Advertisement
০৬ মে ২০২৪
Sri Lanka Crisis

Sri Lanka: খাবার বিলি অনাথ শিশুদের, বিপর্যয়ে পাশে ওঁরা

সৌমিত্র জানান, কলকাতা থেকে ওই জাহাজ গত ১৫ জুলাই কলম্বোয় পৌঁছয়। সেই খাবার ইতিমধ্যেই পৌঁছেছে অনাথ আশ্রমের বাচ্চাদের কাছে।

চরম সঙ্কটের দিনেও কলম্বোয় ছোটদের জন্য বসে আঁকো প্রতিযোগিতার আয়োজন।

চরম সঙ্কটের দিনেও কলম্বোয় ছোটদের জন্য বসে আঁকো প্রতিযোগিতার আয়োজন। নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২০ জুলাই ২০২২ ০৫:৩০
Share: Save:

ভয়াবহ আর্থিক বিপর্যয়ের মধ্যে রয়েছে শ্রীলঙ্কা। জল নেই, খাবার নেই, নেই জ্বালানিও। লোডশেডিং হচ্ছে মাঝেমধ্যেই, খোলেনি স্কুলও। এই অবস্থায় সেখানকার অনাথ আশ্রমের শিশুদের পাশে দাঁড়িয়েছেন কর্মসূত্রে রাজধানী কলম্বোর বাসিন্দা ভারত, বাংলাদেশ এবং নেপালের কিছু মানুষ। তাঁদের মধ্যেই উল্লেখযোগ্য ভূমিকায় রয়েছেন কলকাতার কয়েক জন। তাঁরা জানাচ্ছেন, এত বিপর্যয়ের মধ্যেও তাঁরা সে দেশ ছাড়বেন না।

তাঁদেরই এক জন, আদতে সল্টলেকের বাসিন্দা পেশায় চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট সৌমিত্র রায়। কলকাতার একটি বেসরকারি সংস্থায় উচ্চপদস্থ আধিকারিক ছিলেন তিনি। ২০১৫ সাল থেকে কর্মসূত্রে কলম্বোয়। তিনি সে দেশের শিশুদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। কলম্বো থেকে সৌমিত্র বললেন, ‘‘আমি একা নই। ভারত, বাংলাদেশ, নেপালের কিছু বাসিন্দা মিলে শ্রীলঙ্কার প্রায় ৩৫০টি অনাথ আশ্রমের ১০৬০০-র মতো শিশুর পাশে থাকার চেষ্টা করেছি। তাদের জন্য কলকাতা থেকে জাহাজের কন্টেনারে আনা হয়েছে শুকনো খাবার।’’

সৌমিত্র জানান, কলকাতা থেকে ওই জাহাজ গত ১৫ জুলাই কলম্বোয় পৌঁছয়। সেই খাবার ইতিমধ্যেই পৌঁছেছে অনাথ আশ্রমের বাচ্চাদের কাছে। আপাতত বিতরণ করা হয়েছে ১০০ দিনের মতো খাবার। ফুরিয়ে গেলে ফের কলকাতা থেকে ১০০ দিনের মতো খাবার আনার চেষ্টা করা হবে। তিনি বলেন, ‘‘কলম্বো এক্সপ্যাট কালচারাল অ্যাসোসিয়েশন নামে একটি সংস্থা তৈরি করে আমরা সবাই মিলে কাজ করছি। আরও অনেক বাঙালি এখানে আছেন। তাঁদের মধ্যে অনেকেই কলকাতার।’’

সৌমিত্র আরও জানাচ্ছেন, প্রায়ই লোডশেডিংয়ের কবলে পড়ছে বিভিন্ন এলাকা। খাবার তো বটেই, টান গাড়ির জ্বালানিতেও। মাত্রাছাড়া ভাড়া অ্যাপ-ক্যাবেরও। তাই তাঁরা অনেকেই বাড়ি থেকে অফিসের কাজ করছেন। এমনকি, প্রয়োজনীয় ওষুধও পাওয়া যাচ্ছে না সব সময়ে। কলম্বোয় কর্মরত অনির্বাণ বন্দ্যোপাধ্যায়, সুমিত লাহা-সহ বাকিরা জানাচ্ছেন, করোনার পাশাপাশি এই আর্থিক বিপর্যয়ের ধাক্কায় কার্যত ছন্নছাড়া হয়ে গিয়েছে দ্বীপরাষ্ট্র

শুধু খাবার বিলি করাই নয়, শিশুদের মুখে হাসি ফোটাতে আয়োজন করা হয়েছিল বসে আঁকো প্রতিযোগিতার। অনির্বাণবাবুরা জানান, তীব্র অনিশ্চয়তার মধ্যে থাকতে থাকতে অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়ছে শিশুরা। তা থেকে কিছুটা হলেও মুক্তি দিতে ছিল এই আয়োজন। স্কুল থাকায় কয়েক জনকে ল্যাপটপও দেওয়া হয়েছে পড়াশোনার জন্য।

এই কাজের জন্য অর্থের সংস্থান কোথা থেকে হচ্ছে? সৌমিত্ররা জানান, একটি তহবিল তৈরি করে সেখানে সাধ্যমতো দিয়েছেন তাঁরা সকলে। এর পাশাপাশি, সারা পৃথিবী থেকে তাঁদের পরিচিত, বন্ধু-বান্ধবেরা সাহায্য পাঠাচ্ছেন।

নানা অসুবিধায় এখন ওই দ্বীপরাষ্ট্রে তাঁরা আছেন। তবে এখনই দেশে ফিরে আসার কথা ভাবছেন না কেউ। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর এই দেশ আর সেখানকার সাধারণ মানুষের সান্নিধ্যে কাটানো ভাল সময়ের কথা ভেবেই বিপদের দিনে তাঁদের ছেড়ে আসতে চাইছেন না কেউ। সৌমিত্র বলেন, ‘‘আমরা অপেক্ষা করছি। কত দিন দুর্দিন চলবে! এক দিন তো মেঘ কেটে যাবেই। আমরা আবার সমুদ্রের ধারে গিয়ে সূর্যোদয় দেখব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Sri Lanka Crisis India
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE