বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা থেকে রাত ১০টা ৫০ মিনিট। প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টা। এই সময়ের মধ্যেই ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে কসবার সাউথ ক্যালকাটা ল কলেজের ক্যাম্পাসের ভিতর। পুলিশের কাছে লিখিত অভিযোগপত্রে তেমনটাই জানিয়েছেন নির্যাতিতা। পুলিশ ওই দিনের সাড়ে সাত ঘণ্টার সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করেছে। আপাতত তদন্তকারীদের নজর তিন অভিযুক্তের ফোন কলের নথিতে। ওই দিন ওই সময়ের মধ্যে বা তার আগে-পরে তিন জনের ফোন থেকে কার কার কাছে ফোন গিয়েছে, কত ক্ষণ কথা হয়েছে, তা খতিয়ে দেখা হবে। আপাতত সংশ্লিষ্ট পরিষেবা প্রদানকারী সংস্থার কাছে ফোন কলের বিস্তারিত নথি চেয়ে আবেদন জানিয়েছেন তদন্তকারীরা। এই নথি হাতে এলে কসবাকাণ্ডের তদন্ত অনেকটা এগিয়ে যেতে পারে।
গণধর্ষণের মামলা রুজু করে তদন্ত চালাচ্ছে পুলিশ। গ্রেফতার করা হয়েছে মোট চার জনকে। তাঁদের মধ্যে তিন জনের বিরুদ্ধে নির্যাতিতা অভিযোগ দায়ের করেছেন। সঙ্গে পুলিশ ধরেছে কলেজে ওই সময়ে দায়িত্বে থাকা নিরাপত্তারক্ষীকেও। অভিযোগ, প্রথমে ইউনিয়ন রুমে তরুণীর সঙ্গে ধস্তাধস্তি করা হয়েছিল। পরে রক্ষীর ঘরে নিয়ে গিয়েই তাঁকে ধর্ষণ করা হয়। এই ঘটনার তদন্তে কলকাতা পুলিশের অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনার (দক্ষিণ শহরতলি) প্রদীপকুমার ঘোষালের নেতৃত্বে বিশেষ তদন্তকারী দল (সিট) গঠন করা হয়েছে। প্রথমে সিটের সদস্যসংখ্যা ছিল পাঁচ জন। পরে তা বাড়িয়ে ন’জন করা হয়েছে। ইতিমধ্যে নির্যাতিতার বয়ান রেকর্ড করেছে সিট। তাঁকে ঘটনাস্থলে নিয়ে গিয়ে ঘটনার পুনর্নির্মাণ করা হয়েছে। অভিযুক্তদের নিয়ে তাঁদের বাড়িতেও গিয়েছিল পুলিশ। সেখান থেকেও নথি, পোশাক সংগ্রহ করা হয়েছে। পুলিশ সূত্রে খবর, সিসিটিভি ফুটেজে অভিযুক্তদের পরনে যে পোশাক দেখা গিয়েছিল, বাড়ি থেকে সেই পোশাক খুঁজে পাওয়া গিয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে ফরেন্সিক নমুনাও সংগ্রহ করা হয়েছে।
আরও পড়ুন:
মূল অভিযুক্তকে ‘এম’, বাকি দু’জনকে ‘জে’ এবং ‘পি’ হিসাবে চিহ্নিত করা হচ্ছে। নির্যাতিতার অভিযোগ, ধর্ষণের সময়ে তাঁর মাথায় আঘাত লেগেছিল। তা সত্ত্বেও ‘এম’ থামেননি। তাঁকে হকি স্টিক দিয়ে মারধরের চেষ্টাও করা হয়। নির্যাতিতার প্যানিক অ্যাটাক হয়েছিল। তাঁর অনুরোধে এনে দেওয়া হয়েছিল ইনহেলার। কিন্তু নির্যাতন থামেনি। পুলিশের কাছে গেলে প্রেমিককে খুন করিয়ে দেওয়া হবে এবং বাবা-মাকে গ্রেফতার করিয়ে দেওয়া হবে বলে হুমকি দিয়েছিলেন অভিযুক্তেরা, দাবি নির্যাতিতার। পুলিশের কাছে লিখিত অভিযোগপত্রে এগুলি তিনি জানিয়েছিলেন। পরে সিটের কাছেও একই কথা জানিয়েছেন। প্রাথমিক ভাবে সিসিটিভি ফুটেজের সঙ্গে তাঁর বয়ান মিলে গিয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করা হয়েছে সেই হকি স্টিকও।
নির্যাতিতার দাবি, মূল অভিযুক্ত তাঁকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছিলেন। তা খারিজ করে দেওয়ায় তাঁকে ধর্ষণ করা হয়েছে। পুলিশ খতিয়ে দেখছে, গোটা ঘটনাটি পূর্ব পরিকল্পিত ছিল কি না। আগে থেকে এই ধর্ষণ এবং নির্যাতনের পরিকল্পনা করা হয়েছিল কি না। যদি তা হয়, তবে কারা সেই পরিকল্পনায় যুক্ত ছিলেন বা কারা পরিকল্পনার কথা জানতেন, খোঁজ চলছে। সেখানেই ফোন কলের রেকর্ড গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে পারে বলে মত তদন্তকারীদের একাংশের।
(ধর্ষণ বা শ্লীলতাহানির ঘটনায় যত ক্ষণ না অভিযুক্তকে আদালতে দোষী সাব্যস্ত করা হচ্ছে, তত ক্ষণ তাঁর নাম-পরিচয় প্রকাশে আইনি বাধা থাকে। সেই কারণে আনন্দবাজার ডট কম কসবার ধর্ষণকাণ্ডে তিন অভিযুক্তের নাম এবং ছবি প্রকাশে বিরত থাকছে)