Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

কাবাব থেকে লেগপিস, এক জনের উচ্ছিষ্ট খাবার যাচ্ছে অন্যের পাতে!

শুধু জীবনের ধন নয়, রেস্তোরাঁর উচ্ছিষ্ট খাবারও সব সময়ে ফেলা যায় না। রামবাবুর প্লেটে পড়ে থাকা চিকেন লেগ পিস ফ্রিজে ঢুকে পরের দিনই হয়তো মিশে যাচ্ছে শ্যামবাবুর বিরিয়ানিতে। আবার দুপুরে শ্যামবাবুর না খাওয়া কাবাবের টুকরোই হয়তো রাতে চলে এল যদুবাবুর প্লেটে।

অ-খাদ্য: জমিয়ে রাখা খাবারে জন্মেছে ছত্রাক। ভাসছে পোকা।

অ-খাদ্য: জমিয়ে রাখা খাবারে জন্মেছে ছত্রাক। ভাসছে পোকা।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ২০ মে ২০১৭ ০২:৩৩
Share: Save:

জীবনের ধন কিছুই যায় না ফেলা।

শুধু জীবনের ধন নয়, রেস্তোরাঁর উচ্ছিষ্ট খাবারও সব সময়ে ফেলা যায় না। রামবাবুর প্লেটে পড়ে থাকা চিকেন লেগ পিস ফ্রিজে ঢুকে পরের দিনই হয়তো মিশে যাচ্ছে শ্যামবাবুর বিরিয়ানিতে। আবার দুপুরে শ্যামবাবুর না খাওয়া কাবাবের টুকরোই হয়তো রাতে চলে এল যদুবাবুর প্লেটে।

গল্প নয়। এটাই বাস্তব। শুক্রবার দমদম রোডের একটি বড় রেস্তোরাঁয় আচমকা হানা দিয়ে এমনটাই আবিষ্কার করেছেন দক্ষিণ দমদম পুরসভা ও এনফোর্সমেন্ট শাখার কর্তারা। সঙ্গে ছিলেন পুলিশকর্মীরাও। এই ঘটনায় এক কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

এনফোর্সমেন্ট শাখার কর্তারা জানান, ওই রেস্তোরাঁর ফ্রিজে মিলেছে প্রচুর উচ্ছিষ্ট খাবার। এখানেই অবশ্য শেষ নয়। তাঁরা দেখেন, খাবারে মাছি-আরশোলারা ঘুরে বেড়াচ্ছে অবাধে। কিছু খাবারে আবার মরা মাছি ও আরশোলাও মিলেছে। ওই রেস্তোরাঁয় রান্নার জন্য যে সস্তার তেল ব্যবহার করা হচ্ছে, তা স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকারক বলে অভিযোগ খোদ পুরসভার চেয়ারম্যান পারিষদের।

বৃহস্পতিবার একটি শপিং মলের ভিতরে কয়েকটি রেস্তোরাঁয় হানা দিয়েছিলেন পুরকর্তারা। সেখানে তাঁরা অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ ও নোংরা দেখে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। সে ব্যাপারে সতর্কও করে দেন। ওই দিনই খাদ্যমন্ত্রী জানান, এ সব ক্ষেত্রে এনফোর্সমেন্ট শাখার ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ।

পচা গন্ধে নাকে হাত অভিযানকারীরই

এ দিন সকালে এনফোর্সমেন্ট শাখা ও দমদম থানার পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে ফের অভিযানে বেরোন দক্ষিণ দমদম পুরসভার চেয়ারম্যান পারিষদ (জনস্বাস্থ্য) দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়, চেয়ারম্যান পারিষদ (স্বাস্থ্য) গোপা পাণ্ডে এবং আধিকারিকেরা। এ দিন দমদম রোডের তিনটি রেস্তোরাঁয় অভিযান চালানো হয়। তিনটি ক্ষেত্রেই অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ নিয়ে ওঠা অভিযোগ চাক্ষুষ করেন তাঁরা।

এনফোর্সমেন্ট শাখা সূত্রে খবর, একটি রেস্তোরাঁর বিরুদ্ধে মামলা রুজু হচ্ছে। বাকিদের ক্ষেত্রে আপাতত সতর্ক করে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। বাসিন্দাদের বক্তব্য, নিয়মিত অভিযান হওয়া উচিত। চেয়ারম্যান পারিষদ দেবাশিসবাবু বলেন, ‘‘গত কাল অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ দেখে অবাক হয়েছিলাম। আজ অভিযান চালাতে গিয়ে গা গুলিয়ে উঠছিল।’’

ধৃত রেস্তোরাঁকর্মী

এ দিন রেস্তোরাঁগুলিতে গিয়ে দেখা যায়, ফ্রিজে আনাজ থেকে উচ্ছিষ্ট মাংসে ছত্রাক পড়ে গিয়েছে। কোথাও বাড়ির রান্নার গ্যাস ব্যবহার করা হচ্ছে। কোথাও রান্নার সামগ্রী বাজেয়াপ্ত হয়েছে। কোথাও ছত্রাক ধরা খাবার ফেলে দেওয়া হয়েছে।

এনফোর্সমেন্ট শাখা সূত্রে খবর, একাধিক অনিয়ম ধরা পড়েছে প্রাথমিক তদন্তেই। তার ভিত্তিতে মামলা শুরু হচ্ছে। খাদ্যে ভেজাল অস্বাস্থ্যকর জেনেও খাবার বিক্রি করা, প্রতারণা ও ষড়যন্ত্রের অভিযোগ আনা হয়েছে। এ দিন দুপুর থেকে কয়েক ঘণ্টা ধরে চলে অভিযান। ওই দোকানের এক কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। দেবাশিসবাবু বলেন, ‘‘প্রাথমিক ভাবে ঠিক হয়েছিল, সতর্ক করে ছেড়ে দেওয়া হবে। কিন্তু যা দেখা গেল, তা মেনে নেওয়া যায় না। তাই সতর্ক করা নয়, সরাসরি মামলা শুরু করা হচ্ছে।’’ তাতেও কি হুঁশ ফিরবে? গোপাদেবী বলেন, ‘‘লাগাতার প্রচারের মাধ্যমে রেস্তোরাঁ-মালিক থেকে ক্রেতা— সবাইকে সচেতন করার কাজ চালিয়ে যাবে পুরসভা।’’

ছবি: স্নেহাশিস ভট্টাচার্য

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Restaurent Raid Dum Dum Arrest
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE