একশো পেরোল পেট্রল। আলিপুরদুয়ারের একটি পাম্পে। ছবি: নারায়ণ দে
তেলের দামের দৌড়ে এ বার কলকাতাকে পেছনে ফেলল জেলা। রাজ্যে উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জায়গা, মুর্শিদাবাদ, নদিয়া, উত্তর দিনাজপুর, ঝাড়গ্রামে শুক্রবারই প্রথম লিটার পিছু পেট্রল পেরিয়ে গেল ১০০ টাকা। কিছু এলাকায় তা এসে দাঁড়াল ‘শতরানের’ মুখে।
মাধ্যমিক কিংবা উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার ফলাফলে কলকাতাকে পেছনে ফেলে বহুবার গর্বে-উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়তে দেখা গিয়েছে জেলাগুলিকে। শুক্রবার তারাই ক্ষুব্ধ আর হতাশ রাজ্যে তেলের দামের প্রথম ‘সেঞ্চুরি’ দেখে। অন্য দিকে, প্রমাদ গুনছে কলকাতা। যেখানে আইওসি-র পাম্পে লিটারে এ দিন পেট্রল বিকিয়েছে ৯৯.০৪ টাকায়। ফলে অতিমারির দুর্ভোগে ক্লান্ত মানুষকে বাজারে জিনিসপত্রের আগুন দাম ও যাতায়াতের চড়া খরচে আর কতটা জেরবার হতে হবে, এ দিন সেই প্রশ্নে উত্তাল হয়েছে গোটা রাজ্য। তার উপরে সদ্য রান্নার গ্যাসের দামও বেড়ে ৮৬১ টাকা হয়েছে। সংসার খরচ মাত্রা ছাড়াচ্ছে।
স্থানীয় এবং তেল সংস্থা সূত্রের খবর, এ দিন কোচবিহার শহরে হিন্দুস্থান পেট্রোলিয়ামের (এইচপিসি) পাম্পে পেট্রল লিটার পিছু বিক্রি হয়েছে ১০০.০৯ টাকায়। সেখানে ইন্ডিয়ান অয়েল (আইওসি) ও ভারত পেট্রোলিয়ামের (বিপিসিএল) পাম্পে জ্বালানিটির দর ছিল যথাক্রমে ১০০.২২ এবং ১০০.০৭ টাকা। আলিপুরদুয়ার শহরে আওসি-র পাম্পে দাম হয় ১০০.১০ টাকা। দার্জিলিং সদর শহরে আইওসি-র পাম্পে তা বিকিয়েছে ১০০.০৮ টাকায় এবং ঝাড়গ্রামে বিপিসিএলের পাম্পে ১০০.০৭ টাকা।
কলকাতার আগেই কেন রাজ্যের অন্যত্র ১০০ টাকা পেরোল পেট্রলের দাম? তেল সংস্থা সূত্রের খবর, হলদিয়ার শোধনাগারকে মূল কেন্দ্র ধরে তার থেকে যত দূরে তেল বয়ে নিয়ে যেতে হয়, সেই অনুযায়ী বাড়ে পরিবহণ খরচ। তাই সব সময়ই দূরবর্তী অঞ্চলে দর কিছুটা বেশি পড়ে। শুক্রবার পেট্রল এমনিতেই বেশি হারে দামি হয়েছে। ফলে বাড়তি পরিবহণ খরচ যোগ করে মোট দর রাজ্যে জেলাগুলির একাংশে আরও বেশি বেড়ে গিয়ে ১০০ টাকার গণ্ডি পার করে ফেলেছে।
পশ্চিমবঙ্গ-সহ পাঁচ রাজ্যে বিধানসভা ভোটের ফল বেরনোর এক দিন পর থেকেই লাগাতার চড়ছে তেলের দর। শুক্রবার নিয়ে এ পর্যন্ত দু’মাসে পেট্রল বাড়ল ৩৩ দিন। মাঝে এক বা দু’দিন করে থেমে থাকলেও দর কমার লক্ষণ নেই। কেন্দ্রের মন্ত্রীরা আঙুল তুলছেন বিশ্ব বাজারে চড়া অশোধিত তেলের দিকে। দায় সারছেন তেল রফতানিকারী দেশগুলির গোষ্ঠী ওপেকের কাছে দাম কমানোর দরবার করেই। আর বিরোধী নেতারা পেট্রল-ডিজেলে সাত বছরে বিপুল পরিমাণে বৃদ্ধি পাওয়া উৎপাদন শুল্কের হিসেব দিয়ে কাঠগড়ায় তুলছেন মোদী সরকারকে। এর মাঝে পড়ে দামের ধাক্কায় জেরবার হচ্ছেন সাধারণ মানুষ।
তেল নিয়ে আমজনতা তো বটেই, ক্ষুব্ধ ওয়েস্ট বেঙ্গল পেট্রোলিয়াম ডিলার্স অ্যাসোসিয়েশনও। সংগঠনের যুগ্ম সম্পাদক প্রসেনজিৎ সেন এ দিন সন্ধ্যেয় বলেন, ‘‘এত দামের কারণেই বিক্রি কমেছে। আমরা লিটার পিছু কমিশন পাই। ফলে দর বাড়লেও আখেরে বিক্রি কমায় আয় কমছে। রাজ্যে যেখানে যেখানে দাম ১০০ টাকা ছাড়াবে, সেই পাম্পে এ দিন থেকেই রোজ সন্ধ্যা সাতটা থেকে সাড়ে সাতটা পর্যন্ত আলো জ্বালাব না।’’ কর ছাঁটার জন্য কেন্দ্র-রাজ্য, দু’পক্ষের কাছেই আর্জি জানাচ্ছেন তাঁরা।
কর কমানোর আর্জি অবশ্য বহু দিন ধরেই উঠছে। কিন্তু কেন্দ্র তাতে কান দেয়নি। পশ্চিমবঙ্গ ফেব্রুয়ারিতে লিটারে ১ টাকা কর কমিয়েছিল ঠিকই। তবে যে দিন তা কমে, সে দিনও তেল সংস্থাগুলি ফের দাম বাড়ানোয় কর কমানোর সুফল তেমন পাননি রাজ্যবাসী। সংস্থাগুলির পাল্টা দাবি, কেন্দ্রীয় শুল্ক বাড়ায় ভ্যাট এক রেখেও লিটার পিছু রাজ্যগুলির আয় বেড়েছে। উল্লেখ্য, এ দিন চেন্নাইতেও সেঞ্চুরি করেছে পেট্রল। ১০০ টাকার গণ্ডিতে ঢুকেছে পঞ্জাবের জলন্ধর, ওড়িশার ভুবনেশ্বরের মতো শহরও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy