Advertisement
E-Paper

সচেতনতা নেই, শহরে উন্মুক্ত শৌচ অব্যাহত 

ফুটপাতে পরিবার নিয়ে থাকা মোটবাহকদের গভীর রাতে মল-মূত্র ত্যাগের একমাত্র ভরসা স্ট্র্যান্ড রোড সংলগ্ন চক্ররেলের লাইনের পাশের ঝোপ কিংবা গঙ্গার পাড়। নয়তো তাঁরা বেছে নেন রাস্তার কোনও ঘুপচি জায়গা। 

শান্তনু ঘোষ

শেষ আপডেট: ০৯ মার্চ ২০২০ ০৯:০০
জলবিয়োগ: ধর্মতলার সরকারি বাসস্ট্যান্ডে। নিজস্ব চিত্র

জলবিয়োগ: ধর্মতলার সরকারি বাসস্ট্যান্ডে। নিজস্ব চিত্র

‘গভীর রাতে আর যাব কোথায়? তাই রেললাইন, গঙ্গার ধারই ভরসা!’

নির্দ্বিধায় জানালেন স্ট্র্যান্ড রোডের ফুটপাতে ঘুপচি প্লাস্টিকের ঘরের বাসিন্দা মহম্মদ দুলাল। বিহারের সীতামারির বাসিন্দা বছর পঞ্চাশের ওই ব্যক্তির দাবি, তিনি একা নন, ফুটপাতে পরিবার নিয়ে থাকা মোটবাহকদের গভীর রাতে মল-মূত্র ত্যাগের একমাত্র ভরসা স্ট্র্যান্ড রোড সংলগ্ন চক্ররেলের লাইনের পাশের ঝোপ কিংবা গঙ্গার পাড়। নয়তো তাঁরা বেছে নেন রাস্তার কোনও ঘুপচি জায়গা।

শুধু স্ট্র্যান্ড রোডই নয়। শোভাবাজার এলাকার ফুটপাতের বাসিন্দা এক মহিলাকেও দেখা গেল তাঁর একরত্তি শিশুকে রাস্তার ধারেই মলত্যাগ করাতে বসিয়েছেন। ফুটপাতবাসী ওই মহিলার দাবি, ‘‘পাশেই তো নর্দমার গর্ত রয়েছে। জল ঢেলে দিলেই তো হল।’’ এ হেন খণ্ড চিত্রগুলিই বুঝিয়ে দিচ্ছে শহর এখনও উন্মুক্ত শৌচ থেকে পুরোপুরি মুক্ত নয়।

এর জন্য শহরের বাইরে থেকে আসা মানুষের অনভ্যাসকেই দায়ী করছেন কলকাতা পুরসভার ডেপুটি মেয়র অতীন ঘোষ। তিনি জানান, ২০১১ সালের জনগণনা অনুযায়ী, প্রতিদিন ৬০ লক্ষ লোক সকাল থেকে রাত পর্যন্ত শহরে আসেন। তাঁদের অনেকেই রাস্তার ধারে থাকা শৌচালয় ব্যবহারে অভ্যস্ত নন। অতীনের কথায়, ‘‘ভিন্‌ রাজ্য থেকে বহু মানুষ এ শহরে এসে থাকছেন। বসবাসের জায়গার ১০০-২০০ মিটারের মধ্যে শৌচালয় থাকলেও তাঁরা সেখানে যান না। তবে কলকাতায় উন্মুক্ত শৌচ আগের থেকে অনেক কমেছে।’’

কিন্তু বাস্তব চিত্র বলছে, শহরে এখনও উন্মুক্ত শৌচ বন্ধ হয়নি। উত্তর থেকে দক্ষিণের ফুটপাতবাসীদের অনেকেই জানান, রাস্তার শুল্ক শৌচালয়গুলি (পে অ্যান্ড ইউজ) রাতে বন্ধ থাকে। অগত্যা রাতে প্রাকৃতিক কাজ সারার প্রয়োজন হলে রাস্তা, নদীর ধার কিংবা কোনও ঘুপচি জায়গাই তাঁদের একমাত্র ভরসা। যদিও অতীনের আরও দাবি, ফুটপাতবাসী ও ভবঘুরেদের রাত কাটানোর জন্য শহরের অনেক জায়গাতেই নৈশাবাস তৈরি হয়েছে। সেখানে পর্যাপ্ত শৌচালয়ও রয়েছে। এ ছাড়াও শহরের প্রতিটি ওয়ার্ডে, রাস্তার ধারে পর্যাপ্ত শুল্ক শৌচালয় রয়েছে। যেগুলি ব্যবহার করতে কোনও টাকা দিতে হয় না।

শহরে প্রতিদিন আসা-যাওয়া করা লোকজনের বড় অংশও রাস্তায় প্রস্রাব করেন। অভিযোগ, শহরের প্রাণকেন্দ্র ধর্মতলা চত্বর থেকে শুরু করে উত্তর ও দক্ষিণ প্রান্তে এমন অনেক জায়গা, বাজার, গলি রয়েছে যেখানে প্রস্রাবের কটু গন্ধে হাঁটাচলা করা দায়। যেমন, ধর্মতলায় সিটিসি বাসস্ট্যান্ড চত্বরের ঝোপ, এমনকি ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো প্রকল্পের সীমানা প্রাচীরের গায়ে তৈরি হয়েছে গণ প্রস্রাবাগার। আবার মনোহর দাস তড়াগ সংলগ্ন ফুটপাতে, মেট্রোর জলাধারের সামনে বেশ কয়েকটি বালতি ছড়ানো কেন জানতে চাইলে দোকানি শিবকুমার জানান, রাতে ওই জায়গা-ই ফুটপাতবাসীদের শৌচালয়ে পরিণত হয়।

শহরের রাস্তার প্রকাশ্যে শৌচের অভিযোগ দীর্ঘদিনের। ল্যান্সডাউন থেকে কিছুটা এগিয়ে রাস্তার ধারে প্রকাশ্যে প্রস্রাব করার ‘অপরাধ’-এ এক পথচারীকে কঞ্চি দিয়ে মেরেছিলেন তৎকালীন কলকাতার মেয়র সুব্রত মুখোপাধ্যায়। তাঁর কথায়, ‘‘সেই সময়ে গাড়িতে আমার সঙ্গে স্ত্রী-ও ছিলেন। ঘটনায় তিনি খুব রাগ করেন। পরে আমিও গুরুত্ব দিয়ে ভেবে দেখি পথচলতি কোনও অসুস্থ মানুষের আচমকা যদি শৌচের প্রয়োজন হয় তা হলে তিনি যাবেন কোথায়?’’ এর পরেই শহর জুড়ে সমীক্ষা চালিয়ে সাড়ে পাঁচ হাজার শুল্ক শৌচালয় বানানোর পরিকল্পনা করা হয় বলে জানান সুব্রতবাবু।

তিনি বলেন, ‘‘শৌচালয়গুলি দেখভালের দায়িত্ব বেসরকারি সংস্থাকে দেওয়ার পরিকল্পনা হয়। সেই সময় ২১০০ মতো শৌচালয় তৈরির পরে আমার মেয়র পদের মেয়াদ শেষ হয়ে যায়। তবে যতগুলি শুল্ক শৌচালয় তৈরি হয়েছিল সেগুলি পরে আর ঠিক মতো রক্ষণাবেক্ষণ হয়নি।’’

Kolkata Defecation
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy