Advertisement
০৩ মে ২০২৪
বিধাননগর পুর নিগম

মেয়র পারিষদকে সরানোর ভাবনা

ছেলের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়েছে। এ বার মেয়র পারিষদের পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হতে পারে বাবাকে।

নিজেদের জমিতে বেআইনি দোকানের কাঠামো ভেঙে দিচ্ছে পূর্ত দফতর। সোমবার। — নিজস্ব চিত্র

নিজেদের জমিতে বেআইনি দোকানের কাঠামো ভেঙে দিচ্ছে পূর্ত দফতর। সোমবার। — নিজস্ব চিত্র

প্রবাল গঙ্গোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ০৭ জুন ২০১৬ ০১:১২
Share: Save:

ছেলের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়েছে। এ বার মেয়র পারিষদের পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হতে পারে বাবাকে।

ফেব্রুয়ারি মাসে রাজারহাট-গোপালপুরের জগৎপুরে খুন হন তৃণমূলকর্মী সঞ্জয় রায় ওরফে বুড়ো। সেই ঘটনায় নাম জড়িয়েছিল সেখানকার যুব তৃণমূল নেতা বিশ্বজিৎ (বাবাই) বিশ্বাসের। এ বার তাঁর বাবা বীরেন্দ্রনাথ বিশ্বাসকেও বিধাননগর পুর নিগমের মেয়র পারিষদ পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হতে পারে বলেই তৃণমূল সূত্রে খবর। পুর নিগমের ২২ নম্বর ওয়ার্ডের মেয়র পারিষদ বীরেনবাবু জল সরবরাহ বিভাগের মেয়র পারিষদ।

নিউ টাউন, বিধাননগর ও রাজারহাট-গোপালপুর এই তিন বিধানসভা কেন্দ্র নিয়ে বিধাননগর পুর নিগম। সেখানকার বিধায়কদের প্রস্তাবিত প্রার্থীদেরই তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব বিধাননগরের মেয়র পারিষদদের নির্ধারণ করেছিলেন। ২২ নম্বর ওয়ার্ডটি রাজারহাট-গোপালপুর বিধানসভা কেন্দ্রের অধীনে থাকায় মেয়র পারিষদ হিসেবে বীরেন্দ্রনাথবাবুর নাম প্রস্তাব করেছিলেন স্থানীয় বিধায়ক তথা মন্ত্রী পূর্ণেন্দু বসু।

তবে সূত্রের খবর, সম্ভবত পূর্ণেন্দুবাবু বা রাজারহাট-গোপালপুরের বাসিন্দা তথা রাজ্যসভার সাংসদ দোলা সেনই এখন চাইছেন বীরেন্দ্রনাথবাবুকে মেয়র পারিষদ পদ থেকে সরিয়ে দিতে।

কেন? মন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ মহলের খবর, বীরেন্দ্রনাথবাবুর প্রতি মন্ত্রী বা সাংসদের ব্যক্তিগত ক্ষোভ নেই। তবে বাবাইয়ের নামে খুনের অভিযোগে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হওয়ার পরে দলের ভাবমূর্তি স্বচ্ছ রাখতেই তাঁকে সরানোর কথা ভাবা হয়েছে। বীরেন্দ্রনাথবাবু অবশ্য বলেন, ‘‘দল মনে করলে সরিয়ে দিতেই পারে। ছেলে বিপদে পড়েছে। আমি সে সব নিয়েই বেশি চাপে আছি।’’

সূত্রের খবর, ছেলেকে বাঁচাতে বীরেন্দ্রনাথবাবু শুক্রবার রাতে উত্তর ২৪ পরগনা জেলা তৃণমূলের এক শীর্ষ নেতার দ্বারস্থ হন। বাবাইয়ের বিরুদ্ধে আগে থেকেই সিণ্ডিকেটের নামে তোলাবাজি, পুলিশ পেটানো, সরকারি জমিতে লোক বসানো, ভোটের সময়ে গোলমাল পাকানো-সহ নানা অভিযোগ রয়েছে। তবে দোলা-পূর্ণেন্দু শিবিরের ঘনিষ্ঠ হওয়ায় বাবাইকে কেউ ছুঁতে পারেনি।

যদিও স্থানীয় সূত্রে খবর, দলের শীর্ষ নেতৃত্ব বাবাইয়ের বিধাননগর পুর নিগমের নির্বাচনের টিকিটের আবেদন খারিজ করার পরেই দোলা-পূর্ণেন্দু শিবিরের সঙ্গে তাঁর ব্যবধান বাড়ে। প্রকাশ্যে বাবাই মন্ত্রী ও সাংসদের বিরোধিতা শুরু করেন। বিধানসভা ভোটের আগে বাবাই ও তাঁর বাহিনীকে তুষ্ট রাখতে বীরেন্দ্রনাথবাবুকে মেয়র পারিষদ করা হয়। তবে ব্যবধান কমেনি। ইতিমধ্যেই জগৎপুরে খুন হন বুড়ো। বাবাই বিধানসভা নির্বাচনে তারকেশ্বরে চলে যান ভোটের কাজ করতে। তার পর থেকেই বাবাই এলাকায় ফেরেননি। বিধানসভা ভোটের ফলাফলের দু’দিনের মধ্যেই বুড়োর খুনের ঘটনায় বাবাইয়ের বিরুদ্ধে চার্জশিট দেয় পুলিশ।

সোমবারও বাগুইআটিতে পূর্ত দফতর তাদের জমিতে ১২টি বেআইনি দোকানের কাঠামো ভেঙেছে। টাকা নিয়ে বাবাই সেগুলি বসাচ্ছিলেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হয় এমন কাজকর্মের সঙ্গে যুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এলাকার খবর, সেই নির্দেশকে সামনে রেখেই এ বার বাবা-ছেলে দু’জনের দিক থেকেই হাত গুটিয়ে ফেলা হচ্ছে। কারণ সিণ্ডিকেটের দৌরাত্ম্যের জেরে রাজারহাট-গোপালপুরে ভোট কমেছে পূর্ণেন্দুবাবুরও। তাঁর ঘনিষ্ঠ এক নেতৃত্বের কথায় এ দিন সেই ইঙ্গিতই মিলেছে। তিনি এ দিন বলেন, ‘‘বীরেন্দ্রনাথবাবু আপাতত মেয়র পারিষদ আছেন। বাবাইয়ের কাজকর্মের খবর আমরা পরে জেনেছি। এই ভুলের জন্য প্রয়োজনে মানুষের কাছে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইব।’’

মেয়র সব্যসাচী দত্তকে এ নিয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি ফোনে বলেন, ‘‘বাইরে আছি। কথা বলতে পারব না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

mayor-in-council Bidhannagar Municipality
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE