উঁকিঝুঁকি: মুখ্যমন্ত্রীকে দেখতে কেউ উঠেছেন রেলিংয়ে, কারও আবার ভরসা মালপত্রের বস্তা। সোমবার, মেট্রো চ্যানেলে। ছবি: রণজিৎ নন্দী
মাঘ মাসের দুপুরেও ধর্মতলার আকাশে কাঠফাটা রোদ!
কিন্তু তাতে কী! মঞ্চের এক প্রান্ত থেকে আর এক প্রান্তে পায়চারি করা মুখ্যমন্ত্রীর একটা ছবি তো তুলতেই হবে। তাই সোমবার দুপুরে দরদর করে ঘাম ঝরলেও উৎসাহে ভাটা পড়েনি আমজনতার। মেট্রো চ্যানেলের ডিভাইডারের রেলিংয়ে উঠে কর্মী-সমর্থক থেকে সাধারণ মানুষের একটাই আর্তি, ‘দিদি, এ দিকে এক বার’।
ভিড়ের সেই ‘আবদার’ মুখ্যমন্ত্রীর কানে পৌঁছচ্ছিল কি না, জানা যায়নি। তবে মাঝেমধ্যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে থেকে ভিড়ের দিকে তাকাতেই নিমেষে তা ফ্রেমবন্দি হয়ে গিয়েছে হাজার হাজার মোবাইলে। তাঁর পায়চারির সঙ্গে তাল মিলিয়ে জনতার দৃষ্টিও ঘুরেছে মঞ্চের এক দিক থেকে অন্য দিকে। সোমবার এ ভাবেই সারা দিন মেট্রো চ্যানেল জুড়ে ছিল শুধু কালো মাথা আর হাতে ধরা মোবাইলের ভিড়।
চেয়ারে দাঁড়িয়ে মমতার ছবি তোলার চেষ্টায় ছিলেন কলেজপড়ুয়া এক তরুণী। সঙ্গে বান্ধবী অবশ্য ভিড়ের ফাঁক গলে মুখ্যমন্ত্রীকে একটি বার দেখার মরিয়া চেষ্টা চালাচ্ছিলেন। কয়েক মুহূর্তের জন্য মুখ্যমন্ত্রী থমকে দাঁড়াতেই উল্লাসে ফেটে পড়লেন বছর কুড়ির ওই দুই তরুণী। এক জন বললেন, ‘‘ওই তো, দেখা যাচ্ছে।’’ আর এক জনের সংযোজন, ‘‘সত্যি রে, এত সামনে! কী মিষ্টি!’’ দলনেত্রীকে একটি বার দেখতে মরিয়া হাওড়া পুরসভার প্রাক্তন কাউন্সিলর বাপি মান্নাও। রেলিং ধরে কোনও মতে ডিভাইডারে উঠে বললেন, ‘‘এক বার না দেখলে হয়! উনিই তো আমাদের শক্তি।’’
দেড়টা বাজতে মন্ত্রিসভার বৈঠকে যোগ দিতে মুখ্যমন্ত্রী মঞ্চ ছাড়লেও নিজেদের জায়গা ছাড়তে নারাজ আমজনতা। ব্যবসার কাজ সেরে বড়বাজার থেকে সোজা ধর্মতলায় এসেছিলেন বালির সুব্রত গোস্বামী ও আশিস চট্টোপাধ্যায়। ভিড় ঠেলে ব্যারিকেডের সামনে গিয়ে তাঁদের মন্তব্য, ‘‘মিটিং করে আবার তো উনি আসবেন। আর একটু দেখে তবেই জায়গা ছাড়ব।’’ অন্য দিকে, মেটিয়াবুরুজের বাসিন্দা, প্রথম শ্রেণির পড়ুয়া সাদিকা ইকবাল স্কুল ছুটি হতেই বায়না জুড়েছে, ‘‘দিদিকে দেখব।’’ অগত্যা মেট্রো চ্যানেলে এসে মেয়েকে কাঁধে তুলে ‘দর্শন’ করানোর মরিয়া চেষ্টায় বাবা ইকবাল ইসলাম।
নেতাজি ইন্ডোরে কৃষক সমাবেশ হতেই ভিড় আরও বেড়েছে ধর্মতলায়। ভিড়ের মাঝেই আচমকা ‘‘মমতা, কোথায় গেলি’’ বলে চেঁচাতে দেখা গেল গিরিশ পার্কের বাসিন্দা মিতা রায়কে। কাকে ডাকছেন? প্রশ্ন শুনেই তাঁর সহাস্য উত্তর, ‘‘আমাদের দলেরই এক কর্মী মমতা পাকরে-কে খুঁজছি।’’ এ দিন উত্তীর্ণ-র বদলে মেট্রো চ্যানেলেই মঞ্চ বেঁধে পুলিশ মেডেল প্রদান অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল।
এর মধ্যেই দেখা গেল, ধর্না মঞ্চের সামনে হাজির পুরকর্মীরা। সেখানে তখন দ্বিতীয় দফায় মশা মারার তেল ছড়াতে এসেছেন তাঁরা।
বেলা বাড়তেই মঞ্চে হাজির সংস্কৃতি জগতের ব্যক্তিরাও। সওয়া দুটো নাগাদ ফের মঞ্চে এলেন মুখ্যমন্ত্রী। সঙ্গে সঙ্গেই ‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জিন্দাবাদ’ এবং ‘মোদী হটাও, দেশ বাঁচাও’ স্লোগানে মুখরিত মেট্রো চ্যানেল। আর মুখ্যমন্ত্রীর কথা মতো তখন মঞ্চে গান ধরেছেন সৈকত, শিবাজী, পর্ণাভরা। তাঁদের গান শেষ হতেই সিঙ্গুর-নন্দীগ্রামের স্মৃতি উস্কে সাংসদ দোলা সেনকে সংগ্রামী গান ধরতে বলেন মুখ্যমন্ত্রী। তা শেষ হতেই মুখ্যমন্ত্রী বললেন, ‘‘ইন্দ্রনীল সেন মঞ্চে রয়েছেন। ওঁকে কী ছাড়া যায়। এ বার ওঁকে গাইতে বলছি।’’ হাততালিতে ফেটে পড়ল জনতা। মমতা মৃদু হেসে বললেন, ‘‘ইন্দ্রনীল মোবাইলে গান খুঁজছে। এখন সবাই সব কিছু মোবাইলে খোঁজে।’’ তত ক্ষণে বিধানসভা থেকে মিছিল করে মঞ্চে হাজির মন্ত্রী, বিধায়কেরা। তাঁদের মতো মঞ্চের উল্টো দিকে থাকা দর্শকেরাও ইন্দ্রনীলের সঙ্গে গলা মিলিয়ে গেয়ে উঠলেন, ‘ধরো হাল শক্ত হাতে’।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy