শর্মিলা নাথ
স্কুলে শুরু হওয়া অভিভাবকদের বিক্ষোভের প্রথম দিন, শুক্রবারই দাবিটা উঠেছিল। রানিকুঠির কাছে জি ডি বিড়লা সেন্টার ফর এডুকেশন-এর প্রিন্সিপ্যালকে গ্রেফতার করার দাবি। স্কুলে চার বছরের এক ছাত্রীকে যৌন নির্যাতনের জেরে রবিবার, অভিভাবকদের প্রবল চাপে প্রিন্সিপ্যাল শর্মিলা নাথের বিরুদ্ধে নির্দিষ্ট ধারায় মামলা রুজু করল পুলিশ। ওই মহিলার বিরুদ্ধে পকসো আইন ও ভারতীয় দণ্ডবিধিতে তথ্য গোপন করা, জালিয়াতি ও অপরাধমূলক ষড়যন্ত্রে লিপ্ত থাকার অভিযোগ আনা হয়েছে। এ দিন দুপুরে যাদবপুর থানায় ওই অভিযোগ দায়ের করেন নির্যাতিতার বাবা।
এক পুলিশকর্তার মতে, প্রিন্সিপ্যাল ছাত্রীদের নিরাপত্তার উপযুক্ত বন্দোবস্ত করেননি। তিনি ঘটনার কথা শুনেও প্রথমে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন, ধামাচাপা দিতে চেয়েছেন। সেই জন্য পকসো আইনের ২১ নম্বর ধারায় তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ জানানো হয়েছে। ওই আইনে অভিযোগ হলে গ্রেফতারি এড়ানো মুশকিল বলে পুলিশের একাংশের অভিমত।
স্কুলটি যে সংস্থার অধীনে, তার মুখপাত্র সুভাষ মোহান্তি প্রিন্সিপ্যালকে গ্রেফতার ও তাঁর পদত্যাগের দাবি প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘যে কোনও সিদ্ধান্ত নিতেই আমরা প্রস্তুত। কিন্তু বাস্তবসম্মত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তবে পুরোটাই হবে অভিভাবকদের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে।’’ আলোচনায় না বসে প্রিন্সিপ্যালকে নিয়ে অভিভাবকদের দাবি মেনে নেওয়া হবে না বলেও সাফ জানান তিনি।
এ দিন ক্ষুব্ধ অভিভাবকেরা টালিগঞ্জ ট্রাম ডিপোর সামনে পথ আটকে অবস্থান শুরু করলে সেখানে যান যাদবপুর ডিভিশনের ডিসি রূপেশ কুমার। অবরোধ তোলার অনুরোধ করলে নির্যাতিতার বাবা তাঁকে জানান, আগে প্রিন্সিপ্যালকে গ্রেফতার করতে হবে। বিক্ষোভকারীরাও সেই দাবি তোলেন। মেয়ের শারীরিক অবস্থার কথা বলতে গিয়ে ডিসি-র হাত ধরে কেঁদে ফেলেন বাবা। ডিসি তখন জানান, নির্দিষ্ট অভিযোগ না পেলে এই ভাবে কাউকে গ্রেফতার করা যায় না। তিনি বলেন, ‘‘আমরা তদন্ত করছি। যাঁর বা যাঁদের দোষ পাওয়া যাবে, কাউকেই ছাড়া হবে না।’’
বেলা সাড়ে ১২টা নাগাদ শিশুটির বাবা যাদবপুর থানায় পৌঁছে প্রিন্সিপ্যাল শর্মিলা নাথের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। পরে ওই মামলা যায় গোয়েন্দা বিভাগের হাতে। প্রিন্সিপ্যালের বিরুদ্ধে পুলিশ মামলা রুজু করেছে জেনে অভিভাবকদের ক্ষোভ কিছুটা কমে। ইতিমধ্যে স্কুল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে পুলিশ রবিবার সন্ধ্যায় অভিভাবকদের আলোচনার বন্দোবস্ত করে। তবে অভিভাবকদের একাংশ জানান, এ দিনই প্রিন্সিপ্যালের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। ফলে এখন আলোচনায় বসলে তাঁদের অবস্থান হাল্কা হয়ে যেতে পারে। সেই জন্য টালিগঞ্জ ট্রাম ডিপো থেকে অবরোধ তুলে অভিভাবকেরা ফের যান স্কুলের সামনে। সেখানে এ দিনের মতো অবস্থান-বিক্ষোভ শেষ হয়।
শুধু অভিভাবকেরা নন, শিশু সুরক্ষা কমিশনের চেয়ারপার্সন অনন্যা চট্টোপাধ্যায়ও স্কুলের প্রিন্সিপ্যালকে গ্রেফতারির দাবি তুলেছেন। রবিবার তিনি জানান, পকসো আইন অনুযায়ী, কোনও শিশুর উপরে হওয়া অত্যাচারের ঘটনার তথ্য যে গোপন করবে এবং অপরাধীকে আড়াল করবে, তাঁদেরও অপরাধী হিসেবে গণ্য করা হবে। অনন্যাদেবীর অভিযোগ, জি ডি বিড়লা সেন্টার ফর এডুকেশনের ক্ষেত্রে সেই ভূমিকাই পালন করেছেন প্রিন্সিপ্যাল শর্মিলাদেবী। সে কারণেই তাঁর গ্রেফতারির আবেদন জানানো হয়েছে’’— বলেন অনন্যাদেবী। এমনকী, শুক্রবার ঘটনাটি প্রকাশ্যে আসার দিনেও তিনি ও কমিশনের কয়েক জন সদস্য স্কুলে গিয়েছিলেন। অনন্যাদেবী জানিয়েছেন, সে দিন নিরাপত্তা নিয়ে জানতে চাইলে তাঁরা প্রিন্সিপ্যালের উত্তরে সন্তুষ্ট হননি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy