চিকিৎসকের ফ্ল্যাটের ভাঙা দরজার হ্যাচ বোল্ট। নিজস্ব চিত্র
হ্যাচ বোল্ট ভাঙা দরজার উপরে লেখা দুই চিকিৎসকের নাম। ভিতরের আসবাবপত্র বিক্ষিপ্ত ভাবে ছড়ানো। মাটিতে ডাঁই করা ছাইয়ের স্তূপ! একেবারে কোনার ঘরে জড়োসড়ো হয়ে বসে এক যুবক। উস্কোখুস্কো চুল। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ঘরেও দরদর করে ঘামছেন। কোনও মতে বললেন, ‘‘রোজ শুধু হাসপাতাল আর ঘর ভাল লাগছিল না। কয়েক দিন ধরে এই চাপ নিতে পারছি না। কাল রাতে...!’’
কথা শেষ করতে পারেন না যুবক। শুক্রবার মধ্যরাতে তাঁর খোঁজেই তিলজলার এক আবাসনে হানা দিয়েছিল পুলিশ। খবর ছিল, দ্রুত না গেলে আত্মঘাতী হতে পারেন এক সরকারি হাসপাতালের ওই চিকিৎসক। পুলিশ সূত্রের খবর, রাত আড়াইটে নাগাদ লালবাজারের কন্ট্রোল রুমে ফোন করে এক তরুণী জানান, তিনি দিল্লি থেকে কথা বলছেন। সেই চিকিৎসকের নাম, ঠিকানা দিয়ে তরুণী বলেন, ‘‘ও খুব ভেঙে পড়েছে। আত্মহত্যা করবে বলেছে। ফোনটা বন্ধ করে দিয়েছে। তাড়াতাড়ি না গেলে হয়তো বাঁচানো যাবে না!’’
লালবাজার থেকে খবর পেয়ে রাত পৌনে তিনটে নাগাদ পুলিশের একটি দল বেনিয়াপুকুর থানা এলাকার ওই আবাসনে যায়। চারতলার ফ্ল্যাটে বেল বাজিয়ে সাড়া না পেয়ে দরজা ভেঙে ঢোকে পুলিশ। অসংলগ্ন অবস্থায় থাকা যুবককে উদ্ধার করে নিয়ে যাওয়া হয় বেনিয়াপুকুর থানায়। শনিবার সকালে পুলিশ তাঁকে ফ্ল্যাটে পৌঁছে দেয়। দিল্লির যে নম্বর থেকে ফোন এসেছিল, সেখানেও কথা বলানো হয় ওই যুবককে।
ওই যুবক এ দিন জানান, কলকাতার এক সরকারি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে স্নাতকোত্তরে শেষ বর্ষের পড়া চলছে তাঁর। তাঁরা আদতে পূর্ব দিল্লির বাসিন্দা। বাবা মারা গিয়েছেন। মা পেশায় ইঞ্জিনিয়ার। দিল্লিতেই থাকেন। পড়ার সূত্রেই গত দু’বছর তিনি কলকাতায় রয়েছেন। বললেন, ‘‘ফ্ল্যাটে একাই থাকি। কাল রাতে খুব ভেঙে পড়েছিলাম। বান্ধবীর সঙ্গে কথা বলার পরে ফোন বন্ধ করে দিই।’’ তাঁর দাবি, ‘‘প্রতি সপ্তাহে অন্তত একশো ঘণ্টারও বেশি কাজ করতে হয়। বহির্বিভাগে চারশো-পাঁচশো রোগীর ভিড় থাকে। এই চাপ আর নিতে পারছি না।’’
মনোরোগ চিকিৎসক অনিরুদ্ধ দেব বলছেন, ‘‘মানসিক অবসাদে বিশ্ব জুড়ে বহু চিকিৎসক আত্মঘাতী হচ্ছেন। ভুল করার চাপ অন্য পেশার থেকে চিকিৎসা ক্ষেত্রে অনেক বেশি। ওঁর উচিত কোনও মনোরোগ চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া।’’ দরজার ভাঙা হ্যাচ বোল্ট হাতে নিয়ে ওই চিকিৎসক বললেন, ‘‘কয়েক দিন ছুটি চাই, আর কিছু নয়।’’ রাজ্যের স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা
দেবাশিস ভট্টাচার্য অবশ্য বলছেন, ‘‘নিয়ম মতো কোনও চিকিৎসকেরই হাসপাতালে সপ্তাহে একশো ঘণ্টার বেশি কাজ করার কথা নয়। ওই চিকিৎসকের সঙ্গে কী ঘটেছে দেখছি।
তা ছাড়া মানসিক চাপের ক্ষেত্রে আমাদের নির্দিষ্ট চিকিৎসার ব্যবস্থা রয়েছে। ওই চিকিৎসক তা পেয়েছেন কি না, সেটাও দেখছি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy