Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪
Satyabala ID Hospital

সত্যবালায় যত্রতত্র পড়ে কোভিড বর্জ্য, আতঙ্ক

অভিযোগ, ওই বেসরকারি সংস্থা নিয়মিত কোভিড বর্জ্য সংগ্রহ না করায় হাসপাতালের কোভিড মেল ওয়ার্ডের নীচে একটি ফাঁকা জায়গাতেই সেগুলি পোড়ানো হচ্ছে।

দূষিত: সত্যবালা আই ডি হাসপাতাল চত্বরে ছড়িয়ে রয়েছে নানা রকমের কোভিড বর্জ্য। সোমবার। নিজস্ব চিত্র

দূষিত: সত্যবালা আই ডি হাসপাতাল চত্বরে ছড়িয়ে রয়েছে নানা রকমের কোভিড বর্জ্য। সোমবার। নিজস্ব চিত্র

দেবাশিস দাশ
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৮ অগস্ট ২০২০ ০২:৪০
Share: Save:

হাসপাতালের মূল দরজা দিয়ে ভিতরে ঢুকলে ডান দিকে সাজানো উদ্যান। সেখানেই চার দিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে রয়েছে ব্যবহৃত মাস্ক, গ্লাভস। হাসপাতালের পিছনের দিকেও প্রায় একই ছবি— স্তূপাকার হয়ে পড়ে পিপিই, মাস্ক, গ্লাভস-সহ নানা কোভিড সুরক্ষার সরঞ্জাম। হাসপাতালের যে ওয়ার্ডে রোগীরা ভর্তি রয়েছেন, তার ঠিক পিছনেই পড়ে হলুদ প্লাস্টিকে ভর্তি কোভিড বর্জ্য। আরও ভয়াবহ অবস্থা হাসপাতালের নিকাশি নালার। সেই নর্দমায় ভাসছে পিপিই-সহ বায়ো মেডিক্যাল বর্জ্য। অভিযোগ, নিকাশি নালা দীর্ঘদিন পরিষ্কার না করার কারণেই দিনের পর দিন সেখানেই জমছে কোভিড বর্জ্য।

এই ছবি হাওড়ার সত্যবালা আই ডি হাসপাতাল চত্বরের, যেটি বর্তমানে জেলার অন্যতম কোভিড হাসপাতাল এবং এই রাজ্যের দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ কোভিড চিকিৎসাকেন্দ্রও বটে। হাসপাতালটির ভিতরের দুরবস্থা দিয়ে নানা অভিযোগ প্রকাশ্যে আসার পরে সেখানকার ওয়ার্ডগুলির অবস্থা কিছুটা উন্নত হয়েছে। কিন্তু হাসপাতাল চত্বরের দুর্দশা এখনও যে কে সেই। এই অবস্থায় সেখান থেকেই সংক্রমণ ছড়ানোর আশঙ্কায় কাঁটা হয়ে আছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, হাসপাতালে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে থাকা কোভিড বর্জ্য যেমন সংক্রমণ ছড়ানোর আশঙ্কা বাড়াচ্ছে, তেমনই আর একটি ভয়াবহ ঘটনা চোখের ঘুম কেড়ে নিয়েছে তাঁদের। নিয়ম অনুযায়ী, হাওড়ার কোভিড হাসপাতালগুলিতে জমে থাকা কোভিড বর্জ্য হলুদ প্লাস্টিকে ভরে একটি বেসরকারি সংস্থার হাতে তুলে দেওয়ার কথা, যারা ওই বর্জ্য সংগ্রহের দায়িত্বে আছে। এর পরে সেই কোভিড বর্জ্য নির্দিষ্ট গাড়িতে করে আলাদা প্লান্টে নিয়ে গিয়ে পুড়িয়ে দেওয়ার কথা। কিন্তু অভিযোগ, ওই বেসরকারি সংস্থা নিয়মিত কোভিড বর্জ্য সংগ্রহ না করায় হাসপাতালের কোভিড মেল ওয়ার্ডের নীচে একটি ফাঁকা জায়গাতেই সেগুলি পোড়ানো হচ্ছে। আর সেই ধোঁয়া ছড়িয়ে পড়ছে কোভিড ওয়ার্ড-সহ আশপাশের এলাকায়।

আরও পড়ুন: হাসপাতাল চত্বরে বৃদ্ধের দেহ, ক্ষত খুবলে খেল কাক

এলাকার এক বাসিন্দা প্রদীপ পালের অভিযোগ, ‘‘হাসপাতালের যা পরিবেশ, তাতে সেখানে আসা সুস্থ মানুষও কোভিডে আক্রান্ত হয়ে যাবেন। সেই সঙ্গে ওখানেই ওই কোভিড বর্জ্য পোড়ানোয় আমরা আতঙ্কিত হয়ে পড়ছি। অবিলম্বে পোড়ানো বন্ধ করতে হবে।’’

কিন্তু এই কোভিড বর্জ্য হাসপাতালের বাইরে পড়ে থাকে কী করে? বিজয় চক্রবর্তী নামে হাসপাতালের এক কর্মী বলেন, ‘‘প্রতিদিন প্রচুর অ্যাম্বুল্যান্স রোগী নিয়ে হাসপাতালে আসে। সেই চালকেরাই তাঁদের ব্যবহৃত পিপিই-মাস্ক এ ভাবে যত্রতত্র ফেলে যাচ্ছেন।’’ একই বক্তব্য হাসপাতাল সুপার বিষ্ণুপদ বাগের। তিনি বলেন, ‘‘অ্যাম্বুল্যান্স চালকেরা আমাদের কথা শুনছেন না। বার বার বলা সত্ত্বেও ব্যবহৃত পিপিই-মাস্ক এ ভাবে ফেলে ছড়িয়ে যাচ্ছেন। তাই অনেক বর্জ্য জমে গেলে হাসপাতালের মধ্যেই তা পোড়ানো হচ্ছে। সেটা দেখছি কী করা যায়।’’

হাওড়ার জেলা স্বাস্থ্য দফতরের এক পদস্থ কর্তা বলেন, ‘‘নিয়মমতো কোভিড বর্জ্য সংগ্রহ করার দায়িত্ব দেওয়া আছে একটি বেসরকারি সংস্থাকে। তাদের এক দিন অন্তর কোভিড বর্জ্য ভর্তি হলুদ ব্যাগ এবং বাকি বর্জ্য তোলার কথা। কেন সেই কাজ হয়নি তা খোঁজ নিয়ে দেখছি। আর কোভিড বর্জ্য পোড়ানোর ব্যাপারে সুপারের সঙ্গে কথা বলব।’’

(জরুরি ঘোষণা: কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের জন্য কয়েকটি বিশেষ হেল্পলাইন চালু করেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। এই হেল্পলাইন নম্বরগুলিতে ফোন করলে অ্যাম্বুল্যান্স বা টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত পরিষেবা নিয়ে সহায়তা মিলবে। পাশাপাশি থাকছে একটি সার্বিক হেল্পলাইন নম্বরও।

• সার্বিক হেল্পলাইন নম্বর: ১৮০০ ৩১৩ ৪৪৪ ২২২
• টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-২৩৫৭৬০০১
• কোভিড-১৯ আক্রান্তদের অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবা সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-৪০৯০২৯২৯)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE