Advertisement
E-Paper

‘বোমপচা’য় কাবু লাঠিয়াল পুলিশও

দিনের ডিউটি সেরে স্ত্রীকে নিয়ে বেরোনোর কথা। বিকেল থেকে বামেদের লালবাজার অভিযান মোকাবিলা করে থানায় ফিরেছেন। সুগন্ধী সাবান মেখে স্নান সারা। ধোপদুরস্ত পোশাকে ফিটফাট। সময় মতো থানায় পৌঁছে গেলেন স্ত্রী-ও।

সৌভিক চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ০৩ অক্টোবর ২০১৫ ০০:৫০
অঙ্কন: ওঙ্কারনাথ ভট্টাচার্য।

অঙ্কন: ওঙ্কারনাথ ভট্টাচার্য।

দিনের ডিউটি সেরে স্ত্রীকে নিয়ে বেরোনোর কথা। বিকেল থেকে বামেদের লালবাজার অভিযান মোকাবিলা করে থানায় ফিরেছেন। সুগন্ধী সাবান মেখে স্নান সারা। ধোপদুরস্ত পোশাকে ফিটফাট। সময় মতো থানায় পৌঁছে গেলেন স্ত্রী-ও। কিন্তু কাছে এগোতেই নাকে রুমাল চাপা দিয়ে সটান সাত হাত দূরে। দিনের শেষে দুটো মিষ্টি কথার বদলে কপালে জুটল স্ত্রী-র মুখঝামটা— ‘‘ছি ছি, এ কী দুর্গন্ধ!’’ দোর্দণ্ডপ্রতাপ সেই পুলিশ অফিসার কী করে গিন্নিকে বোঝান, অভিযান সামলাতে গিয়ে ডিম ‘খেয়েছেন’ তিনি। এ তারই সুবাস!

যে সে ডিম নয়, এক্কেবারে ‘বোমপচা’। বৃহস্পতিবার লালবাজার অভিযানে পুলিশকে কাবু করার প্রধান হাতিয়ার হয়ে উঠেছিল এই গন্ধাস্ত্র। এতটাই তার ক্ষমতা, যে খোদ পুলিশই বলছে, এমন ‘গন্ধগোকুল’ হওয়ার চেয়ে বোমায় ঘায়েল হওয়াও ঢের ভাল! সেই ডিমেই কাবু হয়েছেন লালবাজারের বড়-মেজো-সেজো একাধিক পুলিশকর্তা। ডিউটির এমন দায়, ডিমে মাখামাখি উর্দি পরেই থাকতে হয়েছে দীর্ঘক্ষণ। এক জন তো বলেই বসেছিলেন, পুলিশ কমিশনার বৈঠক ডাকলে সারা দিনের ওই উর্দিতেই তাঁর কাছে গিয়ে বসতে হতো। ভাগ্যিস ডাকেননি!

ডিম ব্যবসায়ীরাও একগাল হেসে বলছেন, ‘‘বোমপচার কাছে ইট-পাটকেল তো শিশু! যেখানে পড়বে, একেবারে জ্বালিয়ে দেবে।’’ তাঁরাই জানালেন, একেবারে পচে যাওয়া ডিমকেই বোমপচা বলে। পচা ডিমের রাজত্বে যাকে ‘শাহেনশা’ বলা চলে। গরম বা ভুল পদ্ধতিতে সংরক্ষণের কারণে ডিম নষ্ট হয়ে যায়। সাধারণত পোলট্রির ডিম নষ্ট কম হয়। দেশি হাঁস, মুরগি বা লাল রঙের হ্যাচারি ডিমের তাড়াতাড়ি পচে যাওয়ার প্রবণতা অনেকটাই বেশি।

তবে সব বোমপচা পচা ডিম হলেও সব পচা ডিম বোমপচা নয়। তাদেরও প্রকারভেদ আছে। নামের বাহারও। এইটাই বারবার মনে করিয়ে দিচ্ছেন ব্যবসায়ীরা।

পঁয়ত্রিশ বছর ধরে ডিমের ব্যবসায়ী বাবু দে। জানালেন, ডিমের কুসুমে মাঝেসাঝে সাদা গোল দাগ দেখা যায়। ক্রমশ যা লাল হয়ে ওঠে। সেই ডিম তখন আর সেদ্ধ করা যায় না। ভাল করে ভেজে ওমলেট হতে পারে বড়জোর। এই ধরনের পচা ডিমের নাম ‘খরচা’। তার পরে আছে ‘টিকাদাগি’। ডিম ভিজে অবস্থায় বাক্সের ভিতরে রাখলে বাক্সের গায়ে লেগে থাকা অংশে কালচে দাগ ধরে যায়। খাওয়ার সময়ে বিচ্ছিরি ধোঁয়া গন্ধ হয়। বাবু বলেন, ‘‘রাস্তার পাশের হোটেলগুলোতে অনেক সময়ে টিকাদাগি ডিম ব্যবহার হয়। ডবল ডিমের ওমলেটে একটা ভাল ডিমের সঙ্গে একটা টিকাদাগি বা খরচা মিশিয়ে দিলে কেউ ধরতেই পারবেন না।’’ তিনি আরও জানান, টিকাদাগির পরের ধাপ ‘ঘোলা’। এই ডিমে কুসুম একেবারে নষ্ট হয়ে যায়। আকারও আগের মতো থাকে না। এই ডিম খাওয়া যায় না। কখনও কখনও মাছের খাবার বা মাছ ধরার চার হিসেবে ঘোলার সামান্য কদর আছে। সবশেষে বোমপচা। একেবারেই নষ্ট ও প্রায় কালো হয়ে যাওয়া পচা ডিম। বাবু সাফ বলেন, ‘‘ছুড়ে মারা ছাড়া এর কোনও ভূমিকা নেই।’’

প্রায় ৬০ বছরের পৈতৃক ব্যবসা অপূর্ব দেবের। শিয়ালদহের মণীন্দ্রচন্দ্র রো-তে তাঁর ডিমের আড়ত। বললেন, ‘‘বোমপচাকে আমরাই ভয় পাই। ডিম বাছার সময়ে দোকানের মধ্যে ফেটে গেলে কেলেঙ্কারি। ও রকম ডিম পেলে সঙ্গে সঙ্গে ফেলে দিই।’’ অন্য এক ব্যবসায়ী জানালেন, বোমপচা আবার যেখানে-সেখানে ফেলা যায় না। যেখানে ফাটবে, চার পাশ গন্ধে পাগল করে দেবে। তাই পুরসভার গাড়িতেই ফেলা হয়। আর যতক্ষণ না সেই গাড়ি আসছে, ততক্ষণ দোকানের বাইরে রেখে দিয়ে ভয়ে ভয়ে থাকতে হয়।

কারা কিনতে চান এই পচা ডিম?

ব্যবসায়ীরা একবাক্যে জানাচ্ছেন, আলাদা করে পচা ডিম বিক্রি হয় না। ফেলে দেওয়া হয়। তবে দোল বা মহরমের সময়ে কেউ কেউ বোমপচা চাইতে আসে। তাঁরা বলেন, ‘‘কেউ এসে বোমপচা নিতে চাইলে আমরা সানন্দে দিয়ে দিই। পয়সা নেওয়ার প্রশ্নই নেই, গেলেই বাঁচি। সোজা বলে দিই, ‘ওই যে বাইরে পড়ে আছে, নিয়ে যান। এখানে যেন না ফাটে। খুব সাবধান।’ পরে শুনেছি, ওগুলো নাকি পুলিশকেও ছোড়া হয়।’’

অস্ত্র হিসেবে কতটা কার্যকর এই বোমপচা? এক ডিম ব্যবসায়ীর উত্তর, ‘‘মারাত্মক। ইটের চেয়ে অনেক হাল্কা। বহন করা সহজ। তবে এক বার যদি জামায় পড়ে, সে জামা ফেলে দেওয়া ছাড়া গতি নেই। আর যার গায়ে পড়ছে, সঙ্গে সঙ্গে ডেটল দিয়ে স্নান করা ছাড়া তারও মুক্তি নেই। গায়ে লাগলে গন্ধ থাকে বেশ ক’দিন। একেবারে ব্রহ্মাস্ত্র।’’

ইট-পাটকেল তো অনেক হল। গন্ধাস্ত্রে কি তবে কাবু হবে পুলিশই? নাকি পাল্টা লড়বে বুক চিতিয়ে? সেটাই এখন দেখার।

souvik chakraborty rotten eggs left front protestor Police
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy