Advertisement
E-Paper

ভাইঝি-কাণ্ডের সেই কনস্টেবল ছুটিতে গেলেন

মেয়রের ভাইঝির বিরুদ্ধে নালিশ করা ইস্তক কর্তাদের জেরায় জেরায় তিনি জেরবার হচ্ছিলেন। টালিগঞ্জ ট্র্যাফিক গার্ডের সেই কনস্টেবল চন্দন পাণ্ডে এ বার ছুটিতে চলে গেলেন। শুক্রবার রাতে রাসবিহারী অ্যাভিনিউয়ে একটি গাড়ি দুর্ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিতর্কের সূত্রপাত। গাড়ির আরোহীদের মধ্যে ছিলেন দেবপ্রিয়া চট্টোপাধ্যায়, সম্পর্কে যিনি কিনা কলকাতার মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়ের ভাইঝি।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৬ মে ২০১৫ ০৩:৩৭
কলকাতা পুলিশের ট্রাফিক কনস্টেবল চন্দন পাণ্ডে।

কলকাতা পুলিশের ট্রাফিক কনস্টেবল চন্দন পাণ্ডে।

মেয়রের ভাইঝির বিরুদ্ধে নালিশ করা ইস্তক কর্তাদের জেরায় জেরায় তিনি জেরবার হচ্ছিলেন। টালিগঞ্জ ট্র্যাফিক গার্ডের সেই কনস্টেবল চন্দন পাণ্ডে এ বার ছুটিতে চলে গেলেন।

শুক্রবার রাতে রাসবিহারী অ্যাভিনিউয়ে একটি গাড়ি দুর্ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিতর্কের সূত্রপাত। গাড়ির আরোহীদের মধ্যে ছিলেন দেবপ্রিয়া চট্টোপাধ্যায়, সম্পর্কে যিনি কিনা কলকাতার মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়ের ভাইঝি। অভিযোগ, গাড়ি চালাচ্ছিলেন তিনিই। ঘটনাস্থলে ডিউটিতে থাকা চন্দনবাবুর সঙ্গে দেবপ্রিয়া বচসায় জড়িয়ে পড়েন। থানায় তাঁর বিরুদ্ধে সরকারি কাজে বাধাদান ও এলাকায় উত্তেজনা সৃষ্টির লিখিত অভিযোগ দায়ের হয়।

কিন্তু অভিযোগই সার। পুলিশমহলের অন্দরের খবর: প্রথম অভিযোগটি জামিন-অযোগ্য হওয়া সত্ত্বেও ‘প্রভাবশালী’দের ফোনের সূত্রে ওই রাতেই মেয়রের ভাইঝিকে ছেড়ে দেওয়া হয়। শুধু তা-ই নয়, গত তিন দিনে তাঁকে গ্রেফতার করা দূরস্থান, পুলিশ একটি বারের জন্য জিজ্ঞাসাবাদও করেনি! তবে চন্দনবাবু রেহাই পাননি। ঊর্ধ্বতন অফিসারেরা রবিবার সকালে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেন। ঘটনার ‘সত্যতা’ যাচাই করতে দফায় দফায় জেরা করা হয়। নিষেধ করা হয় তদন্তকারী ছাড়া অন্য কারও সামনে মুখ খুলতে।


রাসবিহারী-কাণ্ডে কলকাতার মেয়রের ভাইঝি-সহ অন্যান্য অভিযুক্তকে গ্রেফতারের দাবিতে সোমবার রাস্তায় নামল বিজেপি।
পুরোভাগে লকেট চট্টোপাধ্যায় এবং রূপা গঙ্গোপাধ্যায়। — নিজস্ব চিত্র।

এর পরে সোমবার আর ডিউটিতে আসেননি চন্দনবাবু। তাঁর মোবাইল ছিল সুইচড অফ। বাড়িতে গিয়েও দেখা মেলেনি। সহকর্মীদের মুখে শোনা যায়, চন্দনবাবু ছুটিতে গিয়েছেন। প্রশ্ন ওঠে, মেয়রের ভাইঝিকে আড়াল করতেই কি ওঁকে তড়িঘড়ি ছুটিতে পাঠানো হল?

ঘটনাচক্রে এ দিনই টালিগঞ্জ ট্র্যাফিক গার্ডে গিয়েছিলেন কলকাতা পুলিশের ডেপুটি কমিশনার (ট্র্যাফিক) ভি সলোমন নেসাকুমার। চন্দনবাবুর সহকর্মীদের সঙ্গে তিনি কথাবার্তা বলেন। তার পরেই ওই কনস্টেবলকে ছুটিতে যেতে বলা হয়েছে বলে নিচুতলার অভিযোগ। ডিসি যদিও তা মানতে চাননি। ‘‘পনেরো দিনের ছুটি চেয়ে উনি আবেদন করেছিলেন দশ দিন আগে। এক সপ্তাহ হল, ছুটি মঞ্জুর হয়েছে।’’— ব্যাখ্যা দিয়েছেন তিনি। ডিসি’র আরও দাবি, ‘‘আমি কোনও তদন্ত করতে যাইনি। আগেই ঠিক হয়ে ছিল, এ দিন আমি টালিগঞ্জ ট্র্যাফিক গার্ডে পরিদর্শনে যাব।’’

চন্দনবাবু যে আগাম দু’সপ্তাহের ছুটি নিয়ে রেখেছিলেন, সহকর্মীদের অনেকের কাছে অবশ্য তেমন খবর নেই। ফলে ‘নেপথ্যের’ কাহিনি নিয়ে জল্পনা বাড়ছে। এক জনের কথায়, ‘‘চন্দনকে বলেছিলাম, মেয়রের ভাইঝির নামে ও যেন লিখিত নালিশ না-করে। ও মৌখিক অভিযোগ করেছিল। পরে টালিগঞ্জ থানার এক অফিসার পাঁচ জনের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।’’ ওঁদের মতে, চন্দনবাবু লিখিত অভিযোগ করলে আরও চাপে পড়ে যেতেন।

মেয়রের ভাইঝির নামে জামিন-অযোগ্য মামলাটির কী ভবিষ্যৎ?

লালবাজারের কর্তাদের দাবি, তদন্ত মোটামুটি শেষ। এ বার কোর্টে চার্জশিট পেশ হবে। আদালতের নির্দেশমতো পদক্ষেপ করা হবে। কিন্তু নিচুতলার ধারণা, গোপালনগর মোড়ে পুলিশ নিগ্রহে মূল অভিযুক্ত প্রতাপ সাহার ক্ষেত্রে লালবাজারের যে ভূমিকা ছিল, রাসবিহারী-কাণ্ডে তারই পুনরাবৃত্তি হওয়ার প্রভূত সম্ভাবনা। কী রকম?

নিচুতলার ব্যাখ্যা: আলিপুরের তৃণমূল নেতা প্রতাপের বিরুদ্ধেও জামিন-অযোগ্য ধারায় সরকারি কাজে বাধাদানের অভিযোগ আনা হয়েছিল। শেষমেশ পুলিশই তাঁর আগাম জামিনের ব্যবস্থা করে দেয়। কোর্টে সরকারপক্ষের কৌঁসুলি বা তদন্তকারী অফিসার— কেউ আগাম জামিনের বিরোধিতা করেননি। ‘‘পরে প্রতাপ আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন নিয়ে দিব্যি হাসতে হাসতে বেরিয়ে গিয়েছে।’’— আক্ষেপ এক পুলিশকর্মীর। ওঁদের আশঙ্কা, মেয়রের ভাইঝির বেলাতেও চার্জশিট জমা পড়ার আগে একই বন্দোবস্ত করা হতে পারে।

কলকাতা পুরভোটের আগে গোপালনগর মোড়ের সেই ঘটনার সূত্রপাত হয়েছিল বিজেপি নেত্রী রূপা গঙ্গোপাধ্যায়ের প্রচারসভা ঘিরে। এ বার রাসবিহারী-কাণ্ড নিয়ে বিজেপি মাঠে নেমে পড়েছে। ৮৮ নম্বর ওয়ার্ডের বিজেপি সমর্থকেরা সোমবার বিকেলে রূপা ও লকেট চট্টোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে প্রতিবাদ মিছিল করে টালিগঞ্জ থানায় যান। মেয়রের ভাইঝি-সহ অভিযুক্তদের গ্রেফতার ও কনস্টেবল চন্দন পাণ্ডেকে ডিউটিতে ফিরিয়ে আনার দাবি ওঠে।

বস্তুত পুলিশ নিগ্রহে অভিযুক্তের পিছনে ‘প্রভাবশালী’র ছত্রচ্ছায়া না-থাকলে কী হতে পারে, বিধাননগর কমিশনারেটই তা বুঝিয়ে দিয়েছে বলে একাধিক পুলিশকর্মীর পর্যবেক্ষণ। শনিবার রাতে সল্টলেক পাঁচ নম্বর সেক্টরে এক কনস্টেবলকে মারধর করার অভিযোগে ছ’জনকে গ্রেফতার করা হয়। মেয়রের ভাইঝির মতোই তাদের জড়ানো হয়েছে জামিন-অযোগ্য ধারায়। এবং আদালতের নির্দেশে ধৃতেরা জেল হেফাজতে।

প্রশ্ন উঠছে, এক অভিযোগে পৃথক ব্যবস্থা কেন? যার কোনও সদুত্তর পুলিশকর্তাদের কাছে মিলছে না।

police mayor Chandan Pandey sovan chattopadhyay BJP trinamool tmc Locket Chattopadhyay Roopa Gangopadhyay
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy