Advertisement
৩০ এপ্রিল ২০২৪

রজতের শরীরে ক্ষত কী ভাবে, খুঁজছে পুলিশ

নিউ টাউনে আইনজীবী রজত দে-র মৃত্যুর ঘটনায় পুলিশের তদন্তকারী অফিসারদের এখন ভাবাচ্ছে তাঁর মৃতদেহের বিভিন্ন অংশে পাওয়া ‘রহস্যময়’ ক্ষতচিহ্ন। রজতের দেহে ওই সমস্ত ক্ষত কী ভাবে হল, সেটাই এখনও বুঝতে পারছে না পুলিশ। তাদের অনুমান, ওই ক্ষতচিহ্নের রহস্যভেদ হলে মৃত্যুর তদন্তও অনেকটা এগিয়ে যাবে।

অনিন্দিতা

অনিন্দিতা

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ০২ ডিসেম্বর ২০১৮ ০০:৫৮
Share: Save:

নিউ টাউনে আইনজীবী রজত দে-র মৃত্যুর ঘটনায় পুলিশের তদন্তকারী অফিসারদের এখন ভাবাচ্ছে তাঁর মৃতদেহের বিভিন্ন অংশে পাওয়া ‘রহস্যময়’ ক্ষতচিহ্ন। রজতের দেহে ওই সমস্ত ক্ষত কী ভাবে হল, সেটাই এখনও বুঝতে পারছে না পুলিশ। তাদের অনুমান, ওই ক্ষতচিহ্নের রহস্যভেদ হলে মৃত্যুর তদন্তও অনেকটা এগিয়ে যাবে।

রজতের স্ত্রী-সহ শ্বশুরবাড়ির চার জনের বিরুদ্ধে খুন, তথ্যপ্রমাণ লোপাট ও ষড়যন্ত্রের মামলা রুজু হয়েছে। যদিও ময়না-তদন্তের রিপোর্ট থেকে খুন না আত্মহত্যা, সে বিষয়ে এখনও নিশ্চিত হতে পারেননি তদন্তকারীরা। পুলিশ সূত্রের খবর, তদন্তকারীদের ধন্দ আরও বেড়ে গিয়েছে রজতের স্ত্রী অনিন্দিতার বয়ানে। প্রাথমিক ভাবে অনিন্দিতা ও তাঁর পরিবারের লোকজন যে বয়ান দিয়েছিলেন, তাতে পুলিশের ধারণা হয়েছিল, আচমকা অসুস্থ হয়েও মৃত্যু হয়ে থাকতে পারে রজতের। কিন্তু অনিন্দিতার সঙ্গে পরিবারের বাকিদের বয়ানে বেশ কিছু জায়গায় অসঙ্গতিও পাওয়া গিয়েছিল। সেই অসঙ্গতির মধ্যেই রহস্যের গন্ধ পান তদন্তকারীরা। এর পরে লাগাতার জিজ্ঞাসাবাদে অনিন্দিতার বয়ানে বেশ কিছু পরিবর্তন লক্ষ করা যায় বলে পুলিশ সূত্রের দাবি। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, শুক্রবার অনিন্দিতা রজতের আত্মহত্যার তত্ত্ব সামনে এনেছেন। তিনি বিছানার চাদর গলায় পেঁচানো অবস্থায় রজতকে দেখেছেন বলে পুলিশের কাছে দাবি করেন।

কিন্তু সেই দাবির সঙ্গে একমত নন তদন্তকারীরা। তাঁদের মতে, রজত যদি আত্মহত্যাই করে থাকেন, তা হলে তাঁর দেহের অবস্থান যেমন থাকার কথা, অনিন্দিতার বয়ান অনুযায়ী তেমনটা ছিল না। তার উপরে ময়না-তদন্তে রজতের গলায় ও সারা শরীরে কিছু ক্ষতচিহ্ন পাওয়া গিয়েছে বলেও খবর। পুলিশের প্রশ্ন, আত্মহত্যার ঘটনা ঘটে থাকলে শরীরের বিভিন্ন জায়গায় এমন ক্ষতচিহ্ন আসবে

কোথা থেকে?

এ বিষয়েও অনিন্দিতাকে লাগাতার জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। শনিবারও দফায় দফায় জেরা করা হয় তাঁকে। পুলিশ সূত্রের খবর, যদি আত্মহত্যার যুক্তি মেনে নিতে হয়, সে ক্ষেত্রে প্রশ্ন ওঠে, অনিন্দিতা বা তাঁর পরিজনেরা প্রথমেই সে কথা পুলিশকে জানালেন না কেন? এই গোপন করার পিছনে কি কাউকে আড়াল করার উদ্দেশ্য ছিল? তা ছাড়া, রজতকে সেই অবস্থায় দেখার পরে অনিন্দিতা কী করলেন, কে বা কারা রজতকে উদ্ধার করলেন ও কেন তাঁকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হল না, সেই সমস্ত প্রশ্নও কিন্তু উঠতে বাধ্য।

রজতের বাবা সমীর দে-র অভিযোগ ছিল, ঘটনার রাতে ওই ফ্ল্যাটে গিয়ে তিনি দেখেছিলেন, সব লন্ডভন্ড হয়ে রয়েছে। পড়ে আছে রজতের দেহ। সে সময়ে তিনি অনিন্দিতা কিংবা তাঁর পরিবারের কাউকে ঘটনাস্থলে দেখতে পাননি বলেও দাবি করেন সমীর। যদিও শ্বশুরের সেই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন অনিন্দিতা।

রজতের মোবাইল পরীক্ষা করে পুলিশ জেনেছে, মৃত্যুর এক ঘণ্টা আগেও তিনি হোয়াট্সঅ্যাপে চ্যাট করেছিলেন। ওই সময়ে অনিন্দিতা ও তাঁর পরিজনেদের ফোনের টাওয়ার লোকেশন কোথায় ছিল, তা জানতে সাইবার বিশেষজ্ঞদের সাহায্য নেওয়া হচ্ছে। বাইরে থেকে ওই ফ্ল্যাটে কেউ এসেছিলেন কি না, তা-ও দেখা হচ্ছে। শনিবার বিধাননগরের পুলিশ কমিশনার জ্ঞানবন্ত সিংহ তদন্তের গতিপ্রকৃতি সম্পর্কে খোঁজ নিতে নিউ টাউন থানায় গিয়েছিলেন। পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনাটি খুন না আত্মহত্যা, তা জানতে চিকিৎসকদের সঙ্গেও কথা বলা হবে। তবে খুন হয়ে থাকলে খুনির ‘মোটিভ’ কী ছিল, সেটাও ভাবাচ্ছে পুলিশকে। রজতের মৃত্যুতে কারা কী ভাবে লাভবান হত, সে বিষয়েও খোঁজ নিচ্ছে পুলিশ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Death Investigation Lawyer Injury Police
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE