Advertisement
০৯ ডিসেম্বর ২০২৪

গতি-বিধির পরোয়া নেই, বেলাগাম দৌড় বাইপাসে

গতি মাপা চলছে একের পর এক গাড়ির। স্পিড ক্যামেরায় কিছু ক্ষণ চোখ রাখতেই পরপর ফুটে উঠল ৭৯, ৯৮, ৬৬, ৯৮, ৮৮, ৯৪, ৯০। গতির এই পরিসংখ্যান কোনও রেসিং ট্র্যাকের নয়।

তীব্র বেগে: গতিসীমা বাঁধা ঘণ্টায় ৫০ কিলোমিটারে। কিন্তু স্পিড ক্যামেরায় ধরা পড়ল মোটরবাইক ছুটছে ৯০ কিলোমিটার গতিতে। শুক্রবার রাতে, ইস্টার্ন মেট্রোপলিটন বাইপাসে। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী

তীব্র বেগে: গতিসীমা বাঁধা ঘণ্টায় ৫০ কিলোমিটারে। কিন্তু স্পিড ক্যামেরায় ধরা পড়ল মোটরবাইক ছুটছে ৯০ কিলোমিটার গতিতে। শুক্রবার রাতে, ইস্টার্ন মেট্রোপলিটন বাইপাসে। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী

আর্যভট্ট খান
শেষ আপডেট: ০২ ডিসেম্বর ২০১৮ ০১:০০
Share: Save:

গতি মাপা চলছে একের পর এক গাড়ির। স্পিড ক্যামেরায় কিছু ক্ষণ চোখ রাখতেই পরপর ফুটে উঠল ৭৯, ৯৮, ৬৬, ৯৮, ৮৮, ৯৪, ৯০। গতির এই পরিসংখ্যান কোনও রেসিং ট্র্যাকের নয়। ইস্টার্ন মেট্রোপলিটন বাইপাস ধরে ছুটে চলা গাড়ির। শুক্রবার রাত ১১টা ২০ থেকে শুরু করে সাড়ে ১২টা পর্যন্ত বাইপাসের বিভিন্ন জায়গায় রাখা স্পিড ক্যামেরাতেই ধরা পড়েছে গাড়ির এই গতি। পুলিশ জানিয়েছে, বাইপাসে ছোট গাড়ির ক্ষেত্রে গতিসীমা হল ঘণ্টায় ৬০ কিলোমিটার। বাস, ট্রাক ও মোটরবাইকের ক্ষেত্রে যা ঘণ্টায় ৫০ কিলোমিটার।

রাত ১১টা ২০। বাইপাসের উপরে এক নির্মীয়মাণ মেট্রো স্টেশনের কাছেই রয়েছে একটি স্পিড ক্যামেরা। সেখানে মিনিট পনেরো দাঁড়িয়ে দেখা গেল, সামনের সিগন্যালে আলো লাল হলে একমাত্র তখনই থামতে বাধ্য হচ্ছে গাড়িগুলি। কিন্তু সেই আলো সবুজ হলেই শুরু হয়ে যাচ্ছে গতির প্রতিযোগিতা। এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, মোড়ের মাথায় যেখানে গাড়ি আস্তে চলার কথা, সেখানেও গতি কমাচ্ছেন না অনেকে। গাড়ির পাশাপাশি গতির ঝড় তুলে ছুটে যাচ্ছিল একের পর এক মোটরবাইকও। কারও গতি ৮০, তো কারও ৯০।

রাত ১১টা ৪৫। চিংড়িঘাটা মোড় থেকে একটু এগিয়ে সায়েন্স সিটির আগে রয়েছে আর একটি স্পিড ক্যামেরা। ওই অংশে কোনও সিগন্যাল না থাকায় আরও বেলাগাম হয়ে উঠছে গাড়ির গতি। ঘণ্টায় ৮৮ কিলোমিটার গতিতে ঝড় তুলে বেরিয়ে গেল একটি বড় গাড়ি। খালি চোখে দেখে মনে হল, স্পিড ক্যামেরা দেখেই বোধহয় গাড়ির চালক সর্তক হয়ে গতি সামান্য কম করলেন। ক্যামেরার নজর পেরিয়ে যেতেই গাড়ির গতি ফের বেড়ে গেল। মিনিট কুড়ি সেখানে দাঁড়িয়ে দেখা গেল, স্পিড ক্যামেরার আলো মাঝেমধ্যেই জ্বলে উঠছে। টহলদার এক পুলিশ অফিসার মোটরবাইক নিয়ে যাচ্ছিলেন। তিনি বললেন, ‘‘স্পিড ক্যামেরার আলো জ্বলা মানেই নিয়ম ভাঙা গাড়ির ছবি উঠছে এবং তাকে জরিমানাও করা হচ্ছে। এ ভাবে প্রতিদিন প্রচুর জরিমানা জমা হচ্ছে।’’

কিন্তু তাতে আখেরে কোনও লাভ হচ্ছে কি? গাড়িচালকেরা তো অকুতোভয়। অধিকাংশই গতির

সীমা মানছেন না। কেউ প্রথম বার গতির সীমা লঙ্ঘন করলে জরিমানা হয় ৩০০ টাকা। তার পরে ফের

একই অপরাধ করলে জরিমানার পরিমাণ কিছুটা বাড়ে। অভিযোগ, গতির সীমা লঙ্ঘন করে গাড়ি চালানোর জন্য জরিমানা এতটাই কম যে, তা নিয়ে অনেক চালকই মাথা ঘামাতে চান না।

রাত ১২টা ৫। সায়েন্স সিটি থেকে এগিয়ে বি আর অম্বেডকর সেতুর কাছেই রয়েছে আর একটি স্পিড ক্যামেরা। রাত যত বাড়ছে, বাইপাসে গাড়ির গতিও ততই যেন বাড়ছে। ওই সেতুর দিকে তাকিয়ে মনে হল, গাড়ির প্রতিযোগিতা চলছে। তাদের গতি মাঝেমধ্যেই ঢুকে পড়ছিল

নব্বইয়ের ঘরে। আরও কিছুটা এগিয়ে দেখা গেল, বাইপাসের কালিকাপুরের কাছে একটি পানশালার সামনে রাস্তার উপরেই গাড়ি রাখা হয়েছে বিপজ্জনক ভাবে। যে কোনও সময়ে ঘটতে পারে দুর্ঘটনা।

লালবাজারের ট্র্যাফিক-কর্তাদের দাবি, গোটা বাইপাস জুড়ে গাড়ির গতি কম করার জন্য স্পিড ক্যামেরা ছাড়াও রয়েছে সিসি ক্যামেরা। এ ছাড়া, টহলদার পুলিশ তো আছেই। যদিও তাতে বাইপাসের গতি যে কমছে না, তা স্পিড ক্যামেরার পরিসংখ্যানই বলে দিচ্ছে। লালবাজারে ট্র্যাফিক পুলিশের এক কর্তা বলেন, ‘‘বাইপাসে গাড়ির গতি বাঁধতে আরও কিছু স্পিড ক্যামেরা বসানো হবে। টহলদারিও বাড়ানো হবে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Speed Limit EM Bypass Reckless
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy