Advertisement
E-Paper

করোনা লড়াই উধাও, শহর জুড়ে শুধুই শব্দ-উৎসব

এর আগে জনতা কার্ফুর দিনেও ছোঁয়াচ বাঁচাতে সামাজিক দূরত্ব বজায় না রেখেই রাস্তায় বেরিয়ে দল বেঁধে শব্দবাজি ফাটানোর অভিযোগ উঠেছিল।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৬ এপ্রিল ২০২০ ০৩:৪৯
 উল্লাস: মোমবাতি জ্বালানোর পরিবর্তে বাগুইআটির একটি বাড়ির ছাদে পোড়ানো হল আতসবাজি। রবিবার। ছবি: সুমন বল্লভ

উল্লাস: মোমবাতি জ্বালানোর পরিবর্তে বাগুইআটির একটি বাড়ির ছাদে পোড়ানো হল আতসবাজি। রবিবার। ছবি: সুমন বল্লভ

করোনার মতো মারণ ভাইরাসের সঙ্গে লড়াই করছে দেশ না কি কালীপুজোর মরসুম চলছে? প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ ছিল, ঘরের আলো নিভিয়ে মোমবাতি কিংবা প্রদীপ জ্বালুন। কিন্তু রবিবার রাত ন’টা থেকে প্রায় ঘণ্টাখানেকেরও বেশি সময় ধরে শব্দবাজি ফাটিয়ে, ফানুস উড়িয়ে উল্লাসের যে চেহারা দেখা গেল শহর কলকাতায়, তা পরিস্থিতি গুলিয়ে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট। এ সব দেখে অনেকেরই প্রশ্ন, ‘‘এই আমাদের ভারতবর্ষ! যেখানে পটকা ফাটিয়ে করোনা তাড়ানোর চেষ্টা হয়। মারণ রোগের মোকাবিলায় ব্যয় বরাদ্দের কথা ভাবা হয় না!’’

এর আগে জনতা কার্ফুর দিনেও ছোঁয়াচ বাঁচাতে সামাজিক দূরত্ব বজায় না রেখেই রাস্তায় বেরিয়ে দল বেঁধে শব্দবাজি ফাটানোর অভিযোগ উঠেছিল। কিন্তু এ দিনের পরিস্থিতি দেখে অনেকেরই প্রশ্ন, এত দিন ধরে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার গুরুত্ব নিয়ে বহুল প্রচার হয়েছে। তার পরেও মানুষ কেন এমন ভাবে বাজি ফাটিয়ে রোগ-মুক্তির ‘অন্ধ উৎসব’ পালন করবেন?

রাত ঠিক ন’টায় ন’মিনিটের জন্য বাড়ির সমস্ত আলো নিভিয়ে মোমবাতি, প্রদীপ বা মোবাইলের আলোয় ‘মহাশক্তিকে জাগ্রত’ করার কথা বলেছিলেন প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু এ দিন ন’টার বহু আগে থেকেই শহরের প্রায় সর্বত্র শব্দবাজি ফাটতে শুরু করে। সঙ্গে আগের দিনের মতোই যুক্ত হয় কাঁসর-ঘণ্টা বাজানো। রাত পৌনে ন’টা নাগাদ গল্ফ ক্লাব রোডে দল বেঁধে রাস্তায় বেরিয়ে পড়েন কয়েক জন। হাতে তুবড়ি, রকেটের শেল। মাস্ক পরার বালাই নেই। তাঁদের কথায়, ‘‘প্রধানমন্ত্রী শক্তির কথা বলেছেন। শুধু মোমবাতি বা প্রদীপ জ্বালিয়ে সেই শক্তির উৎস তৈরি করা সম্ভব নয়।’’ প্রায় একই রকম দাবি, বেহালা সরশুনা এলাকার কয়েক জন কলেজপড়ুয়ার। লকডাউন উড়িয়েও খোলা চায়ের দোকানের সামনে তুবড়ি জ্বালানোর সময়ে দোকানদারকে এক জন বললেন, ‘‘দোকান বন্ধ রাখতে বলেছিলাম বহু বার। আজ প্রধানমন্ত্রী বলে দিয়েছেন। দোকানের সামনেই বাজি ফাটাব।’’

গড়িয়ার বোড়ালে একটি আবাসনের সামনে দেখা গিয়েছে প্রবল জটলা। সেখানে ছাদে বাজি ফাটাতে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন এক যুবক। ওই আবাসনেরই কয়েক জনের দাবি, বাজি ফাটানোর প্রতিবাদ করেছিলেন তাঁরা। কিন্তু কেউ কথা শোনেনি। ওই আবাসনেরই এক ব্যক্তি বলেন, ‘‘এখন ওই যুবককে নিয়ে হাসপাতালে ছুটতে হচ্ছে। প্রথমেই বলেছিলাম, উৎসব চলছে না কি এটা! আমার ঘরে কুকুর রয়েছে। ভয়ে সে খাটের তলায় ঢুকে ছিল। অসময়ে এই বাজি ফাটানোর উৎসব রুখতে না পারলে ভবিষ্যৎ কী?’’

উল্টোডাঙা মেন রোডের উপরেই আবার একটি আবাসনের সামনে প্রকাশ্যে শব্দবাজি ফাটাতে দেখা গিয়েছে বলে অভিযোগ। একই রকম অভিযোগ এসেছে সল্টলেকের রাস্তা বা হাওড়ার কাছে জাতীয় সড়ক থেকে। কিন্তু ঘটনাস্থলে কোনও পুলিশকর্মী ছিলেন না বলে স্থানীয়দের দাবি। লালবাজারের তরফে এ নিয়ে কেউ মন্তব্য করতে না চাইলেও কলকাতা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার পদমর্যাদার এক আধিকারিক বলেন, ‘‘অনেকেই যা করার বাড়ির চৌহদ্দির মধ্যে করেছেন। বাড়িতে ঢুকে হাতেনাতে ব্যবস্থা নেওয়া যায়নি। দ্রুত এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’ রাতেই শহরের নানা জায়গা থেকে বাজি ফাটানোর অভিযোগে ৯৮ জনকে গ্রেফতার করা হয়।

সঙ্কটকালে বিধি ভেঙে এই শব্দবাজির তাণ্ডব নিয়ে রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের চেয়ারম্যান কল্যাণ রুদ্র বললেন, ‘‘কাকে দোষ দেব, আর কাকে ছাড়ব! পুলিশই বা কত করবে? এই সঙ্কটে আলো নিভিয়ে বিধি ভেঙে এ ভাবে শব্দবাজি ফাটানো একেবারেই কাম্য নয়।’’

Firecracker Coronavirus West Bengal Lockdown Diwali Narendra Modi
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy