Advertisement
০২ এপ্রিল ২০২৩

হঠাৎ খুন না পরিকল্পিত? রজত মৃত্যুরহস্যে এখনও দিশেহারা পুলিশ

সাময়িক উত্তেজনার বশে, না পরিকল্পনা করে— কোন পরিস্থিতিতে আইনজীবী রজত দে-কে খুন করা হয়েছিল, তা নিয়ে ধোঁয়াশা পুরোপুরি কাটল না। পুলিশের কাছে রজতের স্ত্রী অনিন্দিতার দেওয়া বয়ান খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

রজত ও অনিন্দিতা

রজত ও অনিন্দিতা

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ০৪ ডিসেম্বর ২০১৮ ০১:৫৫
Share: Save:

সাময়িক উত্তেজনার বশে, না পরিকল্পনা করে— কোন পরিস্থিতিতে আইনজীবী রজত দে-কে খুন করা হয়েছিল, তা নিয়ে ধোঁয়াশা পুরোপুরি কাটল না। পুলিশের কাছে রজতের স্ত্রী অনিন্দিতার দেওয়া বয়ান খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এই ঘটনায় তৃতীয় কোনও ব্যক্তির প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ যোগাযোগ রয়েছে কি না, তা-ও খুঁজে দেখছেন তদন্তকারীরা। সেই কারণে ইতিমধ্যেই রজত ও অনিন্দিতার হোয়াট্সঅ্যাপ এবং ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে তথ্য সংগ্রহ করছে পুলিশ।

Advertisement

পুলিশ সূত্রের খবর, তথ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে এমন একটি হোয়াট্সঅ্যাপ গ্রুপ পুলিশের নজরে এসেছে, যেখানে রজত ও অনিন্দিতা দু’জনেই ছিলেন। সেখানকার কিছু ‘চ্যাট’ খতিয়ে দেখা হচ্ছে। খুন, তথ্যপ্রমাণ লোপাট ও ষড়যন্ত্রের অভিযোগে অনিন্দিতাকে গ্রেফতারের পরে তাঁকে আট দিন পুলিশি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছে আদালত।

পুলিশ সূত্রের দাবি, জেরায় অনিন্দিতা জানিয়েছেন, তাঁদের মধ্যে প্রায়ই অশান্তি হত। রজত তাঁর উপরে নিয়মিত ভাবে মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন চালাতেন বলেও অভিযোগ ওই মহিলার। রজত আত্মহত্যা করে ফাঁসিয়ে দেওয়ার ভয় দেখাতেন বলেও অনিন্দিতা দাবি করেছেন। পুলিশ এই প্রসঙ্গে মুখ খোলেনি। তবে অনিন্দিতার যাবতীয় অভিযোগ খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

আরও পড়ুন: খড়দহে সাত মাসের মেয়েকে নিয়ে ট্রেনের সামনে ঝাঁপ দিলেন ইঞ্জিনিয়ার

Advertisement

অনিন্দিতাকে সোমবার দিনভর জেরা করেও নির্দিষ্ট কোনও জায়গায় পৌঁছতে পারেননি তদন্তকারীরা। তবে তাঁকে নিয়ে দ্রুত ঘটনার পুনর্নির্মাণের চেষ্টা চালানো হচ্ছে বলে পুলিশ সূত্রের খবর। এ দিন সকালে নিউ টাউন থানা থেকে বিধাননগর মহিলা থানায় এনে ধৃত মহিলাকে জেরা শুরু করেন তদন্তকারীরা। জেরা-পর্বের মাঝেই এক বার পরীক্ষার জন্য অনিন্দিতাকে বিধাননগর মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে ফের জেরা করা হয়।

পুলিশের সন্দেহ, খুনের ঘটনায় অনিন্দিতা জড়়িত। কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে, একা তাঁর পক্ষে রজতকে শারীরিক ভাবে কাবু করা কি সম্ভব? সেই সূত্রেই ঘটনাস্থলে তৃতীয় কারও উপস্থিতির সম্ভাবনা প্রবল হচ্ছে বলে পুলিশের একাংশের বক্তব্য। যদিও এ নিয়ে কোনও নির্ভরযোগ্য তথ্যপ্রমাণ পুলিশের হাতে এখনও আসেনি। তবে শুরু থেকেই অনিন্দিতা অবশ্য দাবি করছেন, তিনি ও রজত ছাড়া কেউ ঘরে ছিলেন না।

পুলিশের একাংশ জানিয়েছেন, খুনের ‘মোটিভ’ হিসেবে দাম্পত্য কলহের বিষয়টি উঠে এসেছে। তবে সেটাই একমাত্র কারণ, না কি আরও কোনও রহস্য রয়েছে, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। জেরায় অনিন্দিতা জানিয়েছেন, ২৫ নভেম্বর রাতেও রজত তাঁকে আত্মহত্যার ভয় দেখাচ্ছিলেন। সে সময়ে সাময়িক উত্তেজনায় ওই ঘটনা ঘটে থাকতে পারে বলে পুলিশের অনুমান।

কিন্তু তা-ই যদি হয়, তবে অনিন্দিতা তদন্তকারীদের তা আগে বলেননি কেন? এ দিন সংবাদমাধ্যমের কাছে অনিন্দিতার বাবা অলোক পাল দাবি করেন, ভয় পেয়েই হয়তো অনিন্দিতা কিছু বলতে চাননি। তবে তা অনিন্দিতার ভুল হয়েছে। বাবার দাবি, রজতকে বাঁচাতে গিয়েই ওই ঘটনা ঘটেছে।

পুলিশ সূত্রের খবর, এই ঘটনার আগে ফেসবুকে অনিন্দিতা কী ধরনের পোস্ট শেয়ার করেছিলেন, তা-ও খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা। সব মিলিয়ে অনিন্দিতার মানসিক পরিস্থিতি কী রকম ছিল, তার আঁচ পেতে চাইছে পুলিশ। প্রয়োজনে মনোবিদদের পরামর্শও নেওয়া হতে পারে বলে জানা গিয়েছে।

পুলিশের কাছে এখন প্রশ্ন, অনিন্দিতা কি কাউকে দাম্পত্য সমস্যার কথা জানিয়েছিলেন? সমস্যা মেটাতে পরিজন কিংবা বাইরের কারও পরামর্শ কি নেওয়া হয়েছিল? আত্মীয়স্বজনদের মধ্যে কেউ কি স্বামী-স্ত্রীর এই টানাপড়েন মেটানোর চেষ্টা করেছিলেন? উত্তর খুঁজতে এ দিন অনিন্দিতার পরিবারের দুই সদস্যকেও জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন তদন্তকারীরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ)
Follow us on: Save:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE
Popup Close
Something isn't right! Please refresh.