Advertisement
E-Paper

Death in Police Custody: রাজারহাটে পুলিশের বিরুদ্ধে যুবককে পিটিয়ে মারার অভিযোগ, ধর্না থানায়

দুয়ারে সরকার কর্মসূচির একটি শিবিরের সামনে থেকে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় তাঁকে তুলে নিয়ে গিয়েছিল পুলিশ।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১১ সেপ্টেম্বর ২০২১ ০৬:২১
রাজারহাট থানায় সঞ্জয় হুলপাত্রের পাড়ার লোকেদের বিক্ষোভ।

রাজারহাট থানায় সঞ্জয় হুলপাত্রের পাড়ার লোকেদের বিক্ষোভ। শুক্রবার। রাজারহাট থানায় সঞ্জয়ের দাদা(ইনসেটে)। শুক্রবার।ছবি: স্নেহাশিস ভট্টাচার্য ও নিজস্ব চিত্র।

দুয়ারে সরকার কর্মসূচির একটি শিবিরের সামনে থেকে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় তাঁকে তুলে নিয়ে গিয়েছিল পুলিশ। অভিযোগ, মারতেই মারতেই নিয়ে যাওয়া হয়। থানাতেই অসুস্থ হয়ে বমি করতে থাকেন তিনি। শুক্রবার সকালে তাঁর পরিবার জানতে পারে, অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে মৃত্যু হয়েছে সঞ্জয় হুলপাত্র (৩৮) নামে ওই যুবকের। পেশায় বিদ্যুতের মিস্ত্রি সঞ্জয়ের মা, স্ত্রী এবং একটি মেয়ে আছেন।

খবর জানাজানি হতেই সঞ্জয়ের বাড়ির এলাকা, রাজারহাট থানার ঘোষপাড়ায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। ওই যুবককে পিটিয়ে মারার অভিযোগ ওঠে পুলিশের বিরুদ্ধে। চাউর হয়ে যায়, লক-আপেই তাঁর মৃত্যু হয়েছে। বাঁশ দিয়ে রাস্তা বন্ধ করে রাজারহাট থানার সামনে প্রায় সন্ধ্যা পর্যন্ত দফায় দফায় বিক্ষোভ দেখান এলাকাবাসী। অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে রাজারহাট রোড। বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশের বচসা ও ধাক্কাধাক্কি হয় দফায় দফায়।

পুলিশের বক্তব্য, সঞ্জয়ের মৃত্যু পুলিশি হেফাজতে হয়নি। তাঁকে তুলে আনা হয়েছিল ঠিকই। থানায় অভিযোগও দায়ের হয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। তবে সকালে ছেড়ে দেওয়ার পরে তিনি থানার বাইরে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যায় পুলিশই। এই ঘটনায় পুলিশের এক কর্মীকে ‘ক্লোজ়’ করা হয়েছে।

এই ঘটনায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ম্যাজিস্ট্রেট পর্যায়ের তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন বলে প্রশাসনিক সূত্রের খবর। সঞ্জয়ের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ারও নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। তৃণমূলের এক শীর্ষ নেতা জানান, মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার আগে থেকেই মমতা পুলিশি হেফাজতে মৃত্যুর বিরুদ্ধে সরব। এই নিয়ে তিনি আন্দোলনও করেছেন। ফলে মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পরে এই ধরনের ঘটনা ঘটলে তিনি সচেতন ভাবেই পরিবারের পাশে দাঁড়াবেন। রাজারহাট-নিউ টাউনের তৃণমূল বিধায়ক তাপস চট্টোপাধ্যায় রাজারহাট থানায় গিয়ে প্রতিশ্রুতি দেন, মৃতের পরিবারকে প্রতি মাসে ১০ হাজার টাকা দেওয়া হবে। তার পরে ধীরে ধীরে বিক্ষোভ থামে।

মারধরের অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে বিধাননগর পুলিশ কমিশনারেটের ডিসি (সদর) সূর্যপ্রকাশ যাদব জানান, মত্ত অবস্থায় ওই ব্যক্তিকে গ্রেফতার করে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। সকালে উনি অসুস্থ বোধ করায় ওঁকে মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে মৃত্যু হয় তাঁর। ‘‘সুরতহালের রিপোর্টে শরীরে বাইরে থেকে কোনও আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি। শনিবার মৃতদেহের ময়না-তদন্ত হবে। খতিয়ে দেখা হবে এলাকার সিসি ক্যামেরার ফুটেজ,’’ বলেন ডিসি।

এলাকার বাসিন্দারা জানান, বৃহস্পতিবার রাজারহাটের চাঁদপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের একটি স্কুলে দুয়ারে সরকার কর্মসূচির শিবির চলছিল। বিকেল ৫টা নাগাদ মত্ত অবস্থায় সেখানে পৌঁছে সঞ্জয় ‘রেশন কার্ড কেন হয়নি’ বলে চেঁচামেচি শুরু করেন। পুলিশকর্মীরা তাঁকে সেখান থেকে সরে যেতে বলেন। সঞ্জয়ের আত্মীয় ভোলানাথ হুলপাত্র বলেন, ‘‘আমার ভাইপো মত্ত ছিল। কথা না-শোনায় তাকে মারতে মারতে গাড়িতে তোলে পুলিশ। এমনকি গাড়ির ভিতরেও ওকে মারধর করা হয় বলে স্থানীয়েরা আমাদের জানান। তার পরে রাজারহাট থানায় নিয়ে যাওয়া হয়।’’

সঞ্জয়ের পরিবারের দাবি, সন্ধ্যায় বাড়ির লোকজন থানায় গিয়ে দেখেন, লক-আপে বমি করে, উপুড় হয়ে শুয়ে আছেন সঞ্জয়। তাঁর এক ভাই দেবজিৎ জানান, ওই অবস্থায় তাঁরা সঞ্জয়কে বাড়ি নিয়ে আসতে চাননি। পুলিশও তাঁকে ছাড়তে চায়নি। দেবজিৎ বলেন, ‘‘দাদার ওঠার ক্ষমতা ছিল না। পুলিশ বলেছিল, শুক্রবার সকালে দাদাকে থানা থেকেই জামিন দিয়ে দেবে। কিন্তু এ দিন আমরা থানায় গিয়ে শুনি, অসুস্থ বোধ করায় ভোরবেলা দাদাকে হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে ইঞ্জেকশন দেওয়া হয়। ব্যথা না-কমায় পরে নিয়ে যাওয়া হয় মহকুমা হাসপাতালে। তার পরে খবর পাই, রাস্তাতেই দাদার মৃত্যু হয়েছে।’’ পুলিশি সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন ভোরে জামিন দিয়ে অসুস্থ সঞ্জয়কে এক মুহুরির মাধ্যমে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছিল।

বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের অভিযোগ, ‘‘মানুষ এখন রেশন কার্ড করতে গিয়েও পুলিশের ডান্ডা খাচ্ছে।’’ দিনভর রাজারহাট থানার সামনে বিক্ষোভের পিছনে বিজেপির মদত রয়েছে বলে অভিযোগ তুলে রাজারহাট-নিউ টাউনের তৃণমূল সভাপতি প্রবীর কর বলেন, ‘‘লোকটি মদ্যপানের জেরেই অসুস্থ হয়ে পড়ে। বিক্ষোভ-অশান্তি বিজেপি করাচ্ছে।’’

New Town BJP TMC
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy