বাকি আছে আর দেড় মাস। তার পরেই বদলে যাচ্ছে ব্রিটিশ আমলে তৈরি ভারতীয় দণ্ডবিধি (ইন্ডিয়ান পেনাল কোড বা আইপিসি) এবং ফৌজদারি কার্যবিধি (ক্রিমিনাল প্রসিডিয়োর কোড বা সিআরপিসি)। তার জায়গা নিতে চলেছে নয়া দণ্ড সংহিতা আইন। নতুন এই ব্যবস্থায় আইনের বিভিন্ন ধারা যেমন বদলে যাচ্ছে, তেমনই কোনও মামলার সঙ্গে যুক্ত কিছু বাজেয়াপ্ত করতে হলেও তার পদ্ধতি হবে আলাদা। যেমন, ঘটনাস্থল থেকে কিছু বাজেয়াপ্ত করতে হলে পুরো প্রক্রিয়ার ভিডিয়ো করতে বলা হয়েছে নতুন ব্যবস্থায়। আর এই বিষয়টি নিয়েই ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে পুলিশ মহলে।
পুলিশ সূত্রের খবর, নতুন আসতে চলা ‘ভারতীয় নাগরিক সুরক্ষা সংহিতা’ আইনে বলা হয়েছে, বাজেয়াপ্ত-পর্ব ক্যামেরার সাহায্যে রেকর্ড করতে হবে। ক্যামেরা না থাকলে কর্তব্যরত পুলিশ অফিসার নিজের মোবাইল ফোনে পুরো প্রক্রিয়া রেকর্ড করতে পারবেন। তবে, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সেই রেকর্ডিং স্থানীয় ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে জমা দিতে হবে। পুলিশের একাংশের মতে, এমনিতেই ঘটনাস্থল থেকে কিছু বাজেয়াপ্ত করতে কয়েক ঘণ্টা সময় লাগে। এর উপরে মোবাইলে গোটা প্রক্রিয়ার ভিডিয়ো রেকর্ডিং করতে হলে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন দামি ফোন দরকার। সেই ফোন পুলিশ অফিসারকে কে দেবে, তা নিয়ে কিছু বলা হয়নি। ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে কী ভাবে ওই রেকর্ডিং জমা দেওয়া হবে, তা নিয়েও স্পষ্ট ভাবে নতুন আইনে কিছু বলা হয়নি।
যার পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশের প্রশ্ন, সে ক্ষেত্রে কি মোবাইল বা ক্যামেরাই ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে জমা দিতে হবে? তাদের আরও বক্তব্য, জেলার বিভিন্ন থানা এলাকায় প্রতিদিন একাধিক অপরাধমূলক ঘটনা ঘটে। নিচুতলার পুলিশকর্মীদের প্রশ্ন, সে ক্ষেত্রে কি তাঁদের একাধিক ফোন রাখতে হবে, না কি সরকারের তরফে মোবাইল দেওয়া হবে? এক পুলিশ আধিকারিক জানান, বাজেয়াপ্ত হওয়া ফুটেজ তদন্তের স্বার্থে সংরক্ষণ করতে হবে। কিন্তু, তা কোথায় রাখতে হবে, সে ব্যাপারে কিছুই বলা হয়নি। রাজ্য পুলিশের শীর্ষ কর্তারা ভোট নিয়ে ব্যস্ত থাকায় এ বিষয়ে বিশদে আলোচনা করা যায়নি। আর এক পুলিশকর্তা জানাচ্ছেন, কলকাতা হাই কোর্টের নির্দেশে এখন মাদক বাজেয়াপ্ত করার সময়ে পুরো প্রক্রিয়ার ভিডিয়ো রেকর্ডিং করা হচ্ছে। যা পরে আদালতে জমা দেওয়া হয়। এ বার ঘটনাস্থল থেকে বিভিন্ন সামগ্রী বাজেয়াপ্ত করার সময়ে সেই একই পদ্ধতি অনুসরণ করতে হবে।
উল্লেখ্য, গত ডিসেম্বরে নতুন দণ্ড সংহিতা সংক্রান্ত তিনটি বিল পাশ হয়েছিল সংসদে। পরে তাতে সই করেন রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু। এই আইন কার্যকর হলে ১৮৬০ সালে তৈরি ভারতীয় দণ্ডবিধি, ১৮৯৮ সালের ফৌজদারি কার্যবিধি এবং ১৮৭২ সালের ভারতীয় সাক্ষ্য আইন বাতিল হবে। সেই জায়গায় আসবে যথাক্রমে ‘ভারতীয় ন্যায় সংহিতা’, ‘ভারতীয় নাগরিক সুরক্ষা সংহিতা’ এবং ‘ভারতীয় সাক্ষ্য অধিনিয়ম’ আইন। তবে, ৩০ জুন পর্যন্ত পুরনো ধারাতেই মামলা রুজু হবে।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)