Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

নিগ্রহের তদন্তে ‘নিষ্ক্রিয়’ পুলিশ

এক যুবককে রাস্তায় ফেলে বেধড়ক মেরে মাথা ফাটিয়ে দিল স্থানীয় কিছু লোকজন। তার পর থেকে গত প্রায় এক মাস ধরে তাঁরা বাড়িতে রয়েছেন, এলাকায় ঘুরে বেড়াচ্ছেন, ‘দাদাগিরি’ও চালাচ্ছেন। কিন্তু কসবা থানার পুলিশ তাদের খুঁজেই পাচ্ছে না!

তানিয়া বন্দ্যোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ০৯ এপ্রিল ২০১৭ ০২:০৫
Share: Save:

এক যুবককে রাস্তায় ফেলে বেধড়ক মেরে মাথা ফাটিয়ে দিল স্থানীয় কিছু লোকজন। তার পর থেকে গত প্রায় এক মাস ধরে তাঁরা বাড়িতে রয়েছেন, এলাকায় ঘুরে বেড়াচ্ছেন, ‘দাদাগিরি’ও চালাচ্ছেন। কিন্তু কসবা থানার পুলিশ তাদের খুঁজেই পাচ্ছে না! এক অফিসারের বক্তব্য, ‘‘মার খাওয়া যুবক অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ জানিয়েছিলেন। কিন্তু না চিনলে ধরব কী করে! তবে তদন্ত জারি আছে, বন্ধ হয়নি।’’

১১ মার্চ রাত ন’টা নাগাদ কসবার যে অভিজাত মল-সংলগ্ন পঞ্জাবি রেস্তোরাঁর সামনে অবাধে মারধরের ঘটনাটি ঘটেছে, তার কাছাকাছিই থাকেন ১০১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সুশান্তকুমার ঘোষ। অভিযোগ, সে দিন যাঁরা অর্পণ সরকার নামে ওই যুবকের উপর হামলা চালিয়েছিলেন, তাঁদের সঙ্গে কাউন্সিলরের ভালই যোগাযোগ রয়েছে। ঘটনার পরে ‘দাদা’ নিজে গিয়ে সবটা জেনে, বুঝে এসেছেন — এমনই দাবি এলাকাবাসীর। কাউন্সিলর অবশ্য বলেছেন, ‘‘আমি জানি না। আমার লোক হিসেবে কেউ পরিচয় দিতেই পারে। তাতে আমার কিছু করার নেই। তবে এই ঘটনা সম্পর্কে আমি কিছু জানি না। কাউকে গ্রেফতার করার কাজ পুলিশের।’’

সেই রাতে স্ত্রী ও শিশুকন্যাকে নিয়ে ওই রেস্তোরাঁয় খাবার কিনতে গিয়েছিলেন অর্পণ। রেস্তোরাঁর সামনের রাস্তায় তাঁর গাড়ি দাঁড় করানো ছিল। অভিযোগ, কেন সেখানে তিনি গাড়ি দাঁড় করিয়ে রেখেছেন, সেই ‘অপরাধে’ স্থানীয় চক্রবর্তী পাড়ার বস্তির জনা তিরিশ ছেলে তাঁর উপরে ঝাঁপিয়ে পরে। তার পরে স্ত্রী ও শিশুকন্যার সামনেই চলে মারধর। তাঁর মাথা ফেটে যায়। হাসপাতালে বেশ কয়েকটি সেলাইও করতে হয়। ঘটনার পরে অর্পণবাবু কসবা থানায় লিখিত অভিযোগ করেন।

অভিযোগ পেয়ে পুলিশ কী কী করেছে? অর্পণ জানান, তাঁকে নিয়ে সেই রাতেই ওই বস্তিতে গিয়েছিল পুলিশ। এবং যথারীতি কাউকে দেখতে পাওয়া যায়নি। কিন্তু তার পরে আর কোনও দিন তদন্তের কাজে তাঁকে ডাকা হয়নি। থানা জানাচ্ছে, অর্পণবাবু অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছেন। তার ভিত্তিতে বেশ কয়েক জনকে আটক করা হলেও চিনতে পারেননি অভিযোগকারী। অর্পণবাবু অবশ্য এই দাবি মানতে চাননি।

শুক্রবার ও শনিবার ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা গেল, সেই রেস্তোরাঁর সামনে বেশ কয়েকটি ল্যাক্সারি ট্যাক্সি দাঁড়িয়ে আছে। অভিযুক্তদের অনেকেই পাড়ায় রয়েছেন। এমনই এক জনের সাফ কথা, ঘটনার পরের দিন ওই রাস্তার উপরে দাঁড়িয়ে থাকা কয়েকটি গাড়ি থানা নিয়ে যায়। গাড়ির চালকেরা বস্তিতেই থাকেন। তাই প্রতিবাদে বস্তিবাসীরা সবাই মিলে থানায় গেলে গাড়িগুলি ছেড়ে দেয় থানা। তার পরে রাস্তায় যথারীতি গাড়ি থাকে। সমস্যা হয় না। তা হলে ওই যুবক গাড়ি রেখে কী অরপাধ করলেন? ছেলেটির জবাব, ওটা তো বাইরের গাড়ি, এলাকার নয়।

বস্তির কয়েক জন বাসিন্দা জানান, ওই রাস্তায় লাক্সারি ট্যাক্সি ও হলুদ ট্যাক্সি থাকে। ট্যাক্সিচালকেরা বস্তিতেই থাকেন। তাই তাঁদের ‘জায়গায়’ অন্য কেউ গাড়ি রাখলেই ঝামেলা হয়। অর্পণবাবুও জানান, সেদিনও গাড়ি রাখার পরেই বস্তির এক জন তাঁকে বলেছিলেন, ‘‘এখানে অন্য গাড়ি থাকবে। গাড়ি সরিয়ে দাও!’’ অর্পণবাবু তখন বলেন, ‘‘খাবার কিনেই চলে যাব। পাঁচ মিনিট সময় দিন।’’ তখন এক মহিলা হুঙ্কার দেন, ‘‘গাড়ির চাকার হাওয়া বের করে দেব।’’

পুলিশ অবশ্য এ সবের কিছুই জানে না। থানার মতো ডিসি (এসএসডি) বন্দনা বরুণ চন্দ্রশেখরও প্রশ্ন শুনে বলেছেন, ‘‘তদন্তের অগ্রগতি সম্পর্কে খবর নিতে হবে।’’

অভিযুক্তদের না চিনতে পারলেও ঘটনার পরে রেস্তোরাঁর মালিক পি রাজুকে ডেকে একটি নির্দেশ দিয়েছে পুলিশ। তাঁর কথায়, ‘‘থানা থেকে বলা হয়, রেস্তোরাঁর সামনে যেন কোনও ক্রেতা গাড়ি না রাখে। তা ই পুলিশের নির্দেশ মতো কর্মচারী রেখেছি। সে দেখে কেউ গাড়ি রাখছে কি না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Assault case Kasba Police inactive
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE