Advertisement
০১ মে ২০২৪
Drowning Death

ডুবে মৃত্যু আটকাতে গঙ্গার ঘাটগুলি জাল দিয়ে ঘিরবে পুলিশ

লালবাজার সূত্রের খবর, ইতিমধ্যেই গঙ্গার ন’টি ঘাটে প্রথম দফায় এমন জাল লাগানোর সিদ্ধান্ত পাকা হয়ে গিয়েছে। লালবাজার থেকে সেই ঘাটগুলিতে সমীক্ষাও করা হয়েছে।

An image of Drowning

— প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

নীলোৎপল বিশ্বাস
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৬ ডিসেম্বর ২০২৩ ০৫:৩৭
Share: Save:

কেউ তলিয়ে গিয়েছেন স্নান করার সময়ে, কেউ বা জল ভরতে নেমে। প্রতিমা বিসর্জন অথবা কারও শেষকৃত্য সারতে গঙ্গার ঘাটে এসে অনেকের একসঙ্গে তলিয়ে যাওয়ার মতো ঘটনাও ঘটেছে বহু বার! কিন্তু কী উপায়ে গঙ্গার ঘাটে মৃত্যু আটকানো সম্ভব, তা ভেবে বার করা যায়নি। পুলিশি নজরদারি বা অন্য কোনও বন্দোবস্ত করেও কার্যক্ষেত্রে পরিস্থিতি বদলানো যায়নি বলে অভিযোগ। এ বার তাই এমন অতর্কিতে মৃত্যু রুখতে গঙ্গার ঘাট জাল দিয়ে ঘিরে ফেলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কলকাতা পুলিশ।

সূত্রের খবর, শহরে গঙ্গার প্রতিটি ঘাটে এক ধরনের জাল লাগানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে লালবাজার। ঘাটের সিঁড়ি বরাবর এই জাল লাগানো হবে বলে খবর। ঠিক হয়েছে, ঘাটের সিঁড়ির দু’দিকে দু’টি লোহার কাঠামো বসানো হবে। সেই কাঠামোর সঙ্গেই আঁকশির মতো করে লাগানো থাকবে জাল। জলের গভীরে বেশ কিছুটা নীচ পর্যন্ত সেই জাল ঝুলবে
সিঁড়ির সঙ্গে অনেকটা অর্ধচন্দ্রাকৃতি দূরত্বে। এই জালের সঙ্গেই থাকবে হাওয়া ভর্তি বেলুন। তার বাইরে ঘাট-পিছু রাখা থাকবে একটি করে নৌকা। লালবাজারের এক কর্তা বললেন, ‘‘জলের তোড়ে কেউ ভেসে গেলেও যাতে তলিয়ে না যান, তা নিশ্চিত করতেই এই জাল লাগানোর ভাবনা। কেউ সিঁড়ি থেকে পা পিছলে পড়ে গেলেও এই জালের জন্য গঙ্গার গভীরে চলে যেতে পারবেন না। জালে আটকে যাওয়ার পরে যে কেউ হাওয়া ভর্তি বেলুন আঁকড়ে বেশ কিছু ক্ষণ ভেসে থাকতে পারবেন। তার মধ্যেই পুলিশের নির্দিষ্ট করা নৌকা ওই ব্যক্তিকে উদ্ধার করবে।’’

লালবাজার সূত্রের খবর, ইতিমধ্যেই গঙ্গার ন’টি ঘাটে প্রথম দফায় এমন জাল লাগানোর সিদ্ধান্ত পাকা হয়ে গিয়েছে। লালবাজার থেকে সেই ঘাটগুলিতে সমীক্ষাও করা হয়েছে। এই কাজের জন্য পুলিশের তরফে বন্দর কর্তৃপক্ষের সাহায্য চাওয়া হয়েছে। জাল লাগানোর এবং কোনও ঘাটে প্রয়োজনে কোনও নৌকা বা জলযান নিয়ে আসতে জাল খোলার কাজ করবেন মূলত বন্দর কর্তৃপক্ষের অধীনস্থ কর্মীরা। এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে বন্দরের এক কর্তা বলেন, ‘‘পুলিশের চিঠি পাওয়ার পরে দু’দফায় বৈঠক করে পরিকল্পনা করে নেওয়া হয়েছে। নতুন বছরেই এই জাল লাগানোর কাজ শুরু করা হবে।’’ এ ব্যাপারে দ্রুত দরপত্র ডাকার প্রক্রিয়াও শুরু হতে চলেছে বলে লালবাজার সূত্রে খবর।

জানা গিয়েছে, গঙ্গার ঘাটে তলিয়ে গিয়ে একের পর এক মৃত্যুর ঘটনায় রীতিমতো উষ্মা প্রকাশ করেছেন প্রশাসনের শীর্ষ কর্তারা। এর পরেই কী করে এই পরিস্থিতি বদলানো যায়, সে ব্যাপারে পুলিশকে ভাবনাচিন্তা করতে বলা হয় নবান্নের তরফে। তাতেই গঙ্গার ঘাটগুলি সম্পর্কে অভ্যন্তরীণ সমীক্ষা শুরু করে লালবাজার। তাতে দেখা যায়, ডিসেম্বরের শুরু পর্যন্ত গত প্রায় ১১ মাসে কলকাতা পুলিশ এলাকার সমস্ত ঘাট মিলিয়ে ৬৬ জনের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। প্রতি মাসে ঘাট-পিছু অন্তত ২০টি করে অভিযোগ জমা পড়েছে ডুবে যাওয়ার।
শুধুমাত্র উত্তর বন্দর থানাতেই এক মাসে গড়ে চার জন করে তলিয়ে গিয়েছেন বলে অভিযোগ এসেছে। কিছু ক্ষেত্রে তলিয়ে যাওয়া ব্যক্তিদের উদ্ধার করা গিয়েছে। কিছু ক্ষেত্রে খোঁজ মেলেনি।

পুলিশ সূত্রের খবর, সব চেয়ে অবাক করা পরিসংখ্যান এখনও খোঁজ না মেলা, তলিয়ে যাওয়া ব্যক্তিদের। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ধরলে কলকাতা পুলিশের সব ক’টি থানা মিলিয়ে এই সংখ্যাটা দেড়শোর কাছাকাছি। এই সংখ্যার কথা জেনেই তড়িঘড়ি নড়েচড়ে বসে পুলিশ। কলকাতার নগরপাল বিনীত গোয়েল দ্রুত জাল লাগানোর কাজ বাস্তবায়িত করার নির্দেশ দেন যুগ্ম-নগরপাল (অর্গানাইজ়েশন) ওয়াকার রাজাকে। তাঁর অধীনস্থ পুলিশের ‘রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট’ বিভাগ এর পরে এ নিয়ে পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট জমা দেয় বলে খবর। ওয়াকার বলেন, ‘‘এই ভাবনা বাস্তবায়িত হলে বহু মৃত্যু রোখা যাবে। এতে ঘাটের নিরাপত্তা বাড়বে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE