E-Paper

বেনামে বাস জঙ্গি, খুনির! হোটেল ও অতিথিশালার রিপোর্ট চায় পুলিশ

সূত্রের খবর, কলকাতা এবং পার্শ্ববর্তী সব পুলিশ কমিশনারেট থেকে থানায় থানায় নির্দেশ গিয়েছে, এক মাসের মধ্যে থানা এলাকায় থাকা সমস্ত হোটেল, অতিথিশালা এবং ধর্মশালা সম্পর্কে রিপোর্ট দাখিল করতে হবে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১১ অগস্ট ২০২৫ ০৯:২৬
শহরেই অতিথিশালায় ঘাঁটি গেড়েছিল খুনিরা!

শহরেই অতিথিশালায় ঘাঁটি গেড়েছিল খুনিরা! —প্রতীকী চিত্র।

অপরাধ সংঘটিত করার পরে জঙ্গিরা যে কলকাতা শহরেই ঘুরে বেড়াচ্ছে, এখানেই হোটেল, অতিথিশালা বদলে বদলে থাকছে, জানা যায়নি। সম্প্রতি গ্রেফতারির আগে পর্যন্ত টের পাওয়া যায়নি, পটনায় এক কুখ্যাত দুষ্কৃতীকে খুন করে পালিয়ে এসে এই শহরেই অতিথিশালায় ঘাঁটি গেড়েছে খুনিরা! একই ভাবে, হোটেলের ঘরে সঙ্গীকে খুন করে পালিয়ে যাওয়া অভিযুক্তের সম্পর্কেও প্রাথমিক তথ্য পেতে হিমসিম খেয়েছে পুলিশ। এমন একের পর এক ক্ষেত্রে উঠে এসেছে, কোনও রকম নথি ছাড়াই হোটেল-অতিথিশালায় ঘর নিয়ে থাকার ঘটনা। অভিযোগ, বাড়তি টাকা দিলেই মিলেছে সমস্ত নিয়মকে বুড়ো আঙুল দেখানোর সুযোগ।

সাম্প্রতিক সময়ে পর পর এমন ঘটনায় বিপাকে পড়া পুলিশ এ বার নড়ে বসতে চলেছে। সূত্রের খবর, কলকাতা এবং পার্শ্ববর্তী সব পুলিশ কমিশনারেট থেকে থানায় থানায় নির্দেশ গিয়েছে, এক মাসের মধ্যে থানা এলাকায় থাকা সমস্ত হোটেল, অতিথিশালা এবং ধর্মশালা সম্পর্কে রিপোর্ট দাখিল করতে হবে। সংশ্লিষ্ট জায়গাগুলিতে কোথায়, কত জন থাকতে পারেন, গত ছ’মাসে কত জন থেকেছেন, তাঁরা কোথা থেকে এসেছিলেন— চাওয়া হয়েছে সে সব তথ্য। পাশাপাশি, পুরসভাকে ফাঁকি দিয়ে যেখানে এ ভাবে অতিথিদের থাকতে দেওয়া হচ্ছে, সেই জায়গার মালিকের বিরুদ্ধে পৃথক ভাবে ব্যবস্থা নিতে চাইছে পুলিশ।

যদিও এত কিছু করেও আখেরে কাজ হবে কিনা, সেই প্রশ্ন তুলছেন অনেকে। তাঁদের দাবি, উৎসবের মরসুমে, স্বাধীনতা দিবস বা প্রজাতন্ত্র দিবসের মতো বিশেষ দিনের আগে থানা থেকে নজরদারি চালানোর কথা বলা হয়। কিন্তু সেই দিন বা উৎসব পেরিয়ে গেলেই কলকাতার হোটেল, অতিথিশালাগুলি ‘খোলা হাট’-এর চেহারা নেয়। ‘রেজিস্টার’-এ যে নাম-ঠিকানা লেখা হয়েছে বা কলকাতায় থাকার যে কারণ দেখানো হয়েছে, তা সত্যি কিনা, সেই নিশ্চয়তা মেলে না। গত বছরেই বেঙ্গালুরুর রামেশ্বরমে একটি কাফেতে বিস্ফোরণ ঘটিয়ে পালিয়ে আসা জঙ্গিরা কলকাতার অতিথিশালায় উঠেছিল ভুয়ো ড্রাইভিং লাইসেন্স এবং আধার কার্ড দেখিয়ে।

নিউ মার্কেট এলাকার এক অতিথিশালায় সম্প্রতি ঘর নিতে গিয়েছিলেন এক যুগল। জানিয়েছিলেন, পরিচয়পত্র সঙ্গে নেই। পরে পরিচয়পত্র জমা দেবেন, এই শর্তে ওই যুগলকে ঘর দিতে রাজি হয়ে যান অতিথিশালার রিসেপশনে কাজ করা তরুণী। কিন্তু পুলিশ ধরবে না? প্রশ্ন করায় তরুণীর উত্তর, ‘‘পুলিশ সে ভাবে দেখে না। ছাড় না দিলে আমাদের বাড়তি আয় হবে কী করে?’’ সদর স্ট্রিটের একটি অতিথিশালায় আবার যত জনের নাম খাতায় লেখা আছে, থাকছেন তার চেয়ে বেশি লোক। সেখানকার এক কর্মী বলেন, ‘‘এই বাজারে অতিথি ফিরিয়ে দিলে ব্যবসা চলবে?’’ ধর্মতলা চত্বরে একটি অতিথিশালায় আবার রেজিস্টারই নেই। ম্যানেজারের দাবি, পাতা শেষ হয়ে গিয়েছে।

শহরের অন্যত্র যেখানে নিয়মিত অতিথির ভিড় তেমন থাকে না, সেখানে বেশ কিছু হোটেল ও অতিথিশালায় দেখা গেল, নাম-পরিচয় লিখে তবেই যে ঘর নিতে হবে, এমন কড়াকড়ি নেই। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির ছবি তুলে রাখা বা নিয়মমতো সরকারি পোর্টালে সেই তথ্য আপলোড করারও বালাই নেই। সম্প্রতি ভবানীপুরের একটি হোটেল থেকে লি রোডের এক স্বর্ণ ব্যবসায়ীর দেহ উদ্ধার হয়েছিল। সেখানেও নাম-পরিচয় না লিখেই থাকা হচ্ছিল বলে অভিযোগ ওঠে। সেখানকার কর্মীরা জানালেন, পরিচয়পত্র না থাকলে ১৫০০ টাকার ঘর ২২০০ টাকায় দিতে হবে। বাকিটা হোটেল কর্তৃপক্ষই সামলে নেবেন।

পুলিশের দাবি, এই সব কারণেই ‘অনলাইন গেস্ট ফর্ম’ অ্যাপ চালু করা হয়েছিল। তাতে থানায় বসেই যেমন সব দেখা যায়, তেমনই হোটেলের সিসি ক্যামেরার ফুটেজের সময়ের সঙ্গে পরে ফর্ম পূরণের সময় মিলিয়ে দেখে নেওয়া যায়। যদিও বাস্তবে দেখা গিয়েছে,অধিকাংশ হোটেল কর্তৃপক্ষ অ্যাপটি সম্পর্কেই অবগত নন। বড় হোটেল ও অতিথিশালা নিয়ম মেনে ‘ফরেনার্স রিজিয়োনাল রেজিস্ট্রেশন অফিস’ (এফআরআরও) ওয়েবসাইটে তথ্য তুলে দিলেও ছোট হোটেল বা অতিথিশালার সে সবের বালাই নেই। এ বার এই পরিস্থিতিরই বদল ঘটাতে চাইছে পুলিশ।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Guest Houses Hotel Booking

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy