Advertisement
০৩ মে ২০২৪

স্লোগানের সাগরে ভেসে কলেজে এলেন বিদ্যাসাগর

খোলা গাড়িতে শো-কেস বন্দি আবক্ষ মূর্তি-সহ মিছিলটা কিছু দূর এগোতেই ফুটপাতের জটলার ভাবগতিক অন্য রকম ঠেকছিল। মৃদু গুঞ্জনের স্বর কানে ঢুকতে না-ঢুকতেই মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গীরা গলার শির ফুলিয়ে কার্যত চিল-চিৎকার করে উঠলেন।

মন দিয়ে...: হেয়ার স্কুলের মাঠের অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মঙ্গলবার। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক

মন দিয়ে...: হেয়ার স্কুলের মাঠের অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মঙ্গলবার। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১২ জুন ২০১৯ ০৩:২৭
Share: Save:

জীবদ্দশায় এমন স্লোগান শোনার সুযোগ কখনও হয়নি তাঁর!

জীবনের কাজের গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র, কলকাতার সাবেক গোলদিঘি তল্লাট থেকে তৎকালীন কর্নওয়ালিস স্ট্রিটের দিকে বহু বার হেঁটে গিয়েছেন বিদ্যাসাগর। সেই সরণি ধরে বিদ্যাসাগর মূর্তির ‘মোটর-ভ্রমণ পর্ব’ কিন্তু মঙ্গলবার বিচিত্র স্লোগানের কলরোলে ভরে উঠল।

হেয়ার স্কুলে সরকারি অনুষ্ঠানে জাতীয় সঙ্গীতের শেষে শোনা গিয়েছে ‘জয় হিন্দ’ এবং ‘জয় বাংলা’। তবে মুখ্যমন্ত্রীকে উত্ত্যক্ত করতে তাঁর অপছন্দের ‘রাজনৈতিক স্লোগান’ কেউ দিতে পারেন ভেবেও পুলিশমহলে চাপা আশঙ্কা ছিল। বাঙালির জাতীয় গরিমার প্রতীক বিদ্যাসাগরমশাইয়ের সঙ্গে খাপ খায় না এমন কোনও ‘অনভিপ্রেত’ শব্দ চাপা দিতেই মুখ্যমন্ত্রীর ঠিক করা জোড়া স্লোগান বারবার গোটা তল্লাট কাঁপিয়ে তুলেছে।

অদূরে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের আশুতোষ ভবনে ইংরেজি এমএ দ্বিতীয় বর্ষের পরীক্ষা চলছিল। কোথাও পরীক্ষা চলছে, কোথাও সবে শেষ। গোলমালের আশঙ্কায় সব পড়ুয়া না-এলেও হিন্দু-হেয়ার স্কুলে ক্লাস ছিল নির্ধারিত রুটিন মেনে। তবু খোলা গলার শব্দব্রহ্মই গোটা এলাকার ‘দখল’ নিল। ‘জয়ধ্বনি’ দিতে দিতে বিদ্যাসাগর কলেজমুখী হল মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গী আবেগতাড়িত জনতা।

খোলা গাড়িতে শো-কেস বন্দি আবক্ষ মূর্তি-সহ মিছিলটা কিছু দূর এগোতেই ফুটপাতের জটলার ভাবগতিক অন্য রকম ঠেকছিল। মৃদু গুঞ্জনের স্বর কানে ঢুকতে না-ঢুকতেই মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গীরা গলার শির ফুলিয়ে কার্যত চিল-চিৎকার করে উঠলেন। কেউ বলছেন, ‘জয় হিন্দ’, তো কেউ ‘জয় বাংলা’! বিদ্যাসাগরের তিরোধানের বেশ কয়েক দশক পরের দু’টি স্লোগান— উপমহাদেশের ইতিহাসের দু’টি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়ের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে। বাঙালির ‘ঐতিহ্য রক্ষা’র মিছিল বা কয়েক দিন আগে এই চত্বরে বিজেপির অমিত শাহের রোড শোয়ের ‘জবাবি’ মিছিল, সেই ঐতিহাসিক স্লোগান দু’টিই প্রাণপণে আঁকড়ে থাকল।

তবে হিন্দু স্কুলের প্রধান শিক্ষক শুভ্রজিৎ দত্তের দাবি, ‘‘রাস্তায় মাইক জোরে না বাজায় ছাত্রদের ক্লাসে অসুবিধা হয়নি। মাইক চললে ট্রামরাস্তার দিকের ক্লাস বন্ধ করে দিতে হত, তেমন পরিস্থিতিও হয়নি।’’ হেয়ার স্কুলের ভিতরে বিদ্যাসাগর মূর্তির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন সেরে বিদগ্ধজনদের নিয়ে বিদ্যাসাগর কলেজের দিকে রওনা দেয় মিছিল। হেয়ার স্কুলের প্রধান শিক্ষক সুনীল দাসের দাবি, ‘‘অনুষ্ঠানের জন্য ছাত্রদের মধ্যে ১০০ জনকে স্বেচ্ছাসেবক রাখতে হয়েছিল। তবে ক্লাস ঠিক মতো হয়েছে।’’ ওই চত্বরে স্কুলগুলির পুলকার এ দিন রাস্তায় দাঁড় করাতে দেয়নি পুলিশ। ফলে, ছাত্র কিছু কম এসেছে। হিন্দু স্কুলে যেমন সপ্তম শ্রেণির দু’টি বিভাগকে একসঙ্গে ক্লাস করানো হয়। কয়েক জন অভিভাবকের অভিজ্ঞতা, একই দিনে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে এমএ পরীক্ষা থাকায় খানিক উদ্বেগ ছিল। অনেককেই হাতে বাড়তি সময় নিয়ে পরীক্ষা দিতে আসতে হয়েছে।

সব মিলিয়ে মিছিল চলার সময়টুকু ছাড়া কলেজ স্ট্রিটে যান চলাচল বন্ধ করা হয়নি। তবে বেলা দেড়টা থেকে খানিক ক্ষণ মহাত্মা গাঁধী রোডে গাড়ি চলাচল বন্ধ ছিল। কলেজ স্ট্রিট ধরে উত্তরমুখী গাড়িও সূর্য সেন স্ট্রিট ধরে ঘুরিয়ে দেওয়া হয়। কিছুটা সময় বইপাড়া-কফি হাউসের সেই চেনা ভিড়টাও তত দেখা যায়নি সপ্তাহের কেজো সরগরম দুপুরে।

একাধিক স্কুল-কলেজে ঠাসা শহরের সারস্বত চর্চার গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে রাজনীতির হট্টগোল এড়াতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই ১৪৪ ধারা ঘোষণা করেছিলেন। এ যাত্রা সেই বিধি কেন শিথিল করা হল? লালবাজারের এক কর্তা বলেন, ‘‘কখন এই ধারা শিথিল করা যাবে, তার অধিকার কলকাতার পুলিশ কমিশনারের রয়েছে। ভোটের আগে অমিত শাহের রোড শোয়ের সময়েও ১৪৪ ধারা তুলে নেওয়া হয়। এ দিন ১৪৪ ধারা শিথিল করার জন্য শিক্ষা দফতরের তরফে সিপি-র কাছে অনুমতি চাওয়া হয়েছিল।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Vidyasagar Statue Mamata Banerjee Hare School
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE