Advertisement
E-Paper

শব্দবাজিতে কী এমন অসুবিধা, নিষ্ক্রিয় পুলিশই

পরিত্রাণ চেয়ে যাদবপুর থানায় ফোন করলে জানা গেল, এলাকাটা তাঁদের নয়, নেতাজিনগর থানার এক্তিয়ারে। সেই থানায় ফোন করলে শুনতে হল, ওটা যাদবপুর থানার এলাকা। এই ভাবে কিছুক্ষণ ‘টেনিসের র‌্যালি’ চলার পরে শেষমেশ লালবাজার কন্ট্রোল রুমে ফোন করায় তাঁরা হস্তক্ষেপ করলেন।

সুরবেক বিশ্বাস

শেষ আপডেট: ১৬ অক্টোবর ২০১৭ ০১:৫৭
ফাইল চিত্র।

ফাইল চিত্র।

সাতটা জানলার সব ক’টা বন্ধ। দু’টো বারান্দার দরজাও খোলার প্রশ্ন নেই। তা সত্ত্বেও ফ্ল্যাটের মধ্যে বন্দি অবস্থায় টেকা যাচ্ছে না। মনে হচ্ছে, বাইরে গুলিগোলা চলছে। মামুলি চকলেট বোমা, দোদোমা, চেন ক্র্যাকার তো আছেই। সেই সঙ্গে শেল, শট্স, আসমান গোলা-র নিনাদ।

পরিত্রাণ চেয়ে যাদবপুর থানায় ফোন করলে জানা গেল, এলাকাটা তাঁদের নয়, নেতাজিনগর থানার এক্তিয়ারে। সেই থানায় ফোন করলে শুনতে হল, ওটা যাদবপুর থানার এলাকা। এই ভাবে কিছুক্ষণ ‘টেনিসের র‌্যালি’ চলার পরে শেষমেশ লালবাজার কন্ট্রোল রুমে ফোন করায় তাঁরা হস্তক্ষেপ করলেন। যাদবপুর থানাও তখন হঠাৎ বুঝতে পারল, ওটা তাদেরই এলাকা।

রাত তখন ১১টা। গত বার কালীপুজোর বিসর্জন-শোভাযাত্রার সময়কার অভিজ্ঞতা। রিজেন্ট পার্ক ডাকঘর লাগোয়া তল্লাটে।

লালবাজারের কর্তারা স্বীকার করছেন, শব্দবাজির ব্যবহারকে বহু পুলিশ এখনও অপরাধ বলে গণ্য করেন না, ওটা তাঁদের কাছে নেহাৎই ‘দুষ্টুমি’। সামনে দেদার শব্দবাজি ফাটলেও তাঁরা যেন একই সঙ্গে মূক ও বধির এবং দৃষ্টিহীন হয়ে যান। খবর পেয়েও পান না। অথচ দু’দশক আগে সরকারি নির্দেশে পশ্চিমবঙ্গ জুড়ে শব্দবাজি নিষিদ্ধ। আদালত সেই নিষেধাজ্ঞায় সিলমোহর দিয়েছে। তার পরেও বহু পুলিশের মনে একটা ধারণা গেঁথে আছে যে, শব্দবাজির ব্যবহার অপরাধ নয়।

কলকাতা পুলিশের এক কর্তার বক্তব্য, এই ধারণার বশবর্তী হয়ে চলা শব্দবাজি প্রতিরোধের ক্ষেত্রে অন্যতম প্রধান প্রতিবন্ধক। তিনি বলছেন, ‘‘বহু পুলিশ আবার মনে করেন, শব্দবাজিতে কী আর এমন অসুবিধা হয়? ৩৬৫ দিনের মধ্যে তো মাত্র দু’দিনের ব্যাপার।’’

শনিবার পশ্চিমবঙ্গ দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ আয়োজিত এক বৈঠকে উপস্থিত পুলিশকর্তাদের শুনতে হয়, নিষিদ্ধ বাজির ব্যবহারের বিরুদ্ধে অভিযোগ বহু ক্ষেত্রেই থানা নিতে চায় না। এক পুলিশকর্তা জানান, থানা না নিলে তার উপরের স্তরে এবং এমন ভাবে যেতে যেতে পুলিশ সুপার বা ডিসি-র কাছেও অভিযোগ জানানো যায়। কিন্তু প্রশ্ন হল, সাধারণ মানুষের ক’জনের পক্ষে এমনটা সম্ভব? পর্ষদের চেয়ারম্যান কল্যাণ রুদ্র বৈঠকে জানান, শব্দবাজি নিষিদ্ধ করায় পশ্চিমবঙ্গ পথিকৃৎ, এই নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করতে হবে।

লালবাজারের কর্তাদের কারও কারও ধারণা, বাজির বিষয় গোটাটাই ডিসি রিজার্ভ ফোর্স (আরএফ)-এর কাজ। অথচ অন্য অপরাধ দমন বা বেআইনি জিনিস বাজেয়াপ্ত করার মতো শব্দবাজি আটক করা, শব্দবাজি ব্যবহার করা লোকদের ধরে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া যে থানার পুলিশ ও গোয়েন্দা বিভাগের কাজের মধ্যে পড়ে, সেটা ওই কর্তারা মাথায় রাখেন না। ডিসি (আরএফ) যে মূলত বাজি বাজারগুলির লাইসেন্স এবং বাজি বাজারগুলির ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে, সেটাও তাঁদের অজানা।

তবে লালবাজারের উপরতলা থেকে আদেশ গেলে টনক নড়ে বিভিন্ন ডিভিশনের। শয়ে শয়ে কেজি বাজি আটক হওয়ার হিসেব দিতে শুরু করে বিভিন্ন থানা ও গোয়েন্দা বিভাগের কিছু শাখা। অবশ্য সেই হিসেব কতটা ঠিক, তা নিয়ে লালবাজারের অন্দরেই সন্দেহ আছে।

গত বছর কলকাতা পুলিশ নিয়ম মেনে হলদিয়ার নির্দিষ্ট জায়গায় ফেলে নষ্ট করেছিল পাঁচ টন শব্দবাজি। তবে কালীপুজো-দীপাবলির ঠিক পরে লালবাজারই হিসেব দিয়েছিল, ন’টন শব্দবাজি আটক হয়েছে। তা হলে কোথায় গেল বাকি চার টন? তার উত্তর আজও মেলেনি।

Firecracker Illegal Firecrackar Pollution শব্দবাজি
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy