Advertisement
E-Paper

কী ভাবে আঘাত, বয়ান মেলাচ্ছে পুলিশ

জন্মদিন ছিল ২৪ জুলাই, রবিবার। কিন্তু পার্টি শুরু হয়ে গিয়েছিল তার আগের দিন, অর্থাৎ শনিবারেই। আর সেই পার্টির সন্ধ্যাতেই সানি পার্ক আবাসন থেকে মেলে আবেশ দাশগুপ্তর দেহ। আবাসনের একাধিক জায়গায় জমাট রক্ত পড়ে থাকতে দেখা যায়।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৭ জুলাই ২০১৬ ০৪:৪৯
আবেশ। ফাইল চিত্র।

আবেশ। ফাইল চিত্র।

জন্মদিন ছিল ২৪ জুলাই, রবিবার। কিন্তু পার্টি শুরু হয়ে গিয়েছিল তার আগের দিন, অর্থাৎ শনিবারেই। আর সেই পার্টির সন্ধ্যাতেই সানি পার্ক আবাসন থেকে মেলে আবেশ দাশগুপ্তর দেহ। আবাসনের একাধিক জায়গায় জমাট রক্ত পড়ে থাকতে দেখা যায়।

এই অস্বাভাবিক মৃত্যুর তদন্তে আবাসনের নিরাপত্তারক্ষী, গাড়ির চালকদের একাংশের সঙ্গে কথা বলে বিভিন্ন তথ্য উঠে এসেছে। ওই পার্টিতে থাকা আবেশের বন্ধুরাও সবাই পুলিশের কাছে বয়ান দিয়েছে। যে বন্ধুটি তাকে ওই পার্টিতে নিয়ে গিয়েছিল, বয়ান দিয়েছে সে-ও। এই সব বয়ান মিলিয়ে সেই সন্ধ্যার
একটা ঘটনা পরম্পরা তৈরির চেষ্টা করছে লালবাজার।

কী বলেছেন আবাসনের গাড়ি চালক ও নিরাপত্তারক্ষীদের একাংশ?

এঁদের বক্তব্য অনুযায়ী, লেখক অমিত চৌধুরীর মেয়ের জন্মদিন পালন করতে শনিবার দুপুর ১২টা নাগাদ জনা ১৬-১৭ ছেলেমেয়ে জড়ো হয় আবাসনে। তাদের বয়স ১৬ থেকে ১৭-র মধ্যে। দুপুর ১টার কিছু পরে সবাই বেরিয়ে যায় দুপুরের খাবার খেতে। দুপুরের খাওয়া সেরে প্রায় সাড়ে ৩টে নাগাদ আবাসনে ফিরে দু’তিনটি ছোট ছোট দলে ভাগ হয়ে আড্ডা শুরু করে যায় তারা। কোনও দল অমিত চৌধুরীর ফ্ল্যাটে আড্ডা মারতে চলে যায়, কোনও দল নীচে বসেই শুরু করে গল্পগুজব।

আবাসনের সামনে ছোট একটি লন। সামনের দিকে দু’টো গেট। একটি গেটের পাশে নিরাপত্তারক্ষীদের ঘর ও ড্রাইভারদের বিশ্রামকক্ষ। আবাসনের পিছনের দিকে একটি ছোট খেলার মাঠ রয়েছে। সেখানে একটি দোলনা আছে। মাঠের একপাশে ড্রাইভার ও পরিচারকদের শৌচালয়। শৌচালয়-লাগোয়া এমন একটি জায়গা রয়েছে, বাইরে থেকে যে জায়গাটা সহজে চোখে পড়ে না।

বক্তব্য অনুযায়ী, ওই জায়গাতেই হই-হুল্লোড়ের পাশাপাশি শুরু হয় মদ খাওয়া। বিকেল সাড়ে পাঁচটা নাগাদ হঠাৎই কথা কাটাকাটি শোনা যায়। তার পরে একটু দৌড়োদৌড়ি, ধাক্কাধাক্কি। সেই সময় মাঠে ওই দলটি ছাড়া আর কেউ ছিল না। তবে কী ভাবে আঘাত পেল আবেশ? প্রত্যক্ষদর্শীদের কেউই এই মোক্ষম সময়টা দেখেননি বলে দাবি করেছেন। তাঁদের দাবি, আচমকাই কয়েক জন মেয়ে ‘হেল্প আস, হেল্প আস’ বলে চিৎকার শুরু করে। সেটা শুনে কয়েক জন ড্রাইভার ও নিরাপত্তারক্ষী ছুটে যান। ছুটে আসেন আরও কয়েক জন। সকলেই দেখেন, শৌচালয়ের পাশে সি-ব্লকের লিফটের কাছে উপুড় হয়ে পড়ে আবেশ ছটফট করছে। তার চারপাশ রক্তে ভেসে যাচ্ছে। এটা দেখেই ছেলেমেয়েদের বাইরে যাওয়া আটকাতে আবাসনের পশ্চিম গেটটি বন্ধ করে দেন নিরাপত্তারক্ষীরা। পূর্ব গেটটি তখনও খোলা ছিল। ওই গেট দিয়েই কেউ নিজের গাড়ি নিয়ে, কেউ হেঁটে বেরিয়ে যায়। আটকাতে গেলে কয়েক জন বলে, ‘ট্যাক্সি ডাকতে যাচ্ছি’। তখন আবেশের সামনে ছিল তিন জন মেয়ে। এদের এক জনের পরনে ছিল স্কুলড্রেস।

যার জন্মদিনের পার্টি, সেই মেয়েটির বাবা-মা এর কিছু পরে নীচে আসেন। তাঁরা নিজেদের গাড়িতে আবেশকে তুলে বেরিয়ে যান। এর মাঝে কেউ এক জন স্থানীয় থানায় ফোন করলে অল্পক্ষণের মধ্যে পুলিশের দু’জন অফিসার আসেন। অবশ্য তার আগেই আবেশকে নিয়ে গাড়ি বেরিয়ে গিয়েছে। তার পর একে একে পুলিশ কর্তারা হাজির হন।

যে ছোটবেলার বন্ধু আবেশকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে গিয়েছিল, সে পুলিশকে কী বলেছে? পুলিশর দাবি, আবেশের বন্ধু জানিয়েছে, বিকেল সাড়ে ৫টা নাগাদ সে ও এক বন্ধু দোলনায় বসেছিল। দোলনার সামনেটা বেশ ঢালু। সেই সময় বগলে মদের বোতল নিয়ে কিছু একটা বলতে বলতে সেই ঢাল ধরে নামতে গিয়ে হঠাৎই পড়ে যায় আবেশ। বোতল তখনও বগলে চাপা। ওই অবস্থায় বোতলের ওপরেই পড়ে যায় সে। আবেশের বগল থেকে রক্ত পড়তে দেখে দোলনায় থাকা অন্য বন্ধুটি ‘ব্লাড’ ‘ব্লাড’ বলে চিৎকার শুরু করে। খবর যায় অমিত চৌধুরীর মেয়ে-সহ বাকি বন্ধুদের কাছেও।

আবেশের ছোটবেলার সেই বন্ধুর দাবি, আহত অবস্থাতেও আবেশ উঠে দাঁড়ায়। কিছু দূর এগিয়ে বসে পড়ে সে। সেখানেও রক্ত পড়তে থাকে। তার পর? ছোটবেলার ওই বন্ধুর দাবি, সেই সময় সে কয়েক জন বন্ধুকে নিয়ে তার অসুস্থ মাকে দেখতে বেরিয়ে যায়। সে বেরিয়ে যাওয়ার পরে কী ঘটেছে, তা সে জানে না। পার্টিতে হাজির কয়েক জন বন্ধু তদন্তকারীদের জানিয়েছেন, আহত অবস্থায় কিছুটা এগিয়ে শেষ পর্যন্ত বেসমেন্টের কাছে গিয়ে কাত হয়ে পড়ে যায় আবেশ।

কিন্তু পার্কিং লটের কাছে রক্ত এল কোথা থেকে? তদন্তকারীদের দাবি, মেয়ের ফোন পেয়ে নীচে নেমে আমরির অ্যাম্বুল্যান্সকে ফোন করেন অমিত চৌধুরী। কিন্তু দেরি হয়ে যাচ্ছে দেখে নিজের গাড়িতেই আবেশকে তুলে হাসপাতালে রওনা দেন। তখনই পার্কিং লটে খানিকটা রক্ত পড়ে যায়।

Abesh Dasgupta Ballygunj Sunny Park
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy