Advertisement
E-Paper

লভ ইউ কে, ডোন্ট ফরগেট মি... কৃত্তিকার ‘সুইসাইড নোটে’ কে এই ‘কে’? উত্তর খুঁজছে পুলিশ

কে এই ‘কে’? এই ‘কে’র সঙ্গে কি তার মৃত্যুর কোনও সম্পর্ক রয়েছে? এই ‘কে’র সঙ্গে কৃত্তিকার সম্পর্কই বা কী ছিল?

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

সোমনাথ মণ্ডল

শেষ আপডেট: ২২ জুন ২০১৯ ১৮:১২
Share
Save

জি ডি বিড়লা স্কুলের কৃতী ছাত্রী কৃত্তিকা পালের অস্বাভাবিক মৃত্যুর কিনারা করতে গিয়ে একটার পর একটা রহস্যে আটকে পড়ছে পুলিশ। প্রাথমিক ভাবে এটাকে আত্মহত্যার ঘটনা বলেই মেনে নিচ্ছেন তদন্তকারীরা। কিন্তু যে ভাবে এই আত্মহত্যা, এবং আত্মহত্যার আগে যে ভাবে ঠান্ডা মাথায় তিন পাতার চিঠি লিখে গিয়েছে কৃত্তিকা, তদন্তকারী পুলিশ অফিসাররা তাতে রীতিমতো বিস্মিত। চিঠিতে কৃত্তিকা কাউকে দায়ী করে যায়নি। কিন্তু চিঠিতে তাঁর মনের ক্ষোভ, অসন্তোষ, অভিমান প্রকাশ হয়েছে বার বার। এর মধ্যেই চিঠির একটা লাইন বড় ধাঁধায় ফেলেছে পুলিশকে। কৃত্তিকা লিখেছে, ‘...আই লভ ইউ কে (K), ডোন্ট ফরগেট মি...’। কারও নামের আদ্যক্ষর বলেই মনে হয়। কিন্তু কে এই ‘কে’? এই ‘কে’র সঙ্গে কি তার মৃত্যুর কোনও সম্পর্ক রয়েছে? এই ‘কে’র সঙ্গে কৃত্তিকার সম্পর্কই বা কী ছিল? কৃত্তিকার নিজের নামের আদ্যক্ষরও ‘কে’। তবে কি মৃত্যুর আগে নিজের সঙ্গেই নিজে এমন নিঠুর পরিহাস করে গেল সে? তদন্তকারীদের কাছে এখনও এর উত্তর একেবারেই স্পষ্ট নয়।

পুলিশ জানতে পেরেছে, এর আগেও একবার আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিল কৃত্তিকা। তার অভিভাবকরা সেই ঘটনার কথা স্কুলে রিপোর্ট করেননি। শুক্রবারের ঘটনা ঘটার পর তা স্কুলকে জানানো হয়। দক্ষিণ কলকাতার রানিকুঠিতে জি ডি বিড়লা স্কুলের ক্লাস টেনে পড়ত মেধাবী ছাত্রী কৃত্তিকা পাল। বাড়ি বৈষ্ণবঘাটায়। শুক্রবার স্কুলের শৌচাগারে অচৈতন্য অবস্থায় তাকে পাওয়া যায়। মুখ প্লাস্টিকে মোড়া ছিল। বাঁ হাতের শিরা কাটা। পাশে পড়ে তিন পাতার চিঠি। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পর তার মৃত্যু হয়। রিজেন্ট পার্ক থানার পুলিশ তদন্ত শুরু করলেও, শুক্রবারই এর তদন্তের ভার তুলে নেয় লালবাজারের হোমিসাইড শাখা।

শনিবার কৃত্তিকার দেহের ময়না তদন্ত হয়েছে। প্রাথমিক রিপোর্টে বলা হচ্ছে— শ্বাসরোধের কারণেই মৃত্যু হয়েছে তার। এটাই বেশি করে ভাবাচ্ছে তদন্তকারীদের। কৃত্তিকা যদি সত্যিই আত্মঘাতী হয়ে থাকে, তবে এটি একটি বিরল আত্মহত্যার ঘটনা। মুখে প্লাস্টিক বেঁধে, নিজেকে নিজে শ্বাসরোধ করে মারার চেষ্টা সফল হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। কারণ, দম বন্ধ হয়ে আসার আগে শারীরবৃত্তীয় কারণেই নাক-মুখের আবরণ খুলে বা ছিঁড়ে ফেলার মরিয়া চেষ্টাটাই স্বাভাবিক। কিন্তু কৃত্তিকার ক্ষেত্রে তেমনটা হয়নি। কেন হয়নি? এর পিছনে কি কোনও অন্য কোনও হাত থাকতে পারে? কৃত্তিকা কি আত্মহত্যার চেষ্টা করার আগে কোনও ওষুধ খেয়েছিল? প্রবল মানসিক অবসাদ বা বিতৃষ্ণা থেকে তৈরি হওয়া জেদই কি প্রায় অসম্ভবকে সম্ভব করল? সমস্ত দিকই খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

এসএসকেএম মর্গের বাইরে কান্নায় ভেঙে পড়েছেন কৃত্তিকার মা। শনিবার। ছবি: সুমন বল্লভ

এক সময় কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা, হোমিসাইড-সহ বিভিন্ন শাখায় গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব সামলানো সমীর গঙ্গোপাধ্যায় বললেন, “আত্মহত্যার ব্যাপারে চরম ডিটারমিনেশন থাকলে, এমন বিরল ঘটনাও ঘটিয়ে ফেলা যেতে পারে। আপাত ভাবে যা প্রায় অসম্ভব বলে মনে হয়, কিছু ক্ষেত্রে তা সম্ভব।”

আরও পড়ুন: মুখে প্লাস্টিক, স্কুলে ছাত্রীর মৃত্যুতে রহস্য

শেষ পর্যন্ত এটি আত্মহত্যার ঘটনাই যদি হয়, তবে কয়েকটি বিষয়ে তদন্তকারীরা নিশ্চিত। এক, দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা করেই আত্মহত্যার দিকে গিয়েছে কৃত্তিকা। এবং ঠান্ডা মাথায় নিজের পরিকল্পনা বাস্তবায়িত করেছে। দুই, প্রবল মানসিক চাপে ভুগছিল সে।

কৃত্তিকা ঝড়ঝড়ে হাতের লেখায় যে তিন পাতার ‘সুইসাইড নোট’ লিখেছে ইংরেজিতে, তাতে একটাও কাটাকুটি নেই। তদন্তকারীরা বলছেন, স্থির-ঠান্ডা মাথায় যে সে গোটা পরিকল্পনাটা করেছিল, এটা তারই প্রমাণ। এমনকি কৃত্তিকা যে ভাবে আত্মহত্যা করেছে, ওই নোটে তারও ইঙ্গিত রয়েছে। শুক্রবার নিজের ক্লাস রুম থেকে শৌচালয়ে যাওয়ার আগে সহপাঠীদের সে বলেছিল শরীর খারাপ লাগছে, ‘সিক রুমে’ যাচ্ছে। কিন্তু সেখানে না গিয়ে ‘ওয়াশরুমে’ চলে যায় সে।

কৃত্তিকার স্কুলের সামনে পুলিশ প্রহরা। —নিজস্ব চিত্র।

পুলিশের অনুমান, সিনেমা-ভিডিয়ো ক্লিপ-ওয়েব সিরিজ জাতীয় কোনও কিছু থেকে এ ভাবে আত্মহত্যার পরিকল্পনাটা মাথায় এসেছিল তার। এমনটাও হতে পারে, আত্মহত্যার পরিকল্পনা করতে সে নিজে এ ধরণের মুভি, ভিডিয়ো বা লেখাপত্র সার্চ করে দেখেছে। কৃত্তিকার ল্যাপটপ, মোবাইল ফোন খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

কিন্তু কেন আত্মহত্যা করল কৃত্তিকা? লেখাপড়ায় দুর্দান্ত। ক্যারাটে শিখত। আত্মবিশ্বাসী ছিল সব বিষয়ে। ক্লাস টুয়েলভ পাশ করার পর ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিস্টিক্যাল ইনস্টিটিউট বা আইএসআই-তে পড়ার পরিকল্পনা ছিল। তার প্রস্তুতি ইতিমধ্যেই সে শুরু করে দিয়েছিল। এত কিছুর পরও কী হল হঠাত্ করে? পুলিশ এবং মনস্তত্ত্ববিদদের অনেকে বলছেন, হঠাত্ করে কিছু ঘটেনি বলেই তাঁদের মত। এত কিছুর পরও, একটি ছেলে বা মেয়ের মনের ভিতরে এমন কিছু ঘটতেই পারে যা তাকে জীবন সম্পর্কে হতাশ করে ফেলে। কৃত্তিকার চিঠি পড়ে তদন্তকারীদের মত, দীর্ঘ সময় ধরেই তার মধ্যে তীব্র অসন্তোষ বা হতাশা দানা বাঁধছিল। প্রবল মানসিক চাপ তার উপর কাজ করছিল। কিন্তু কিসের চাপ? কিসের হতাশা? কী নিয়ে ক্ষোভ বা অভিমান? তারই উত্তর খুঁজে চলেছে পুলিশ।

আরও পড়ুন: ‘সেটিং দাদা’র কল্যাণে রাতারাতি সব হয়ে যায়

সুইসাইড নোটে কাউকে দোষারোপ করা হয়নি। কৃত্তিকা লিখেছে, ‘আমাকে আর ঝাঁকিয়ে লাভ নেই, আমি আর উঠব না।’, ‘অক্সিজেন নিতে পারছি না, আমার ভাল লাগছে।’ ‘আমার মৃত্যুর জন্যে কেউ দায়ী নয়’। পুলিশ যেন বাবা-মাকে বিরক্ত না করে তা লিখেও, আবার তাদেরই উদ্দেশ্যে লেখা রয়েছে, ‘আমি যখন থাকব না বুঝতে পারবে...’।

শৌচালয় থেকে কৃত্তিকাকে যখন উদ্ধার করা হয়, তার মুখ প্লাস্টিকে মোড়া ছিল। কৃত্তিকা ছাড়া তাতে অন্য কারও হাতের চিন্থ রয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখতে ওই প্লাস্টিক ইতিমধ্যেই ফরেন্সিক পরীক্ষার জন্যে পাঠানো হয়েছে। শৌচালয় থেকে নমুনাও সংগ্রহ করেছে ফরেন্সিক বিভাগ।

ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার হয়েছে পেনসিল কাটার শার্পনারের ব্লেড। তা দিয়ে শিরা কাটা হয়েছে। হাতের আঘাত দেখে তদন্তকারীরা মনে করছেন, সে ঠিক ভাবে শিরা কাটতে পারেননি। ডান হাত দিয়ে বাঁ হাতের শিরা কাটা হয়েছে। এ বিষয়ে হয়তো নিজেই সন্দিহান ছিল। সে জন্যেই হয়তো প্লাস্টিক নিয়ে শৌচালয়ে ঢুকে ছিল।

এক পুলিশ অফিসারের বক্তব্য, “আত্মহত্যার ধরন এবং উদ্ধার হওয়া সুইসাইড নোট দেখে মনে হচ্ছে, সে এতটাই মনোকষ্টে ভুগছিল, যে করে হোক মৃত্যু নিশ্চিত করতে চেয়েছিল। নিজে থেকে প্লাস্টিক জড়িয়ে মারা যাওয়ার বিষয়টিও খুবই বিরল।”

এবার শুধু খবর পড়া নয়, খবর দেখাও।সাবস্ক্রাইব করুনআমাদেরYouTube Channel - এ।

Krittika Pal G.D. Birla Centre For Education Ranikuthi Kolkata Police Suicide

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে আপনার সাবস্ক্রিপশন আপনাআপনি রিনিউ হয়ে যাবে

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।