Advertisement
E-Paper

আড়াই গুণ বেশি ফাঁক গলে দুর্ঘটনা চলছেই

প্ল্যাটফর্ম এবং ট্রেনের পাদানির মাঝের এই মরণ ফাঁদ অবশ্য শুধু নুঙ্গি স্টেশনে নয়, শিয়ালদহ শাখার উত্তর এবং দক্ষিণের একাধিক স্টেশনেই রয়েছে। এর জেরে লোকাল ট্রেনে নামা-ওঠা করতে গিয়ে বারবার দুর্ঘটনাও ঘটেছে।

ফিরোজ ইসলাম

শেষ আপডেট: ১৩ জুলাই ২০১৯ ০১:৫৬
এমনই ফাঁক (চিহ্নিত লাল তির) ডেকে আনছে বিপদ। নিজস্ব চিত্র

এমনই ফাঁক (চিহ্নিত লাল তির) ডেকে আনছে বিপদ। নিজস্ব চিত্র

বাড়ি থেকে খানিকটা দূরে নুঙ্গি স্টেশন এলাকায় একটি অনুষ্ঠানে গিয়েছিল বছর সতেরোর এক কিশোরী। সন্ধ্যায় পরিবারের সঙ্গে ফেরার পথে ট্রেন ও প্ল্যাটফর্মের মাঝের ফাঁক দিয়ে পড়ে মৃত্যু হয় তার। ১০ জুনের ওই ঘটনার পরেই ক্ষুব্ধ জনতা সন্ধ্যা ৭টা থেকে ঘণ্টা দু’য়েক অবরোধ করেন। রেল কর্তৃপক্ষ সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দিলে অবরোধ ওঠে। যদিও রেলের আশ্বাসে ভরসা নেই বলেই জানাচ্ছেন স্থানীয়েরা। কারণ, গত এক বছরে ওই স্টেশনে তিনটি বড় দুর্ঘটনা ঘটেছে। তাতে দু’জনের কাটা পড়ে মৃত্যু এবং এক জন গুরুতর আহত হন। তার পরেও একই ছবি রয়ে গিয়েছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।

প্ল্যাটফর্ম এবং ট্রেনের পাদানির মাঝের এই মরণ ফাঁদ অবশ্য শুধু নুঙ্গি স্টেশনে নয়, শিয়ালদহ শাখার উত্তর এবং দক্ষিণের একাধিক স্টেশনেই রয়েছে। এর জেরে লোকাল ট্রেনে নামা-ওঠা করতে গিয়ে বারবার দুর্ঘটনাও ঘটেছে। কখনও মৃত্যু, কখনও বা অঙ্গহানির মতো ঘটনাও ঘটে। তবু পরিস্থিতি বদলাতে সে ভাবে উদ্যোগী হননি কর্তৃপক্ষ।

রেল সূত্রের খবর, সাধারণ ভাবে ট্রেনের পাদানি এবং প্ল্যাটফর্মের দূরত্ব ১৫ সেন্টিমিটারের কম থাকা বাঞ্ছনীয়। নুঙ্গি স্টেশনের হকার এবং যাত্রীদের অভিযোগ, “সেখানে এই দূরত্ব তার প্রায় আড়াই গুণ বেশি। ফলে তাড়াহুড়ো করে ট্রেনে উঠতে-নামতে গিয়ে অনেকেই দুর্ঘটনায় পড়েন। তবে সমস্যা বেশি হয় বয়স্ক, শিশু এবং মহিলাদের ক্ষেত্রে।”

কেন এ ভাবে প্ল্যাটফর্ম নিচু হয়?

রেল কর্তাদের মতে, রেললাইন বসে যাওয়া রুখতে নিয়মিত পাথর ফেলতে হয়। মাটি বা অন্য জিনিস পাথরের সঙ্গে মিশলে রেললাইনের স্বাস্থ্য ধরে রাখতে পাথর থেকে তা আলাদা করতে হয়। রেলের পরিভাষায় একে ‘ব্যালাস্ট ক্লিনিং’ বলে। নিয়মিত আনুষঙ্গিক জিনিস পরিষ্কার করা হলেও পাথর লাইনে ফেলতেই হয়। এর ফলেই মূলত রেললাইনের উচ্চতা বাড়তে থাকে। তবে সেই অনুপাতে প্ল্যাটফর্মের উচ্চতা বাড়ানোও জরুরি। কিন্তু অর্থ বরাদ্দ না থাকায় প্রায়ই ওই কাজে ফাঁক পড়ে। রেল সূত্রের খবর, গত বাজেট থেকে শিয়ালদহ শাখার বিভিন্ন স্টেশনে প্ল্যাটফর্মের উচ্চতা বৃদ্ধির জন্য অর্থ বরাদ্দ হয়েছে। বেশ কিছু প্ল্যাটফর্মে সে কাজ ইতিমধ্যেই হয়েছে।

শিয়ালদহ-বজবজ শাখায় সারাদিনে ৬০টির মতো ট্রেন চলে। নুঙ্গি থেকে প্রতিদিন কয়েক হাজার যাত্রী ওঠা-নামা করেন। স্টেশনের তিনটি প্ল্যাটফর্মের মধ্যে মূলত এক এবং দুই নম্বর প্ল্যাটফর্ম দিয়েই বেশি ট্রেন যায়। অথচ এই দু’টি প্ল্যাটফর্ম বেশি নিচু বলে দাবি স্থানীয়দের। যাত্রীদের অভিযোগ, “স্টেশনে জল, আলো, শৌচাগার-সহ যাত্রী স্বাচ্ছন্দ্যের অন্যান্য পরিকাঠামো বেশ খারাপ।” স্থানীয় ব্যবসায়ী এবং যাত্রীরা এ সবের জন্য রেলের গড়িমসিকেই দায়ী করেছেন।

এ প্রসঙ্গে পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক, নিখিল চক্রবর্তী বলেন, ‘‘শিয়ালদহ শাখায় নিচু প্ল্যাটফর্মগুলির উচ্চতা বাড়ানোর কাজ করা হচ্ছে। নুঙ্গি স্টেশনও ওই তালিকায় রয়েছে।’’ রেল সূত্রের খবর, ওই স্টেশনের এক এবং দু’নম্বর প্ল্যাটফর্মের উচ্চতা বৃদ্ধির কাজ করার পরিকল্পনা রয়েছে রেলের। তবে কবে সে কাজ শুরু হবে, তা নির্দিষ্ট করে বলতে পারছেন না কেউই। তত দিন ঝুঁকি নিয়ে ট্রেনে ওঠানামাই ভবিতব্য যাত্রীদের।

Train Platform Accident Nangi Station
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy