ফাইল চিত্র।
গ্যারাজে মিস্ত্রির কাজ করতেন বছর আটত্রিশের যুবক। হাতুড়ি পিটিয়ে গাড়ির যন্ত্রাংশ ভাঙার সময়েই ঘটে বিপত্তি। আচমকা কিছু ছিটকে ঢুকে গিয়েছিল গলায়। শ্বাসনালি ভেদ করে শিরদাঁড়ার কাছে আটকে থাকা সেই লোহার টুকরো বার করে যুবককে বড় বিপদ থেকে বাঁচাল এসএসকেএম হাসপাতাল।
প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টা ধরে অস্ত্রোপচার করে মটরের দানার মতো লোহার টুকরোটি বার করে আনেন ওই হাসপাতালের নাক-কান-গলা (ইএনটি) বিভাগের চিকিৎসকেরা। তাঁরা জানাচ্ছেন, সুস্থ রয়েছেন গৌরাঙ্গ হালদার নামে বহরমপুরের বাসিন্দা ওই যুবক। স্বরযন্ত্র বসে যাওয়ার মতো সমস্যাও আপাতত দেখা দেয়নি রোগীর।
বহরমপুরের পঞ্চাননতলার বাসিন্দা গৌরাঙ্গ বাড়ির কাছেই একটি গ্যারাজে গাড়ির কাঠামো তৈরির কাজ করেন। ৯ জুন, বুধবার সকালে তিনি কাজে গিয়েছিলেন। সেখানে গাড়ির যন্ত্রাংশে হাতুড়ি পিটিয়ে কাজ করছিলেন ওই যুবক। তিনি চিকিৎসকদের জানিয়েছেন, আচমকা গলার মাঝে কিছু ফুঁড়ে যাওয়ার মতো ব্যথা অনুভব করেন। গলায় হাত দিয়ে দেখেন, অতি ছোট একটি ফুটো দিয়ে রক্ত বেরোচ্ছে। ওই যুবকের স্ত্রী রিনা বলেন, ‘‘স্থানীয় এক চিকিৎসকের কাছে নিয়ে গেলে, তিনি গলার সামনে আটকে থাকা ছোট্ট একটি লোহার টুকরো বার করেন। কিন্তু তার পরেও তীব্র যন্ত্রণা কমছিল না।’’ স্থানীয় নার্সিংহোমে নিয়ে গেলে, পরীক্ষা করে জানানো হয়, গলার ভিতরে আর একটি লোহার টুকরো আটকে রয়েছে।
ওই রাতেই পিজি-তে ভর্তি হন গৌরাঙ্গ। নাক-কান-গলা বিভাগের চিকিৎসক অরিন্দম দাস জানান, যুবকের গলার এক্স-রে করে দেখা যায়, শ্বাসনালি ফুঁড়ে লোহার টুকরো আটকে আছে শিরদাঁড়ার কাছে। পরদিন অর্থাৎ, ১০ জুন গলার সিটি স্ক্যান করেন চিকিৎসকেরা। অরিন্দম বলেন, ‘‘ছোট্ট লোহার টুকরোটি ঠিক কোন জায়গায় রয়েছে এবং গলার ভিতরে আর কী ক্ষতি হয়েছে তা সিটি স্ক্যানে দেখে নেওয়া হয়।’’ চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, গলার ওই অংশে অতি সূক্ষ্ম স্নায়ু, শিরা, ধমনী রয়েছে। যার সঙ্গে মস্তিষ্কের যোগ রয়েছে। তাই গলা কেটে অস্ত্রোপচার করা ঝুঁকির ছিল।
পিজি-র ট্রমা কেয়ারে অস্ত্রোপচারে অংশ নেন ইএনটি বিভাগের শিক্ষক-চিকিৎসক অরুণাভ সেনগুপ্ত, অরিন্দম দাস, পৌলমী সাহা, অনিকেত চৌধুরী, সৃজনা সাহা। তাঁরা জানান, ‘সি-আর্ম’ যন্ত্রের (অস্ত্রোপচারের সময়ে রোগীর শরীরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গের ছবি এক টানা এক্স-রে করে তুলতে থাকে) মাধ্যমে লোহার টুকরোটির প্রকৃত অবস্থান জেনে সেটিকে বার করা হয়। চিকিৎসকদের মতে, ওই লোহার টুকরো ভিতরে থেকে গেলে ধীরে ধীরে সংক্রমণ হয়ে রোগীর জীবনের ঝুঁকি বাড়ত।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy