Advertisement
E-Paper

বড়দিনে শহরে প্লাস্টিকের ‘উৎসব’

মঙ্গলবার সকাল থেকেই বড়দিনের ভিড় ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে পার্ক স্ট্রিট, ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল, ময়দান ও চিড়িয়াখানা-সহ বিভিন্ন জায়গায়।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৬ ডিসেম্বর ২০১৮ ০১:২৫
যত্রতত্র: এ ভাবেই প্লাস্টিকে ভরে গিয়েছে চিড়িয়াখানা চত্বর। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী

যত্রতত্র: এ ভাবেই প্লাস্টিকে ভরে গিয়েছে চিড়িয়াখানা চত্বর। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী

কোথাও প্লাস্টিকের ঠোঙা। কোথাও আবার থার্মোকলের থালা-বাটি। বড়দিনের উদ্‌যাপন যেন শহর জুড়ে নিয়ম ভাঙার উৎসব!

তাই কলকাতা ময়দানই হোক বা চিড়িয়াখানা— শহরের প্রায় সর্বত্রই প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা ও নজরদারি এড়িয়ে ছড়িয়ে পড়ল প্লাস্টিক। বহু জায়গায় যা ঘটল নিরাপত্তারক্ষীদের চোখের সামনেই।

মঙ্গলবার সকাল থেকেই বড়দিনের ভিড় ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে পার্ক স্ট্রিট, ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল, ময়দান ও চিড়িয়াখানা-সহ বিভিন্ন জায়গায়। আর দর্শকদের ‘ভ্রমণসঙ্গী’ হিসেবে প্রায় সর্বত্রই ঘুরে বেড়িয়েছে প্লাস্টিকের প্যাকেটও! তবে ভিক্টোরিয়ায় কর্তৃপক্ষ কড়াকড়ি করায় দর্শকেরা জায়গাটি নোংরা করতে পারেননি।

সম্প্রতি চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ প্লাস্টিকের ব্যবহার বন্ধ করতে চিড়িয়াখানা চত্বর জুড়ে প্রচার শুরু করেছেন। সেখানে বর্জ্য ফেলার বড় সুদৃশ্য প্লাস্টিকের ভ্যাটে লেখা রয়েছে, এই অঞ্চলে প্লাস্টিক ব্যবহার করা যাবে না। অথচ, অধিকাংশ দর্শকই সেই নির্দেশ মানছেন না। প্লাস্টিকের পাত্রেই চলছে খাওয়া-দাওয়া ও জলপান। তার পরে সেগুলি ফেলা হচ্ছে যত্রতত্র। শ্যামনগর থেকে চার বছরের ছেলেকে নিয়ে সাতসকালেই চিড়িয়াখানায় এসেছিলেন জগমোহন বসু। তিনি বলেন, ‘‘চিড়িয়াখানায় প্লাস্টিক ব্যবহারের উপরে যে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে, তা আমার জানা ছিল না। সেই কারণেই প্লাস্টিকের বোতল আর ঠোঙায় খাবার নিয়ে এসেছি।’’

(পাশে) ময়দানে ইতিউতি পড়ে প্লাস্টিক। মঙ্গলবার।

চিড়িয়াখানার সদস্য-সচিব বিনোদকুমার যাদব বলেন, ‘‘প্লাস্টিকের জঞ্জাল যাতে পড়ার সঙ্গে সঙ্গেই সরানো হয়, তার জন্য বাড়তি কর্মী নিয়োগ করেছি।’’ কিন্তু প্লাস্টিকের ব্যবহার আটকানো যাচ্ছে না কেন? এ প্রশ্নের অবশ্য কোনও সদুত্তর মেলেনি।

রাজ্য পরিবেশ দফতর সূত্রের খবর, ৫০ মাইক্রনের চেয়ে পাতলা কোনও প্লাস্টিকজাত দ্রব্য ব্যবহার করা যায় না। এ দিন চিড়িয়াখানার মতো জায়গায় যে ভাবে অবাধে প্লাস্টিকের ব্যবহার দেখা গেল, তাতে সেখানকার নজরদারি নিয়েও প্রশ্ন উঠে গিয়েছে।

প্রসঙ্গত, উৎসবের মরসুমের আগেই শহর জুড়ে প্লাস্টিক ব্যবহারের বিরুদ্ধে প্রচার চালানোর প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছিল কলকাতা পুরসভা। কিন্তু সেই প্রচার-পর্ব নিয়েও সংশয় তৈরি হয়েছে। পুরসভা সূত্রের খবর, প্লাস্টিক-বিরোধী প্রচার অভিযান চালানোর জন্য দু’টি দফতরকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। পুর বাজারগুলিতে প্লাস্টিক ব্যাগ বন্ধের প্রচার চালাবে বাজার দফতর। সেখানে কাগজের ব্যাগও বিলি করা হবে ক্রেতা ও বিক্রেতাদের মধ্যে। বেসরকারি বাজারগুলিতে আবার ব্যানার, হোর্ডিংয়ের মাধ্যমে প্লাস্টিক ব্যাগ বন্ধে প্রচার করবে পুরসভার প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্ট ইউনিট (পিএমইউ)।

পুর আধিকারিকদের একাংশ জানাচ্ছেন, বাজারে বিলি করার জন্য প্রাথমিক ভাবে ১০ হাজার কাগজের ব্যাগ কেনা হবে। এর জন্য বরাদ্দ হয়েছে ২ লক্ষ ৪০ হাজার টাকা। ৩২০টি ফ্লেক্স ব্যানার তৈরি করার খরচ ধরা হয়েছে ৮৬ হাজার ৪০০ টাকা। আর ৩০ হাজার লিফলেট ছাপাতে খরচ হবে ৯০ হাজার টাকা। জিএসটি বাবদ সব মিলিয়ে পুরো প্রকল্পের জন্য ৪ লক্ষ ৯১ হাজার ৩৫২ টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। সব মিলিয়ে আয়োজন সম্পূর্ণ! কিন্তু সে প্রচার কবে থেকে শুরু হবে, তা জানেন না কেউই!

এক পদস্থ আধিকারিকের কথায়, ‘‘কবে থেকে প্রচার শুরু হবে, তা নির্দিষ্ট করে কিছু বলা যাচ্ছে না।’’ যদিও পুরসভার পরিবেশ দফতরের মেয়র পারিষদ স্বপন সমাদ্দার বলেন, ‘‘প্লাস্টিক ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা নিয়ে ইতিমধ্যেই পুরসভা সচেতনতা অভিযান চালিয়েছে। আরও প্রচার চালানো হবে। এ নিয়ে যে আইন রয়েছে, তা সচেতনতা অভিযানের পরে বাস্তবায়িত করা হবে।’’ পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্তের কথায়, ‘‘প্লাস্টিক ব্যবহারের উপরে নির্দেশিকা থাকলেই হবে না। যেখানে এই প্লাস্টিক তৈরি হয়েছে, সেই কারখানাও বন্ধ করা উচিত। তা হয়নি।’’

এ দিন অবশ্য ব্যতিক্রম ছিল ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল চত্বর। সকাল থেকেই সেখানে ছিল উপচে পড়া ভিড়। টিকিট কেটে ভিতরে ঢোকার সময়েই দর্শকদের ব্যাগ পরীক্ষা করেছেন নিরাপত্তারক্ষীরা। কারও কাছে প্লাস্টিকের প্যাকেট থাকলে তাঁরা তা বাইরে রেখেই ভিতরে যাওয়ার অনুমতি পেয়েছেন। ফলে, ভিক্টোরিয়ার ভিতরে কোথাও সে রকম প্লাস্টিক বা থার্মোকল চোখে পড়েনি।

Xmas Plastic Pollution
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy