার। নিজস্ব চিত্র

ঘুমের মধ্যে বিছানা থেকে পড়ে এক রোগিণী কোমায় চলে গিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠল। অভিযোগের তির টালিগঞ্জ সার্কুলার রোডের এক নার্সিংহোমের দিকে। আয়া এবং নার্স থাকা সত্ত্বেও কী ভাবে রোগী বিছানা থেকে পড়ে যান, সেই প্রশ্ন তুলেছে তাঁর পরিবার। বেহালা থানায় ওই নার্সিংহোমের বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগ দায়ের করেছেন তাঁরা। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ অবশ্য বিষয়টি নিছক দুর্ঘটনা বলেই দাবি করেছেন।

পরিবার সূত্রের খবর, গত ৬ সেপ্টেম্বর রক্তাল্পতার সমস্যা নিয়ে টালিগঞ্জ সার্কুলার রোডের ওই নার্সিংহোমে ভর্তি করা হয় চেতলার বাসিন্দা, বছর চল্লিশের সর্বাণী মজুমদারকে। তাঁর হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কমে গিয়েছিল। রক্ত দেওয়ার পাশাপাশি শুরু হয় অন্য পরীক্ষা-নিরীক্ষা। সর্বাণীর পরিজনেরা জানিয়েছেন, শনিবার সকালে নার্সিংহোম থেকে ফোন করে বলা হয়, রোগীর অবস্থা সঙ্কটজনক। তাঁরা গিয়ে দেখেন, ভেন্টিলেশনে গভীর কোমায় রয়েছেন সর্বাণী।

পরিবারের সদস্যদের আরও অভিযোগ, তাঁরা নার্সিংহোমে পৌঁছে দেখেন, সর্বাণীর মাথায় চোট রয়েছে। মুখে রক্ত জমাট বেঁধে যাওয়ার মতো কালচে দাগ। কী ভাবে তাঁর এমন অবস্থা হল জানতে চাইলে নার্সিংহোমের তরফে প্রথমে বলা হয়, বাথরুমে যেতে গিয়ে পড়ে গিয়েছেন ওই রোগিণী। কিন্তু পরে সর্বাণীকে দেখভালের দায়িত্বে থাকা আয়ার কাছ থেকে বাড়ির লোকজন জানতে পারেন, সারা রাত তিনি ছটফট করেছিলেন। সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক প্রয়োজনীয় ওষুধ দিয়ে বেরিয়ে যাওয়ার কিছু ক্ষণ পরেই শয্যা থেকে পড়ে যান।

খোদ আয়ার মুখ থেকে এই কথা শুনেই ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন সর্বাণীর বাড়ির লোকজন। তাঁদের প্রশ্ন, এক জন রোগী ঘুমের মধ্যে বিছানা থেকে পড়ে গেলেন আর কর্তব্যরত আয়া বা নার্সের তা নজরে পড়ল না? রক্তাল্পতার সমস্যা নিয়ে ভর্তি হওয়া রোগী পড়ে গিয়ে কী ভাবেই বা কোমায় চলে যান? এর পরেই বেহালা থানায় নার্সিংহোমের বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগ আনেন তাঁরা।

যে চিকিৎসকের অধীনে সর্বাণীকে ভর্তি করা হয়েছিল, সেই অরিজিৎ রায়চৌধুরী অবশ্য এটি দুর্ঘটনা বলেই দাবি করছেন। তিনি জানান, ওই মহিলাকে ভর্তি করার সময়ে তাঁর হিমোগ্লোবিনের মাত্রা ছিল কম, অন্য দিকে বিলিরুবিনও ছিল খুব বেশি। পরীক্ষা করে দেখা যায়, তাঁর লিভারে জটিল সমস্যা রয়েছে। অরিজিৎবাবুর কথায়, এমন ক্ষেত্রে অনেক সময়ে শরীর থেকে রক্ত বেরিয়ে গেলেও বোঝা যায় না। তাই ঠিক হয়, প্রাথমিক ভাবে রক্ত দেওয়ার পাশাপাশি লিভারের সমস্যার কারণও খুঁজে বার করা হবে। কিন্তু এর মধ্যেই শনিবার ভোর থেকে রোগী খুব অস্থির হয়ে পড়েন।

ওই চিকিৎসকের দাবি, ‘‘শুক্রবার সারা রাত আমি নার্সিংহোমে ছিলাম। শনিবার ভোর সাড়ে চারটে নাগাদ ওই মহিলা খুব অস্থির হয়ে উঠলে আমি অসুবিধার কথা জানতে চাই। উনি বলেন, তিন দিন ঘুমোননি। কিন্তু ওঁর লিভারের সমস্যা থাকায় ঘুমের ওষুধও দেওয়া যায়নি। তা-ও ওঁকে পরীক্ষা করে যেটুকু ওষুধ দেওয়া সম্ভব, তা দিয়ে পৌনে ছ’টা নাগাদ নার্সিংহোম থেকে বেরোই। ৭টা নাগাদ আমাকে ফোন করে ঘটনার কথা জানানো হয়।’’

স্বভাবতই প্রশ্ন উঠেছে, রোগীর অবস্থা যদি এতই সঙ্কটজনক হবে, তা হলে তাঁকে আরও ভাল করে নজরে রাখা হল না কেন? কী ভাবে আয়ার সামনে তিনি প়ড়ে যান? এ প্রসঙ্গে অরিজিৎবাবুর বক্তব্য, ‘‘আমি ঘটনার সময়ে ছিলাম না। তাই ঠিক কী হয়েছে, বলতে পারব না। রোগী হয়তো কোনও ভাবে উঠতে গিয়ে পড়ে গিয়েছেন।’’ একই কথা বলেছেন আরোগ্য মেটারনিটি নার্সিংহোমের অধিকর্তা সুরেশ রাইও। তাঁর কথায়, ‘‘এটা দুর্ঘটনা ছাড়া কিছু নয়। ওই রোগীর অবস্থা এতই খারাপ ছিল যে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক সারা রাত থেকে ভোরবেলা বেরোন। তার পরে কোনও ভাবে আয়া এবং নার্সের নজর এড়িয়ে ওই মহিলা খাটের রেলিংয়ে ভর দিয়ে নামতে গিয়ে পড়ে যান।’’

Nursinghome Patient Coma
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy