Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

থানায় মশার আস্তানা, আক্রান্ত চার পুলিশকর্মী

উত্তর বন্দর থানার গেট দিয়ে ঢুকতেই বাঁ দিকে চোখে পড়ল, ডাঁই করে রাখা মাটি ও প্লাস্টিকের কাপ। অনেকগুলিতেই জমে রয়েছে বৃষ্টির জল।

পূতিগন্ধময়: উত্তর বন্দর থানা চত্বরে জমে থাকা আবর্জনা। ছবি: সুদীপ ঘোষ

পূতিগন্ধময়: উত্তর বন্দর থানা চত্বরে জমে থাকা আবর্জনা। ছবি: সুদীপ ঘোষ

মেহবুব কাদের চৌধুরী
শেষ আপডেট: ২৯ অগস্ট ২০১৮ ০০:৪৭
Share: Save:

কনস্টেবল সুখেন মাঝি। ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত। ভর্তি রয়েছেন পার্ক স্ট্রিটের এক বেসরকারি হাসপাতালে।সাব-ইনস্পেক্টর রঘুনাথ দাস। আক্রান্ত ডেঙ্গিতে। ভর্তি রয়েছেন বাইপাস সংলগ্ন একটি বেসরকারি হাসপাতালে।কনস্টেবল শেখ মিরাজুদ্দিন। জ্বর, গাঁটে গাঁটে ব্যথায় বিছানা ছেড়ে উঠতে পারছেন না। ভর্তি আছেন সুখেন মাঝির সঙ্গে একই হাসপাতালে। উপসর্গ দেখে চিকিৎসকেরা বলেছেন, চিকুনগুনিয়া হতে পারে।

কনস্টেবল সুব্রত মজুমদার। ভর্তি রয়েছেন পার্ক স্ট্রিটের এক বেসরকারি হাসপাতালে। মিরাজুদ্দিনের মতোই গায়ে প্রচণ্ড জ্বর। গাঁটে ব্যথা। এ ক্ষেত্রেও চিকিৎসকদের ধারণা, সংক্রমণ চিকুনগুনিয়া হতে পারে।সুখেন, রঘুনাথ, মিরাজুদ্দিন এবং সুব্রত— চার জনেই কলকাতা পুলিশের উত্তর বন্দর থানায় কর্মরত। তিন কনস্টেবল থাকেন থানার ব্যারাকেই। একসঙ্গে চার পুলিশকর্মী মশাবাহিত রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ায় আতঙ্কিত ব্যারাকের অন্য কর্মীরা। তাঁদের অভিযোগ, গত পাঁচ মাসে এই থানারই তিন জন পুলিশকর্মী ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়েছেন।

পার্ক স্ট্রিটের বেসরকারি হাসপাতালে যে তিন কনস্টেবল ভর্তি হয়েছেন, তাঁদের চিকিৎসক মাসুদ ভাটিল বলেন, ‘‘ওঁদের মধ্যে এক জন ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন। বাকি দু’জনের ক্ষেত্রে চিকুনগুনিয়ার লক্ষণ ধরা পড়েছে। রক্ত পরীক্ষার রিপোর্ট পেলেই জানা যাবে রোগটা কী।’’

মশাবাহিত রোগের হাত থেকে বাঁচতে চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে লালবাজার থেকে শহরের প্রতিটি থানায় নির্দেশিকা পৌঁছেছিল। তাতে বলা হয়েছিল, থানার আশপাশ পরিষ্কার রাখতে হবে, নর্দমার জল যাতে না জমে থাকে সে বিষয়ে নিশ্চিত হতে হবে। কোথাও জল জমতে দেওয়া যাবে না।

কিন্তু মঙ্গলবার উত্তর বন্দর থানার গেট দিয়ে ঢুকতেই বাঁ দিকে চোখে পড়ল, ডাঁই করে রাখা মাটি ও প্লাস্টিকের কাপ। অনেকগুলিতেই জমে রয়েছে বৃষ্টির জল। থানার পিছনের নর্দমাতেও প্লাস্টিকের কাপ। তাতে জমেছে জল। পরপর ডাস্টবিন থেকে আবর্জনা উপচে ছড়িয়ে রয়েছে। থানার ভিতরেও ছবিটাও তথৈবচ। কম্পিউটার ঘরের পাশে চাইল্ড কেয়ার রুমটি এখন পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে। ওই ঘরের ছাদ থেকে চুঁইয়ে চুঁইয়ে জল পড়ে নীচে জমে থাকছে। সেখানে মশার লার্ভা জন্মাচ্ছে বলে অভিযোগ করছেন থানার পুলিশকর্মীরাই। পরিত্যক্ত ওই ঘরটির পাশেই পুলিশের ব্যারাক। পুলিশকর্মীরা বলছেন, ‘‘আমরা মশার উৎপাতে ব্যারাকে টিকতে পারি না। আবার মশা তাড়ানোর পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেই। পাখাও জোরে চলে না।’’

থানার একপাশে পড়ে আছে পরিত্যক্ত মোটরবাইক ও ভ্যান। এক পুলিশকর্মীর অভিযোগ, ‘‘দীর্ঘদিন ধরে ওই গাড়িগুলি একই জায়গায় রয়েছে। সেগুলিতে জল জমে মশার আঁতুড়ঘরে পরিণত হয়েছে।’’

তাঁর থানা এলাকায় চার জন পুলিশকর্মী মশাবাহিত রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি। অথচ উত্তর বন্দর থানার ওসি পার্থ মুখোপাধ্যায় বলছেন, ‘‘আমার থানার কেউ অসুস্থ হননি। এখানে কোনও মশার উপদ্রবও নেই!’’ অথচ ওই ঘরেই ভনভন করছে মশা।

মশাবাহিত রোগের প্রকোপ ঠেকাতে চলতি মাসে লালবাজারের তরফে জারি করা বিজ্ঞপ্তি প্রতিটি থানা মানছে কি না, তা সংশ্লিষ্ট ডিসি-দের দেখতে বলা হয়েছিল। লালবাজারের নির্দেশ সত্ত্বেও উত্তর বন্দর থানায় মশাবাহিত রোগের প্রকোপ বাড়ছে কেন? এ প্রসঙ্গে জানতে ডিসি (বন্দর) ওয়াকার রেজাকে ফোন করা হলে তাঁর ফোন বেজে গিয়েছে। এসএমএস করা হলেও জবাব মেলেনি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE