Advertisement
E-Paper

প্ররোচনার অভিযোগে ধরা হল তরুণীকে

নিবার ওই তরুণীকে আলিপুরের মুখ্য বিচার বিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে হাজির করানো হয়। পুলিশ আদালতে জানায়, যুবকের আত্মহত্যায় তদন্তের প্রয়োজন রয়েছে। তরুণীকে পুলিশি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেওয়া হোক।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০৮:১০

রানিকুঠির নেতাজিপল্লির এক যুবকের আত্মহত্যার ঘটনায় জড়িত সন্দেহে হাওড়ার ডোমজুড় থেকে শুক্রবার রাতে এক তরুণীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। শনিবার ওই তরুণীকে আলিপুরের মুখ্য বিচার বিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে হাজির করানো হয়। পুলিশ আদালতে জানায়, যুবকের আত্মহত্যায় তদন্তের প্রয়োজন রয়েছে। তরুণীকে পুলিশি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেওয়া হোক। ওই আদালতের ভারপ্রাপ্ত বিচারক কেয়া বালা ধৃতকে ২৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত পুলিশি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন।

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, গত ১৫ সেপ্টেম্বর রাতে নেতাজিপল্লির একটি ফ্ল্যাট থেকে সোমক
দেবনাথ (২৪) নামে ওই যুবকের ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার করা হয়। গলায় ফাঁস দিয়ে তিনি আত্মহত্যা করেন বলে ময়না-তদন্তের প্রাথমিক রিপোর্টে জানা গিয়েছে। সোমক পেশায় গাড়িচালক। তিনি একটি ট্যাক্সি সার্ভিস সংস্থায় কাজ করতেন। ঘটনার রাতেই যুবকের পরিবার থানায় দীপিকা ওরফে সুমি দত্ত নামে এক তরুণীর বিরুদ্ধে আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগ দায়ের করে। তার ভিত্তিতেই তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ।

প্রাথমিক তদন্তের পরে এবং সোমকের পরিবারের লোকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ জানিয়েছে, ২০১৩ সালে ডোমজুড়ের বাসিন্দা সুমির সঙ্গে তাঁর আলাপ হয়। সেই সময়েও সোমক গাড়ি চালাতেন। সোমকের পরিবারের দাবি, সুমি টেলিভিশনে সিরিয়ালের অভিনেত্রী এবং মডেলিং-ও করেন। কয়েক বছর ধরে সোমকের সঙ্গে সুমির ঘনিষ্ঠতা বাড়ে। সম্প্রতি নেতাজিপল্লিতে মাসিক আট হাজার টাকা ভাড়ার একটি ফ্ল্যাটে এক সঙ্গে থাকছিলেন সোমক ও সুমি। সোমকের পরিবার নেতাজিনগরে নিজেদের বাড়িতে থাকে। সোমকের পরিবারের দাবি, সুমির সঙ্গে সোমকের বিয়ে হয়নি।

সোমকের মা ইন্দ্রাণীদেবী এবং বাবা দেবব্রত দেবনাথ পুলিশকে জানিয়েছেন, তাঁদের ছেলের
সঙ্গে সুমির সম্পর্ক সাম্প্রতিক কালে ভাল যাচ্ছিল না। ছেলে তাঁদের সব ঘটনা খুলে বলতেন না, কিন্তু ছেলের আচরণ এবং ছোটখাটো কথায় তাঁরা তা টের পেতেন বলে জানিয়েছেন সোমকের মা-বাবা। ইন্দ্রাণীদেবী পুলিশকে জানিয়েছেন, ১৫ সেপ্টেম্বর রাতে তাঁর ছেলে ফ্ল্যাট থেকে তাঁকে মোবাইল ফোনে হোয়াটসঅ্যাপ করে বার্তা পাঠান যে, কয়েক দিন হল তাঁর বান্ধবী তাঁকে ছেড়ে চলে গিয়েছেন। তিনি যেন সুমিকে ফোন করে বোঝানোর চেষ্টা করেন সোমকের সঙ্গে সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে এবং নেতাজিপল্লিতে ফিরে আসতে। ছেলে তার পরে একটি
বার্তা পাঠিয়ে জানান, তিনি মানসিক ভাবে খুবই ভেঙে পড়েছেন। তিনি আর বেঁচে থাকতে চান না।

পুলিশের কাছে ইন্দ্রাণীদেবী জানিয়েছেন, তিনি ওই তরুণীর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেছিলেন।
কিন্তু তাঁর সঙ্গে কথা বলতে পারেননি। ছেলের বার্তা পেয়ে ওই রাতেই ছেলের ভাড়া নেওয়া ফ্ল্যাটে গিয়ে তাঁরা দেখেন, সোমক সিলিং থেকে গলায় ফাঁস দিয়ে ঝুলছেন। পুলিশ তাঁকে উদ্ধার করে স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিল। কিন্তু সেখানকার চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।

সোমকের মৃত্যুর পরে ওই ফ্ল্যাটে অনুসন্ধান চালিয়ে পুলিশ একটি সুইসাইড নোট উদ্ধার করে। উদ্ধার হয় ওই যুবকের মোবাইল ফোনটিও। পুলিশের দাবি, সুইসাইড নোটে সোমক অভিযুক্ত তরুণীকেই তাঁর মৃত্যুর জন্য দায়ী করেছেন। মাকেও তিনি মৃত্যুর আগে জানিয়েছেন, তাঁর মৃত্যুর জন্য সুমিই দায়ী।

এ দিন দুপুরে আলিপুর আদালতে ওই তরুণীকে হাজির করিয়ে তাঁকে পুলিশি হেফাজতে রাখার আবেদন জানান সরকারি কৌঁসুলি।
ওই আবেদনের বিরোধিতা করে তরুণীর জামিনের আবেদন জানান তাঁর কৌঁসুলি। তিনি জানান, ঘটনার চার-পাঁচ দিন আগে থেকেই নেতাজিপল্লির ফ্ল্যাটে থাকছিলেন না তাঁর মক্কেল। তাই তাঁর বিরুদ্ধে আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগ ওঠা সম্ভব নয়। তা ছাড়া সুইসাই়ড নোটের লেখা যে মৃতেরই, তার সপক্ষেও কোনও প্রমাণ দাখিল করতে পারেনি পুলিশ।
এ রপাল্টা দাবিতে সরকারি কৌঁসুলি জানান, হোয়াটসঅ্যাপ বার্তাই কেবল নয়, আরও অনেক তথ্যপ্রমাণ রয়েছে অভিযুক্ত তরুণীর বিরুদ্ধে। আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগ নিয়ে আরও তথ্যপ্রমাণ সংগ্রহ করতে অভিযুক্তকে পুলিশে হেফাজতে রাখা দরকার। দু’পক্ষের আইনজীবীর বক্তব্য শুনে অভিযুক্ত তরুণীকে ২৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত পুলিশি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন বিচারক।

Arrest Suicide
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy