E-Paper

নাম বিভ্রাট ঘুচবে, আশা-আশঙ্কায় কলকাতার কাশীপুর থানা

ভাঙড় কলকাতা পুলিশের অধীনে আসার অর্থ, সেখানকার ভাঙড় থানা এবং কাশীপুর থানার কাজ লালবাজার থেকে নিয়ন্ত্রিত হওয়া। তখন একটি পুলিশ কমিশনারেটের মধ্যে একই নামে দুই থানা রাখা হবে কী ভাবে?

নীলোৎপল বিশ্বাস

শেষ আপডেট: ২৯ জুলাই ২০২৩ ০৭:৩৩
An image of Lalbazaar

—ফাইল চিত্র।

‘নামে কী এসে যায়!’— লিখেছিলেন শেক্সপিয়র। কিন্তু কলকাতা পুলিশের অধীনস্থ কাশীপুর থানা হাড়ে হাড়ে বুঝছে, নামে সত্যিই আসে যায়। কারণ, ইংরেজিতে নামের আদ্যক্ষর আলাদা হলেও উচ্চারণ একই রকম হওয়ায় ফি বছর তাদের কাছে এসে পৌঁছয় ভাঙড়ের বারুইপুর জেলা পুলিশের অধীনে থাকা কাশীপুর থানার নানা চিঠিপত্র। জরুরি সমন থেকে মামলার রিপোর্ট— বাদ যায় না কিছুই। এ বার মুখ্যমন্ত্রীর ইচ্ছায় ভাঙড় কলকাতা পুলিশের অধীনে এলে এই বিভ্রাট কি ঘুচবে? আপাতত সেই প্রশ্নই ঘুরপাক খাচ্ছে কলকাতার কাশীপুর থানার অন্দরে। সেখানকার আধিকারিকেরা প্রায় ধরেই নিচ্ছেন, এক নামে আর দু’টি থানা থাকবে না।

চিন্তায় পড়েছেন কলকাতা পুলিশের শীর্ষ কর্তারাও। ভাঙড় কলকাতা পুলিশের অধীনে আসার অর্থ, সেখানকার ভাঙড় থানা এবং কাশীপুর থানার কাজ লালবাজার থেকে নিয়ন্ত্রিত হওয়া। তখন একটি পুলিশ কমিশনারেটের মধ্যে একই নামে দুই থানা রাখা হবে কী ভাবে? কোনও অপরাধ ঘটলে কোন থানার কথা বলা হচ্ছে, তা বুঝতেও তো যথেষ্ট সমস্যা হবে। এমনিতে কলকাতা পুলিশের এক-একটি থানাকে ইংরেজির এক-একটি অক্ষর দিয়ে ডাকা হয় বাহিনীর অন্দরে। কিন্তু তাতেও কার্যক্ষেত্রে সমস্যা থেকেই যাবে বলে আশঙ্কা পুলিশকর্তাদের। লালবাজারের এক কর্তা শুক্রবার বলেন, ‘‘একে লালবাজার থেকে ৪০ কিলোমিটারেরও বেশি দূরে ভাঙড়ের কাশীপুর থানা। বাড়তি বাহিনী পাঠিয়ে ব্যবস্থা নিতে নিতেই সব শেষ হয়ে যাবে। তার চেয়েও বড় কথা, বাহিনীকে হয়তো বলা হবে এক কাশীপুর থানার কথা, তাঁরা বুঝবেন অন্য কাশীপুর থানা!’’

ভাঙড় নিয়ে নতুন ডিভিশন তৈরি হলে সেটির নামই বা কী হবে, চর্চা চলছে তা নিয়েও। লালবাজারের এক কর্তার মন্তব্য, ‘‘আপাতত ভাঙড়কে রাখা হচ্ছে পূর্ব (ইস্ট) ডিভিশনে। এর পরে হয়তো হবে দূরের পূর্ব ডিভিশন (ফার ইস্ট)।’’ যা শুনে অন্য পুলিশকর্তারা রসিকতার সুরে বলেন, ‘‘ফার ইস্ট ডিভিশন হওয়ার পরে কি এখনকার ইস্ট ডিভিশন, যেটা মাঝে থাকবে, সেটাকে করা হবে মিডল ইস্ট ডিভিশন?’’

পুলিশ সূত্রে জানা যাচ্ছে, শেষ পর্যন্ত ভাঙড়ের কাশীপুর থানার নাম বদল হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। সে ক্ষেত্রে এখনকার ভাঙড়ের সাতটি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকা নিয়ে যে কাশীপুর থানা, তার কাজ শানপুকুর এবং ভোগালি-১ পঞ্চায়েতের মধ্যে সীমাবদ্ধ রেখে ভোগালি বা শানপুকুর থানা নাম দেওয়া হতে পারে। পোলেরহাট-১, পোলেরহাট-২ এবং ভগবানপুর পঞ্চায়েত নিয়ে তৈরি হতে পারে আর একটি থানা। ভোগালি-২ এবং চালতাবেড়িয়া পঞ্চায়েত নিয়েও একটি থানা তৈরি করা হতে পারে। সে ক্ষেত্রে অপরিবর্তিত থাকবে কলকাতার কাশীপুর থানার নাম। এক পুলিশকর্তা জানান, ইতিমধ্যেই কলকাতার কাশীপুর থানা ভেঙে কাশীপুর এবং সিঁথি থানা তৈরি হয়েছে। প্রায় আড়াই বর্গকিলোমিটার এলাকা জুড়ে কাজ করা এই থানার নাম বদল করে আর জটিলতা বাড়ানো হবে না।

পুলিশকতার্দের আরও দাবি, কলকাতার কাশীপুর এবং ভাঙড়ের কাশীপুর থানার মধ্যে পার্থক্যও বিস্তর। গান অ্যান্ড শেল ফ্যাক্টরি, কাশীপুর উদ্যানবাটী এবং মিশ্র ভাষাভাষীর জনবসতির কাশীপুর থানা এলাকা ততটা ‘ভাল নয়’ বলে পুলিশমহলে পরিচিত হলেও এর সঙ্গে তুলনাই চলে না ভাঙড়ের কাশীপুর থানার। শুধু সদ্যসমাপ্ত পঞ্চায়েত নির্বাচন ঘিরেই ভাঙড়ের কাশীপুর থানায় সাতটি খুনের মামলা রুজু হয়েছে। খুনের চেষ্টা, অপহরণ, বোমাবাজি, গুলি চালানো মিলিয়ে মামলা হয়েছে পঞ্চাশটিরও বেশি। আছে পুলিশকে মারধরের মতো মামলাও।

এক পুলিশকর্তার মন্তব্য, ‘‘ভাঙড় নিয়ে এমনিই চিন্তা রয়েছে। তার মধ্যে এই নাম-বিভ্রাট। ভাঙড়ের সব থানা কলকাতার মধ্যে এলেও কাশীপুর থানার নামটা ছেড়েই আসতে হবে। তাতে যদি কিছুটা কুখ্যাতি কমে।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Police Stations Lalbazaar Baruipur

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy