Advertisement
E-Paper

হেলমেট-বার্তাতেও ফিরল না হুঁশ

উল্টোডাঙার দাসপাড়ায় কাছাকাছিই বাড়ি বিট্টু ও আকাশের। দু’জনেরই মা পরিচারিকার কাজ করেন। এবং দু’জনেরই বাবা নেই।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৭ জুন ২০১৮ ০৩:০৮
প্রচারই সার: মৃতদের ছবি-সহ হেলমেট পরার আবেদন তেলেঙ্গাবাগানের দাসপাড়ার বাসিন্দাদের।

প্রচারই সার: মৃতদের ছবি-সহ হেলমেট পরার আবেদন তেলেঙ্গাবাগানের দাসপাড়ার বাসিন্দাদের।

‘প্রিয় বন্ধু, হেলমেট মাথায় দিয়ে বাইক, স্কুটি চালান। আমরা আর আমাদের প্রিয়জনকে হারাতে চাই না।’

হেলমেট না পরে মোটরবাইক চালানোর পরিণতি যে কতটা ভয়াবহ হতে পারে, ফের তা দেখিয়ে দিয়েছে সোমবার রাতের স্কুটার দুর্ঘটনা। সেই ঘটনায় ১৬ বছরের বিট্টু সেন ও ১১ বছরের আকাশ দত্তকে
হারিয়ে শোকস্তব্ধ গোটা এলাকা। তাদের মতো পরিণতি আর যাতে কারও না হয়, সেই লক্ষ্যেই এ বার হেলমেট নিয়ে প্রচারে নেমেছে মৃত দুই কিশোরের পাড়া। মঙ্গলবার দাসপাড়ায় পা দিতেই দেখা গেল সেই উদ্যোগ। একটি বেদির দু’পাশে দুই কিশোরের ছবি। সঙ্গে চালকদের উদ্দেশে হেলমেট পরার লিখিত আবেদন। যদিও সেই আবেদনে কাজ হয়নি কিছুই।

সোমবার রাতে তেলেঙ্গাবাগানের কাছে উল্টোডাঙা মেন রোডে দুই বাসের রেষারেষির জেরে মৃত্যু হয় বিট্টু ও আকাশের। পুলিশ জানিয়েছে, বিট্টু ও আকাশ যে স্কুটারে উঠেছিল, সেটি চালাচ্ছিল মৃন্ময় পরিখা নামে তাদের পাড়ারই এক যুবক। তেলেঙ্গাবাগানের কাছে উল্টোডাঙা মেন রোডে ইউ-টার্ন নিচ্ছিল ওই স্কুটারটি। বিট্টু, আকাশ বা মৃন্ময়— কারও মাথাতেই হেলমেট ছিল না। সেই সময়ে উল্টোডাঙার দিক থেকে দু’টি বাস রেষারেষি করতে করতে খন্নার দিকে আসছিল। স্কুটার ইউ-টার্ন নিতেই পিছন দিক থেকে আসা একটি বাস সেটিকে ধাক্কা মারে। তিন জন রাস্তায় ছিটকে পড়তেই বিট্টু ও আকাশকে আর একটি বাস পিষে দিয়ে চলে যায়। ঘটনাস্থলেই তাদের মৃত্যু হয়।

উল্টোডাঙার দাসপাড়ায় কাছাকাছিই বাড়ি বিট্টু ও আকাশের। দু’জনেরই মা পরিচারিকার কাজ করেন। এবং দু’জনেরই বাবা নেই। আকাশ স্থানীয় একটি স্কুলে ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ত। ভাল পড়াশোনার পাশাপাশি ফুটবলেও তুখোড় ছিল সে। স্কুলের ফুটবল প্রতিযোগিতায় খেলত নিয়মিত। সোমবার রাতে আকাশ ও বিট্টু মৃন্ময়ের সঙ্গে স্কুটারে চেপে ফুটবলেরই সরঞ্জাম কিনতে গিয়েছিল। কিন্তু তার পরিণতি যে এমন মারাত্মক হতে পারে, এখনও তা বিশ্বাস করতে পারছেন না আকাশের দিদিমা আলপনা দত্ত। কান্নায় ভেঙে পড়ে তিনি বললেন, ‘‘ছোটবেলা থেকেই কোলেপিঠে করে মানুষ করেছি। সোমবার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা নাগাদ কোচিং থেকে ফিরেই বেরিয়ে গেল। আর ফিরল না।’’

দুর্ঘটনার পরের দিনও চেতনা ফেরেনি। পুলিশের সামনেই বিনা হেলমেটে যাতায়াত। মঙ্গলবার, উল্টোডাঙা মেন রোডে।

একই অবস্থা বিট্টুর বাড়িতেও। বিট্টুও ভাল ফুটবল খেলত। একমাত্র ছেলেকে অকালে হারানোয় তাঁর আর কেউ রইল না বলে জানালেন মা আলপনা সেন। কাঁদতে কাঁদতে শুধু একটাই কথা আউড়ে যাচ্ছিলেন, ‘‘এর পরে কাকে নিয়ে বাঁচব! বেঁচেই বা কী লাভ!’’

সোমবার রাতের ওই দুর্ঘটনার পরে চালকদের উদ্দেশে হেলমেট প়রার আবেদন জানানোর পাশাপাশি পুলিশ-প্রশাসনের ভূমিকা নিয়েও সরব হয়েছেন বাসিন্দারা। দুর্ঘটনাস্থলটি উল্টোডাঙা মেন রোড ও অধরচন্দ্র দাস লেনের মোড়ে। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, ওই জায়গায় অতীতে একাধিক বার দুর্ঘটনা ঘটেছে। ওই মোড়ে ট্র্যাফিক সিগন্যাল বসানোর জন্য পুলিশের কাছে বারবার আবেদন করেও কোনও লাভ হয়নি। স্থানীয় কাউন্সিলর অনিন্দ্যকিশোর রাউত বলেন, ‘‘তেলেঙ্গাবাগানের মোড়ে সিগন্যাল পোস্ট দেওয়ার জন্য পুলিশের কাছে আবেদন করেছি।’’ মঙ্গলবার দুপুরে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা গেল, ওই গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে ট্র্যাফিক সিগন্যাল না থাকায় হিমশিম খেতে হচ্ছে কর্তব্যরত পুলিশকর্মীকেও। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ট্র্যাফিক পুলিশের কথায়, ‘‘সিগন্যাল না থাকায় রাস্তার দু’দিকে গাড়ি সামলানো খুব কঠিন হয়ে পড়ে। শুধু হাত দেখালে বহু চালকই তার পরোয়া করেন না।’’

স্থানীয় বাসিন্দাদের আরও অভিযোগ, রাত সাড়ে ৯টার পরে ওই জায়গায় পুলিশও থাকে না। তখন দুর্ঘটনার ঝুঁকি কয়েক গুণ বেড়ে যায়। ওই মোড়ে একটি পুলিশ কিয়স্ক ও সিগন্যাল পোস্ট বসানোর আর্জি জানিয়েছেন তাঁরা। এ প্রসঙ্গে কলকাতা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (ট্র্যাফিক) মিথিলেশ জৈন বলেন, ‘‘তেলেঙ্গাবাগানে পুলিশ কিয়স্ক ও সিগন্যাল পোস্ট বসানোর প্রস্তাব খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’

সোমবার রাতে রেষারেষি করা ওই দু’টি বাসের একটির চালক হরিশকুমার শর্মাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। অন্য বাসের চালককে মঙ্গলবার রাত পর্যন্ত ধরা যায়নি। ধৃতের বিরুদ্ধে বেপরোয়া ভাবে বাস চালানো, অনিচ্ছাকৃত ভাবে মৃত্যু ঘটানো এবং অনিচ্ছাকৃত ভাবে মৃত্যু ঘটানোর চেষ্টার অভিযোগে মামলা রুজু করেছে পুলিশ। মঙ্গলবার তাঁকে শিয়ালদহ আদালতে তোলা হলে বিচারক ২৯ জুন পর্যন্ত পুলিশি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন। এ দিকে, ওই দুর্ঘটনায় স্কুটারের চালক মৃন্ময়ের শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল বলে জানিয়েছে পুলিশ। এ দিন তাঁকে আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকে উত্তর কলকাতার এক নার্সিংহোমে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

ছবি: স্নেহাশিস ভট্টাচার্য

helmet Bikers Death
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy