Advertisement
E-Paper

মেট্রোয় দফায় দফায় বিভ্রাট পুজোর শহরে

পাশাপাশি শোভাবাজার ও চাঁদনি চকে ট্রেনের দরজা বেশ কিছু ক্ষণ বন্ধ না হওয়ায় এবং অন্যান্য স্টেশনে টোকেন সংক্রান্ত সমস্যার জেরে সেই ভোগান্তি আরও বাড়ে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৬ অক্টোবর ২০১৮ ০১:০৭
আতঙ্ক: সেই এসি রেক সারানোর কাজ চলছে। সোমবার, সেন্ট্রাল স্টেশনে। নিজস্ব চিত্র

আতঙ্ক: সেই এসি রেক সারানোর কাজ চলছে। সোমবার, সেন্ট্রাল স্টেশনে। নিজস্ব চিত্র

পুজোর শহরে ভি়ড়ে ঠাসা নন-এসি রেক বিগড়ে যেতে পারে বলে আতঙ্কে ছিলেন মেট্রোকর্তারা। তার জন্য আগাম প্রস্তুতিও নিয়েছিলেন তাঁরা। কিন্তু সোমবার, ষষ্ঠীর দুপুরে সেন্ট্রাল স্টেশনে আচমকাই বিগড়ে গেল একটি এসি রেক। শুধু তা-ই নয়, বিকল ওই রেক থেকে ধোঁয়া আর আগুনের ফুলকি বেরোনোয় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে যাত্রীদের মধ্যে। আধ ঘণ্টা পরে রেকটিকে নোয়াপাড়ায় নিয়ে যাওয়া হয়। তত ক্ষণে অবশ্য পিছনের সব ক’টি স্টেশনে দমদমমুখী একাধিক ট্রেন আটকে পড়ে। দুর্ভোগ চরমে ওঠে।

এর পাশাপাশি শোভাবাজার ও চাঁদনি চকে ট্রেনের দরজা বেশ কিছু ক্ষণ বন্ধ না হওয়ায় এবং অন্যান্য স্টেশনে টোকেন সংক্রান্ত সমস্যার জেরে সেই ভোগান্তি আরও বাড়ে।

সেন্ট্রাল স্টেশনে রেক বিগড়োনোর জেরে দমদম থেকে কবি সুভাষের দিকে যাওয়ার মতো রেক না মেলায় দীর্ঘক্ষণ ওই স্টেশন থেকেও ট্রেন ছাড়তে পারেনি। ফলে দমদম মেট্রো স্টেশনের ডাউন প্ল্যাটফর্মে যাত্রীদের ভিড় উপচে পড়ে। ভিড় নিয়ন্ত্রণে হিমশিম খায় মেট্রো কর্তৃপক্ষ।

মেট্রো সূত্রে খবর, কালীঘাট স্টেশনে কিছু ক্ষণের জন্য গেট আটকে যাত্রীদের প্ল্যাটফর্মে প্রবেশ বন্ধ করে দেওয়া হয়। ভিড়ে প্ল্যাটফর্মে তখন দাঁড়ানোর মতোও জায়গা ছিল না।

মেট্রো সূত্রে জানা গিয়েছে, সেন্ট্রাল স্টেশনে ঘটনার সূত্রপাত দুপুর সওয়া দুটো নাগাদ। দমদমমুখী এসি রেকের সামনের দিকের ছ’-সাতটি কামরা সেন্ট্রাল স্টেশনে ঢোকামাত্র একটি কামরার নীচ থেকে হঠাৎ ধোঁয়া বেরোতে শুরু করে। প্ল্যাটফর্মে থাকা যাত্রীদের একাংশ আগুনের ফুলকি দেখতে পাওয়ার সঙ্গে বিস্ফোরণের মতো শব্দও পান বলে অভিযোগ। চালক ট্রেন থামানোর আগেই রেকের বিদ্যুৎ সংযোগ চলে যায়। কামরার যাত্রীরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েন।

তড়িঘড়ি অগ্নি-নির্বাপণ যন্ত্র নিয়ে ছুটে আসেন স্টেশনের কর্মীরা। মেট্রো কর্তৃপক্ষ ঘনঘন মাইকে ঘোষণা করে যাত্রীদের কামরা ছেড়ে প্ল্যাটফর্মে নেমে আসতে বলেন। দ্রুত কামরা খালি করে দেওয়া হয়। এর পরে বোঝা যায়, থার্ড রেলও বিদ্যুৎহীন হয়ে গিয়েছে। প্রায় আধ ঘণ্টা ধরে মেট্রোকর্মীদের

একাংশ রেকটিকে মেরামত করেন। তার পরে পৌনে তিনটে নাগাদ থার্ড রেলে বিদ্যুৎ এলে রেকটিকে নোয়াপাড়া নিয়ে যাওয়া হয়।

মেট্রো সূত্রের খবর, এ দিন কোনও ভাবে ওই রেকটির একটি কামরার নীচে থাকা পাইপ আলগা হয়ে ট্রেনের থার্ড রেলের সঙ্গে সংযোগকারী অংশের উপরে পড়ে। তাতেই ঘটে বিপত্তি। শর্ট সার্কিট হয়ে ফুলকি ও ধোঁয়া তৈরি হয়। যে সাব স্টেশন থেকে সেন্ট্রাল মেট্রো স্টেশনে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়, সেটিও শর্ট সার্কিটের কারণে বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়ে। রেকটিকে নোয়াপাড়া নিয়ে গেলে পরিষেবা ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হয়।

এক যাত্রী বলেন, “ভাগ্যিস, স্টেশনের মধ্যে ওই বিভ্রাট ঘটেছে। সুড়ঙ্গের মধ্যে ঘটলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হতে পারত।”

নন-এসি রেক নিয়ে একাধিক সতর্কতা নেওয়ার কথা পুজোর আগেই জানিয়েছিলেন মেট্রো কর্তৃপক্ষ। কিন্তু পুজোয় যাত্রী পরিবহণের অতিরিক্ত চাপ নিতে গিয়ে এসি রেকের রক্ষণাবেক্ষণ ধাক্কা খাচ্ছে কি না, সেই প্রশ্ন উঠছে। গত শুক্রবার মেট্রোয় যাত্রী-সংখ্যা ছিল ৮.২১ লক্ষ। রবিবার ছিল ৭.৭৯ লক্ষ। সোমবারও মেট্রোয় ভিড় ছিল তুঙ্গে।

বছর দেড়েক আগে চেন্নাই থেকে নতুন এসি রেক আসা সত্ত্বেও কেন যাত্রী-পরিবহণে আজও তা চালানো গেল না, সেই প্রশ্ন উঠেছে। সম্প্রতি ওই রেকগুলি রেলের নিজস্ব গবেষণা সংস্থার মান নির্ধারক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে। কিন্তু পুজোর সময়ে নতুন রেকগুলিকে ব্যবহার করার ঝুঁকি নেননি মেট্রো কর্তৃপক্ষ।

মেট্রোর অটোমেটিক ফেয়ার কালেকশন গেটগুলিকে নিয়েও সমস্যা চলছে। অধিকাংশ গেটই কাজ করে না। রবিবার দমদমে গেট-বিভ্রাটে সমস্যা তৈরি হয়। শেষে যাত্রীদের কাগজের টিকিট দিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া হয়। রক্ষণাবেক্ষণের কর্মী অপ্রতুল সেখানেও।

নড়বড়ে পরিকাঠামো নিয়ে শুধু কর্মীদের উপরে চাপ দিয়ে পরিষেবার মান কতটা রক্ষা করা যাবে, সে প্রশ্ন তুলছেন খোদ মেট্রোর কর্মীরাই।

এ বিষয়ে মেট্রোর মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক ইন্দ্রাণী বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “পরিকাঠামোর সমস্যা সত্ত্বেও উৎসবের সময়ে পরিষেবা সচল রাখার যথাসাধ্য চেষ্টা হচ্ছে। যাত্রীরা মেট্রোর উপরেই সব চেয়ে বেশি নির্ভর করেন। সর্বতো ভাবে সেই প্রত্যাশা পূরণের চেষ্টা করছেন মেট্রোর সকলে।’’

Kolkata Metro Technical Snag Suffering Fire
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy