পথে মৃতদের পরিজনেরা। — নিজস্ব চিত্র
পথ হাঁটছেন একাশি বছরের বৃদ্ধ। দড়িতে বেঁধে গলায় ঝুলছে প্রয়াত বড় ছেলের ছবি। পাশেই বিমানবন্দরের ১ নম্বর গেটের বাসিন্দা এক প্রৌঢ়ার হাতের ধরা প্ল্যাকার্ডে তাঁর একমাত্র মেয়ে তনুশ্রীর ছবি। মাস কয়েক আগেই সন্তানের জন্ম দিতে গিয়ে যাঁর মৃত্যু হয়েছে। হাতের মুঠোয় মৃতা স্ত্রীর ছবি আঁকড়ে মেট্রোপলিটনের বাসিন্দা এক যুবক। পাশাপাশি এঁদের মতোই আরও অনেকে।
ওঁরা প্রত্যেকেই প্রিয়জনকে হারিয়েছেন এবং অভিযোগ তুলছেন চিকিৎসায় গাফিলতির। বিচার চেয়ে মেডিক্যাল কাউন্সিল বা ক্রেতাসুরক্ষা আদালতে ধর্না দেওয়া চলেছে। কেউ সুবিচারের অপেক্ষায় রয়েছেন তিন বছর, কারও আবার দিন গুনতে-গুনতে তেরো বছর পার। বৃহস্পতিবারের কলকাতায় ওঁরাই একসঙ্গে পথে নামলেন বিচারের দাবিতে। প্রশ্ন তুললেন— বিচার প্রক্রিয়ায় এত দীর্ঘসূত্রতা কেন? কেন বছরের পর বছর অভিযোগ পড়ে থাকে মেডিক্যাল কাউন্সিলের কাছে, শুনানিই হয় না? কেনই বা চিকিৎসায় গাফিলতির মামলা করার জন্য অভিযুক্ত হাসপাতাল থেকে কাগজপত্র বার করতে জেরবার হতে হবে? কেন থাকবে না সরল কোনও ব্যবস্থা? কেন থাকবে না ফাস্ট ট্র্যাক কোর্টের মতো কোনও উপায়?
এ বছরের ৩০ জুলাই আচমকা কোমর ও পায়ে যন্ত্রণা শুরু হয়েছিল বছর বত্রিশের অনিন্দিতা ভট্টাচার্যের। বাইপাসের ধারের এক হাসপাতালে ভর্তির পরে ১ অগস্ট তাঁর মৃত্যু হয়। স্বামী শিবাজির অভিযোগ, ‘‘সমস্যাটা যে কিডনিতে ছিল, তা বুঝতেই সময় নিয়ে নিলেন চিকিৎসকেরা। কখনও স্নায়ুর, কখনও হাড়ের চিকিৎসা করলেন। আর আমার ২ বছর আর ৯ বছরের দুই মেয়ে এনিকা আর উরভি-র মা হারিয়ে গেল চিরকালের মতো।’’
মুক্তারামবাবু স্ট্রিটের ব্যবসায়ী একাশি বছরের ছেদিলাল পোদ্দারের বড় ছেলে ৫১ বছরের সঞ্জয় পোদ্দার মারা গিয়েছেন গত ৭ সেপ্টেম্বর। ছেদিলালের অভিযোগ, হিমোগ্লোবিন সাড়ে ৫ এবং প্লেটলেট ২১ হাজার থাকা সত্ত্বেও মধ্য কলকাতার এক নার্সিংহোম তাঁর ছেলের বুকে স্টেন্ট বসিয়েছিল। ৫৫ দিন আইসিইউয়ে থাকার পরে সঞ্জয়ের মৃত্যু হয়।
ভিড়ের মধ্যে চুপ করে দাঁড়িয়েছিলেন বাঙুর অ্যাভিনিউয়ের বাসিন্দা সত্তরোর্ধ্ব সুব্রত দত্তচৌধুরী। ছেলে তীর্থঙ্কর দত্তচৌধুরী মারা গিয়েছেন ২০১১ সালের ৮ মে। সুব্রতবাবুর অভিযোগ, তীর্থঙ্করের কিডনি ক্যানসার হয়েছে বুঝতেই ডাক্তারেরা দু’মাস সময় নিয়ে নেন। তাতে রোগ বেড়ে যায়। মারা যান ৩১ বছরের তীর্থঙ্কর। রাজ্য মেডিক্যাল কাউন্সিলে পাঁচ বছর মামলা চলার পরে গত ২৩ ডিসেম্বর প্রথম বার কাউন্সিলের সামনে ডাক পেয়েছিলেন সুব্রতবাবু। হাঁটতে-হাঁটতেই হতাশ গলায় বললেন, ‘‘এই যদি বিচারের গতি হয়, তা হলে ধরে নিতে হবে আমাদের মতো মানুষদের সামনেটা পুরোটাই অন্ধকার।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy