Advertisement
১৮ মে ২০২৪

শিশু খুনের রহস্যভেদ, গ্রেফতার বাবা

এক সপ্তাহ আগে উদ্ধার হয়েছিল পূর্ণিমার দেহ। ময়দান থানা প্রথমে অপহরণ এবং খুনের মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু করে। প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশ জানায়, মা-বাবা এবং দাদা-দিদির সঙ্গে ওই এলাকার ফুটপাতে থাকত পূর্ণিমা। ২৯ জানুয়ারি রাতে খাওয়া শেষ করে তিন সন্তানকে নিয়ে ঘুমিয়েছিলেন পেশায় কাগজকুড়ানি দম্পতি তপন ও মুন্নি।

তদন্তে ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞেরা। ফাইল চিত্র

তদন্তে ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞেরা। ফাইল চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০২:২৪
Share: Save:

মেয়ে হওয়ার পর থেকেই সে সন্দেহ করত, মেয়েটি তার নয়। সন্দেহের বশেই দু’বছরের কন্যাসন্তানকে খুন করেছে সে। উট্রাম ঘাটের কাছে গঙ্গাসাগর মেলা মাঠের একটি নর্দমা থেকে পূর্ণিমা সরকার নামে এক শিশুর দেহ উদ্ধারের ঘটনায় তার বাবা তপন সরকারকে গ্রেফতার করে এমনটাই জানতে পেরেছেন ময়দান থানার তদন্তকারীরা। মঙ্গলবার তপনকে গ্রেফতার করা হয়। বুধবার ব্যাঙ্কশাল আদালতে তোলা হলে ধৃতকে ১০ দিন পুলিশি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক।

এক সপ্তাহ আগে উদ্ধার হয়েছিল পূর্ণিমার দেহ। ময়দান থানা প্রথমে অপহরণ এবং খুনের মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু করে। প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশ জানায়, মা-বাবা এবং দাদা-দিদির সঙ্গে ওই এলাকার ফুটপাতে থাকত পূর্ণিমা। ২৯ জানুয়ারি রাতে খাওয়া শেষ করে তিন সন্তানকে নিয়ে ঘুমিয়েছিলেন পেশায় কাগজকুড়ানি দম্পতি তপন ও মুন্নি। মাঝরাতে তাঁরা দেখেন, বছর দু’য়েকের পূর্ণিমা নিখোঁজ। প্রথমে পুলিশের কাছে তপন তেমনই দাবি করেন। পরের দিন উদ্ধার হয় পূর্ণিমার দেহ। তদন্তে নেমে ওই দম্পতিকে লাগাতার জেরা করেন ময়দান থানার আধিকারিকেরা। তাতেও খুনের কিনারা হয়নি। প্রাথমিক ভাবে তদন্তকারীরা আরও জেনেছিলেন, ভারী কোনও জিনিস দিয়ে আঘাত করে ওই শিশুটিকে খুন করা হয়েছে।

কী ভাবে খুনের কিনারা হল?

পুলিশের দাবি, তপন ও তার স্ত্রী মুন্নির কথায় অসঙ্গতি থাকায় প্রথম থেকেই তাদের উপরে সন্দেহ ছিল। কিন্তু জেরার মুখে কিছুই স্বীকার করেনি ওই দম্পতি। তদন্তকারীরা এর পরে ওই এলাকায় বসবাস করেন, এমন ব্যক্তিদের খোঁজ শুরু করেন। তখনই পুরো ঘটনাটি স্পষ্ট হয়।

পুলিশ সূত্রের খবর, ওই এলাকায় কোনও সিসি ক্যামেরা ছিল না। ঘটনার পরে উধাও হয়ে গিয়েছিলেন তপনদের পাশে বসবাসকারী আর এক দম্পতি। পরে অবশ্য তাঁদের খোঁজ মেলে। তাঁরাই জানান, পূর্ণিমা জন্মানোর পর থেকে তপনের সঙ্গে তার স্ত্রী মুন্নির মাঝেমধ্যেই অশান্তি হত। একই সঙ্গে তদন্তকারীরা দুই বাসিন্দার খোঁজ পান, যাঁরা ঘটনার রাতে তপনকে মাঠের মধ্যে ঘোরাঘুরি করতে দেখেছিলেন।

পুলিশের দাবি, এর পরে তপনকে চেপে ধরতেই সে খুনের কথা স্বীকার করে। জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশকে জানায়, ২৯ তারিখ পূর্ণিমাকে ঘুমিয়ে থাকা অবস্থায় মাঠে নিয়ে গিয়ে ইট দিয়ে মাথায় মেরে খুন করে। পরে পাশের নর্দমায় দেহটি ফেলে দেয়। ফিরে এসে তপন স্ত্রীকে ঘুম থেকে ডেকে বলে, মেয়ে নিখোঁজ।

পুলিশ জানিয়েছে, বছর আড়াই আগে তপনকে ছেড়ে চলে গিয়েছিল মুন্নি। মাস আটেক পরে ফিরে এসে দাবি করে, সে অন্তঃসত্ত্বা। অভিযোগ, এর পরে গর্ভপাত করানোর জন্য স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ঝামেলা শুরু হয়। তদন্তকারীদের দাবি, মুন্নি তা মানতে চায়নি। পূর্ণিমার জন্মের পরে বিষয়টি নিয়ে অশান্তি চরমে ওঠে।

এক তদন্তকারী অফিসার জানান, খুনের ঘটনায় তার স্ত্রী এবং আরও এক জন যুক্ত বলে দাবি করেছে তপন। যদিও সেই দু’জনের ঘটনায় যুক্ত থাকার প্রমাণ এখনও পর্যন্ত মেলেনি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Crime Murder Arrest
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE